অব্যাহত শ্রমিক ধর্মঘটের মুখে নারসিংদীর পাওয়ারলুম শিল্পে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। গজ প্রতি ২০ পয়সা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটের মুখে শহরের চৌয়ালা, সাটিরপাড়া, হাজিপুর, বিলাশদি ও সাহেপ্রতাপ শিল্প এলাকায় পাঁচশ’ পাওয়ার লুম ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে।
উৎপাদিত কাপড়ের বাজারে মন্দা ভাবের কারণে মজুরির ভিত্তিতে পাওয়ারলুম মালিকদের অপারগতা এবং দাবি আদায়ে শ্রমিকদের অনড় সিদ্ধান্তের কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নরসিংদী জেলা প্রশাসন ১০ পয়সা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দিলেও শ্রমিকদের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। যার ফলে পাওয়ার লুমের শ্রমিক-মালিক বিরোধ নিরসনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দাবি আদায়ের নামে কথিত শ্রমিকদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকিরমুখে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পাওয়ারলূম মালিকরা।
জানা গেছে, পাওয়ারলুম শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির মুখে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গজ পতি ২০পয়সা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দিয়েছিল মালিকপক্ষকে। জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত তখন মালিকপক্ষ মেনে নিয়েছিল। কথা ছিল নভেম্বর মাসের প্রথম তারিখ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে মালিকপক্ষ। কিন্তু নভেম্বর মাস আসার পর ও মালিকপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় শ্রমিকরা, মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কে জানিয়ে দেয় যে কাপড়ের বাজারে এখন খুবই মন্দাভাব বিরাজ করছে, এই মুহূর্তে তারা মজুরি বৃদ্ধি করতে পারবেন না।
মালিকপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা মিছিল মিটিং করে গত ৬ নভেম্বর থেকে পাওয়ারলূম ফ্যাক্টরীতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এতে প্রথমে চোয়ালা শিল্প এলাকার সকল পাওয়ার লুম ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায় পরে আস্তে আস্তে সাটিরপাড়া হাজিপুর বিলাশদি ও সাহেপ্রতাপ শিল্প এলাকার শ্রমিকরা ধর্মঘটে যোগ দিলে এসব শিল্প এলাকার প্রায় সকল ফ্যাক্টরির চাকাবন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় সপ্তাহখানেক চলার পর নরসিংদী জেলা প্রশাসক মালিক ও শ্রমিকদের কে ডেকে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনানি শেষে বাস্তব অবস্থার নিরিখে গজ পতি ১০ পয়সা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেয়। সেদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও শ্রমিকদের অপর একটি গ্রুপ তাদের স্থানীয় এক নেতার নাম করে এ সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হয়নি।
শ্রমিকদের সেই অংশটি জানায়, তাদের স্থানীয় নেতার মাধ্যমে মালিকদের নিকট থেকে গজ পতি ২০ পয়সা মজুরির আদায় করে দেয়া হবে। এই অবস্থায় শ্রমিকদের দাবি আদায় এবং ফ্যাক্টরিগুলো চালুর ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ প্রায় পক্ষকাল ধরে এই অচলাবস্থা চলতে থাকায় নরসিংদীর পাওয়ারলুম শিল্পের মালিক শ্রমিক উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মালিক ও শ্রমিক পক্ষের নেতৃবৃন্দের সাথে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে চৌয়ালা শিল্প এলাকার রতন টেক্সটাইল মিলের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম রতনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত এক মাসে পাওয়ার লুমের গ্রে কাপড়ের দাম গজ পতি দুই টাকা করে কমে গেছে। এতে মালিক পক্ষকে প্রতিদিনই আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া মালিক পক্ষের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন