নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চুড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হলেও জনমনে সন্দেহ সংশয় এখনো দূর হয়নি। এ অঞ্চলের সাধারন মানুষ এখনো গোটা পরিবেশকে একটি ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপযোগী নয়’ মনে করছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীর রণ পাহারাসহ নানা উদ্যোগকে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশের চেয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে বলেও মনে করছেন দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ মানুষ। উপরন্তু নির্বাচনের আগে পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে বদলী না করায়ও নানামুখী প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৯১-এর পরে যতগুলো গ্রহণযোগ্য ভোট হয়েছে, সবগুলোর আগেই এ ধরনের বদলী ছিল নিয়মিত বিষয়।
গত ৮ নভেম্বর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে তা আরো এক দফা পেছানো, ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগও দেয়া হয়েছে। কিন্তু একটি নিরপেক্ষ ও অবাধ ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ-প্রশাসনে যে ধরনের অবস্থার পরিবেশ সৃষ্টি প্রয়োজন, তা এখনো অনুপস্থিত। পর্যবেক্ষকের মতে, এতদিন যেসব আমলা ও পুলিশকর্মী সরকারি দলের হয়ে বিবেকহীনভাবে কাজ করেছেন, তাদের দিয়ে কতটুকু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত ছয় মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারসহ পুলিশের মাঠ পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলী সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে যেভাবে দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোতে সকাল বিকেল রণ পাহারা শুরু হয়েছে, তাতে নির্বাচনী আস্থার চেয়ে অনেকেই ভীত হচ্ছেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে এখনো নির্বাচন কমিশনের বরিশাল আঞ্চলিক দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশেষ করে গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি নির্বাচনের নামে যে ভোট ডাকাতি হয়েছে, তাতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি সাধারন মানুষের ন্যুনতম আস্থাটুকুও অবশিষ্ট নেই। ঐ নির্বাচনে আশিভাগ ভোটারই ভোট কেন্দ্রে না গেলেও প্রায় ৭৫% ভোট ব্যালট বাক্সে জমা পড়েছে। নগরীর অনেক ভোট কেন্দ্রের প্রধান ফটকে কোনো কোনো পুলিশ কর্মী একটি বিশেষ দলের প্রতীক ছাড়া অন্যসব প্রতীকের কর্মীদের সরে যাবার জন্য বার বার হুশিয়ারী দিয়েছেন।
ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জনমনে কিছুটা ভিন্ন সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ প্রেক্ষিতেই ভোটের আগে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ-প্রশাসনে বদলীর দাবী উঠছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের দাবী খুব জোরালো নয়। কারণ তাদের মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ প্রার্থী হবার দৌঁড়ে ঢাকায় আছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি নিয়ে এখন বেশী ব্যস্ত। তবে সাধারণ মানুষ একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনেরই প্রত্যাশায় রয়েছেন। আর ২০১৪-এর একদল আর গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নির্বাচনী কলঙ্ক থেকে দেশমুক্ত হোক, এ আশা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ঐ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের মাত্র ৫টিতে মহাজোটের নিজেদের দলগুলোর মধ্যে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যাতে প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল আওয়ামী লীগ ও তার শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ঘরের জাতীয় পার্টি। কিন্তু আসন্ন নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহনে অবাধ ও নিরপেক্ষ হোক এ আশা সকলের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন