বরিশালে পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন শুরু করেছে এম এ রশিদ আরিফ নামক এক যুবক। বরিশাল মহানগরীর বিসিক শিল্প নগরীতে একটি কারখানায় তিনি এখন তার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ইউ টিউব-এ পলিথিন থেকে জ¦ালানী উৎপাদনের কার্যক্রম দেখে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদিত এ তেলে থেকে এখন মোটরযানও চালান হচ্ছে। বিষয়টি দেখতে প্রতিদিনই উৎসুক জনতা ভিড় করছে রশিদ আরিফ-এর কারখানায়। টানা তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা উৎপাদন পদ্ধতিতে ১৫ কেজি পলিথিনে ১৭ কেজি’রও বেশি জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আরও কয়েকদিন পুরো কার্যক্রমটি পর্যবেক্ষণ করে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনে যাবার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা রশিদ আরিফ।
বরিশাল মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি বা কীর্তনখোলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নদীর পানি কমতে থাকলেও নগরী প্লাবন মূক্ত হতে অনেক সময় লাগে। মূলত নগরীর ড্রেনগুলো যথাযথভাবে পরিস্কার না করা সহ পাশর্^বর্তি কির্তনখোলা’র তলদেশ ভড়াট হয়ে নদীর পানির উচব্চতা বৃদ্ধির কারণেই এ সংকট তৈরী হচ্ছে। আর নগরীর ভঙ্গুর পয়ঃ নিস্কাশন ব্যাবস্থার অন্যতম কারণ ড্রেন সহ নিচু এলাকায় পলিথিন জমে থাকা। এই সমস্যার সমাধান চিন্তা করতে গিয়েই পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারের উপায় খোঁজেন আরিফ। আর সে বিকল্প চিন্তা থেকেই আরিফ ইউ টিউব দেখে পদ্ধতিটি আয়ত্ব করেন।
বিসিকের হাসিনা কুটির শিল্প কাখানার বর্ধিতাংশে পরীক্ষামূলকভাবে নিজের তৈরী প্লান্টে রশিদ আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারের চিন্তা আগে থেকেই তার ছিল। ইউটিউবে পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদনের প্লান্ট দেখে তিনি উৎসাহ পান। তা দেখে প্লান্ট প্রস্তুতের পর বেশ কয়েক দিন চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন। এরপর পুনরায় নিজের মতো করে প্লান্টটি তৈরি করেন। আর গত তিন দিন ধরে প্লান্টে সঠিকভাবে জ্বালানি তেল উৎপন্ন হচ্ছে।
আরিফ জানান, পলিথিন পুড়িয়ে এই প্লান্টের মাধ্যমে একই সঙ্গে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও রান্নার উপযোগী গ্যাস উৎপাদনও সম্ভব। ১৫ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ১৭ কেজি জ্বালানি তেল পাবারও কথা জানান আরিফ। প্রাথমিকভাবে বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে তিনি কাজ করছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবার চিন্তার কথাও জানিয়েছে আরিফ। এজন্য বিসিক অনুমতি দিলে এই শিল্পাঞ্চলের মধ্যেই কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। আর অনুমতি না পেলে বাইরে কারখানাটি স্থাপন করা হবে।
আরিফ বলেন, আমার উদ্দেশ্য প্রতিদিন এক থেকে দুই মেট্রিক টন জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারে এমন প্লান্ট নির্মাণ করা। এতে করে নগরী থেকে পলিথিন কমে আসবে আর বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের সংকটের এ সময় স্থানীয়ভাবে জ¦ালানীর চাহিদা কিছুটা পূরণ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
প্লান্টে উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে নিজের গাড়ি চালিয়ে মাসুম রেজা বলেন, আমার গাড়িতে আধা লিটারের মতো ফিলিং স্টেশন থেকে নেওয়া পেট্রোল ছিল। তা সকলের সামনেই বের করে পলিথিন পোড়ানো প্লান্টে উৎপন্ন পেট্রোল দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। গাড়ি স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
তবে বরিশাল বিসিক-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ এমন কোনো প্লান্টের বিষয় তিনি অবহিত নন বলে জানিয়ে বলেন, কেউ যদি সফল হন এবং পরিবেশগত কোনো সমস্যা না থাকে, তবে অবশ্যই উদ্যোক্তার পাশে বিসিক দাড়াবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন