তাজরিন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পুরোপুরি সুস্থ্য হতে পারেননি আহত শ্রমিকরা। তারপরও দুঃসহ স্মৃতি ও পুনর্বাসনের আশ্বাস ভুলে স্বাবলম্বী হতে নিজেরাই গড়ে তুলেছেন কারখানা। শারিরীক ভাবে অক্ষমতার কারণে অনেক কারখানায় ঘুরে চাকরি না পেয়ে পরিশেষে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টায় যেন দৃঢ় প্রত্যয়ী তাজরিনের আহত শ্রমিক শবিতা, জরিনা ও রেহেনাসহ অনেকেই। তবে পুঁজি ও মেশিন সঙ্কটের কারণে কারখানা আরম্ভ করার পূর্বেই যেন থমকে যেতে হয়েছে তাদের। এদিকে শনিবার সকাল ৮টা থেকে অগ্নিকান্ডের ৬ বছর প‚র্তি উপলক্ষে নিশ্চিন্তপুর এলাকার তাজরিন ফ্যাশনের সামনে শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকে। পরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ফুল দিয়ে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানান তারা।
এসময় শ্রমিক নেতারা বলেন, তাজরিন ট্র্যাজেডির ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপ‚রণ নিশ্চিত হয়নি। এছাড়া কারখানা মালিক দেলোয়ারের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
এসময় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গামের্ন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তাজরিনের আহত শ্রমিক শবিতা রানী, জরিনা, নাছিমা, বিলকিস, রওশনারা, আঞ্জুয়ারা, রেহেনা, জাহিদা, আনোয়ারা ও আকাশ নামের দশজন শ্রমিক ঋণ করে তিনটি মেশিন কিনে নরসিংহপুর বুড়িপাড়া মসজিদ সংলগ্ন সরকারবাড়ী সুপার মার্কেটে দুই মাস পূর্বে পাঁচ হাজার টাকার ছোট্ট একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে মিনি কারখানা শুরু চালু করেন।
তাজরিনের শ্রমিক জরিনা বলেন, কাজ না পেয়ে তার অনেক টাকা বাড়ি ভাড়া ও দোকানে বাকি পড়ে যায়। উপায়ন্তু না পেয়ে তিনি কয়েক মাস পূর্বে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। কিছুদিন পর অপর আহত শ্রমিক শবিতা তাকে নিজেরাই কারখানা চালু করবেন বলে নিশ্চিন্তপুরে ডেকে নেন। এরপর স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুইটি পুরাতন প্লেন মেশিন, একটি ওভারলক মেশিন ও বেশ কিছু ফেব্রিকস কেনেন। সাথে নিজেদের কাছে থাকা আরো দুইটি সেলাই মেশিনও আনা হয় কারখানায়। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজের অর্ডারও পান তারা। তবে একটি ওভারলক ও একটি ফ্যাড লক মেশিনের অভাবে কিছু বড় অর্ডার ফেরত গেছে। আর পুঁজির অভাবে ফেব্রিকসও কিনতে পারছেন না। তাই সহজ কিস্তিতে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা পেলে তাদের কারখানাটি হয়ত এক সময় অনেক বড় হবে। আর এখানেই তাজরিনের অন্যান্য আহত শ্রমিকরা কাজ করে নিজেরাই নিজেদের পুনর্বাসিত করতে পারবেন।
রেহেনা নামের অপর এক আহত শ্রমিক জানান, তাজরিন ফ্যাশনে স্যুইং অপারটের পদে কাজ করতেন তিনি। অগ্নিকান্ডে তার বড় বোন, ভগ্নিপতি, তাদের ছেলে ও ছেলে বউ সবাইকে হারিয়েছেন। তিন তলা থেকে লাফিয়ে পরে প্রাণে বাঁচলেও গুরুতর আঘাত পেয়েছেন মেরুদন্ডে। ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও এর অধিকাংশই খরচ হয়েছে চিকিৎসার পেছনে। এঘটনার পর গত ৬ বছর যাবৎ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রিকশাচালক স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে দিয়ে দিন পার হচ্ছে তাকে।
তবে দুই মাস পূর্বে তারা যে কারখান চালু করেছেন সেখানেই এখন কাজ করছেন তিনি।
গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ডের ছয় বছর অতিবাহিত হলেও ভুক্তভোগী শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। দেড় শতাধিক আহত শ্রমিকের মধ্যে ৪০-৫০ জন বিভিন্ন কারখানায় কাজ নিলেও বাকী শতাধিক কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর দিন যাপন করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন