শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

আবারো ‘সুপারম্যান’ তামিম

ক্যাচ মিসের মহড়ায় অবিশ্বাস্য মিরাজ-লিটন

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

২০১০ সালে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তৃতীয় ওয়ানডের ঘটনা। ঘরের মাঠে ১৯০ রানে ৭ উইকেট হারানোয় রান বাড়াতে শেষদিকে নামা উপল থারাঙ্গা উড়িয়ে মেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। লং লেগের উপর দিয়ে বল চলে যাচ্ছিল সীমানা ছাড়িয়ে। সেই বলকে বাজ পাখির মত ছোঁ মেরে এক হাতে তালুবন্দী করেন তামিম ইকবাল। বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল তার সেই ক্যাচ। সেই থেকে শুরু। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা আউটফিল্ড ক্যাচগুলোর বেশ কটিই ড্যাশিং এই ওপেনারের। সেই তালিকায় যোগ হলো আরেকটি। গতকাল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তার চোখধাঁধানো এক ক্যাচে ফিরেনে ড্যারেন ব্রাভো। ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা মাশরাফি বিন মুর্তজা পেলেন প্রথম উইকেটের দেখা।
চোটের কারণে গত এশিয়া কাপের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেননি তামিম ইকবাল। জাতীয় দলে ফিরেছেন এই ওয়ানডে দিয়ে। সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে ঝোড়ো সেঞ্চুরি দিয়ে দারুণ কিছু দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তামিম। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও ‘দারুণ কিছু’ দেখানোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন এই ওপেনার। এবার ব্যাটে নয় ফিল্ডিংয়ে।
ম্যাচের তখন ২১তম ওভারের খেলা চলছিল। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৬ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে ফেলেছিলেন ড্যারেন ব্রাভো-শাই হোপ জুটি। কিন্তু সেই ওভারে মাশরাফির করা অফ স্টাম্পের বাইরের কাটার লং অফের দিকে উড়িয়ে মারেন ড্যারেন ব্রাভো। টাইমিংয়ে গড়বড় করায় বল চলে যায় ডিপ এক্সট্রা কভার অঞ্চলে। তামিম এর মধ্যে লং অফ অঞ্চল থেকে দৌড়ে গিয়ে দুর্দান্ত ডাইভে বলটা তালুবন্দী করেন। বল শূন্যে থাকতেই দুই হাতে তামিমের ক্যাচ নেওয়ার ছবিটা শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকদের মনে থাকবে অনেক দিন।
এই হোম অব ক্রিকেটেই আরো অনেকবার গ্যালারি মাতিয়েছেন নয়নজুড়ানো ক্যাচে। তার সবচেয়ে জ্বলজ্বলে স্মৃতি ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপে। সেদিনও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র আগের ওভারেই ক্যারিবীয়ান ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলকে ফিরিয়েছেন দারুণ এই ক্যাচে। কে জানতো তার চেয়েও বড় চমক অপেক্ষা করছিল দর্শকদের জন্য! আল-আমিনকে মারতে চেয়েছিলেন ড্যারেন ব্রাভো। ব্যাটে-বলে হয়নি ঠিকমত। কানায় লেগে বল চলে যাচ্ছিল পয়েন্ট অঞ্চলের উপর দিয়ে। হঠাৎই উল্টো পথে ডাইভে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া সেই বল তালুবন্দী করেন তামিম। তাৎক্ষণিক বাংলাদেশের ‘সুপারম্যান’ ট্যাগটি পড়ে যায় তার নামের পাশে।
তবে তামিমের এই ক্যাচটি বাদ দিলে গতকাল দিনটি আক্ষেপে মুড়িয়েছেন বাংলাদেশি ফিল্ডাররা। ক্যাচ মিসের মহড়ায় এই ব্রাভোই পেয়েছেন দুবার জীবন। ম্যাচের ১৬মত ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বলে কাট করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বল যায় সোজা পয়েন্টে দাঁড়ানো আরিফুল হকের কাছে। কিন্তু এই বদলি ফিল্ডারের হাতে লেগে বল পড়ে মাটিতে। সেবার ১৩ রানে রক্ষা পান এই মারমুখী ব্যাটসম্যান।
নিজের ঝুলিতে আর মাত্র মাত্র ৫ রান যোগ করার পর আবারো জীবন পান নতুন দলে যোগ দেয়া ব্রাভো। এবার দুর্ভাগা বোলারের নাম এবার রুবেল হোসেন। খুব কঠিন ক্যাচ ছিল না এটিও। স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। উইকেটের পেছনে বাঁদিকে ঝাঁপিয়েও ক্যাচ নিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। ধুঁকতে ধুঁকতে দ্বিতীয় জীবন পাওয়ার পর ব্রাভো অবশ্য খুব বেশিদূর এগুতে পারেন নি। আর মাত্র ১ রান যোগ করেই ফেরেন তামিমের সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচে।
বাংলাদেশি ফিল্ডারদের হাঁসফাঁসে এরপর বেঁচেছেন মারলন স্যামুয়েলস, শিমরন হেটমায়ার আর রভম্যান পাওয়েলও। যে শটে আউট হতে পারতেন স্যামুয়েলস, ফিল্ডারের বদৌলতে সেটিতেই পান চার রান। এবার রুবেলের অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ ডেলিভারি উড়িয়ে মারেন স্যামুয়েলস। মিড অফে লাফিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বল তার হাতের ছোঁয়াও পায়, কিন্তু করতে পারেননি তালুবন্দী। বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। সর্বশেষ ১৫তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরেকটি বাউন্ডারি পায় ২৮তম ওভারের শেষ বলে এসে।
হেটমায়ারেরটা ঠিক জীবন নয়, তবে সুযোগ এসেছিল যেটিও নিতে পারেনি বাংলাদেশ। এই রুবেলেরই স্টাম্পে থাকা বল উড়িয়ে মেরেছিলেন। আগ্রাসী হেটমায়ার তখন ব্যাট করছিলেন মাত্র ৩ রানে। জোর পাননি শটে, বল ওঠে ওপরে। মিড অন থেকে পেছন থেকে ছুটছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বলের দিকে চোখও রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হারিয়ে ফেলেন বল। হাত বাড়ালেও ঠিকমতো যেতে পারেননি বলের নিচে।
পাওয়েলকে আউট করার সবচেয়ে সহজ সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে বাংরাদেশের ফিল্ডাররা। এবার ত্রানকর্তার ভূমিকায় রুবেল, বোলার সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বলে ব্লগ করেন পাওয়েল, বল উঠে যায় আকাশে। ফিল্ডারের জন্য সময় ছিল অফুরন্ত। মিড অনে বলের দিকে অনেকক্ষণ চোখ রেখে বল হাতেও নেন রুবেল, কিন্তু তিনি পড়ে যাওয়ার সময় ফসকে যায় বলও। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক তখন ব্যাট করছিলেন মাত্র ৬ রানে।
তামিমেরটা তো বটেই ক্যাচ মিসের মহড়ার দিনে মিরপুরে দর্শকদের তৃপ্তি দিতে পারে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং লিটন দাসের দু’টি করে দারুণ ক্যাচও। যেমন বাউন্ডারি রোপের উপর এক পায়ে দাঁড়িয়ে এক হাতে লিটনের অবিশ্বাস্য ক্যাচে স্যামুলেসকে ফেরানো কিংবা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের একই জায়গায় উল্টো ঘুরে রোস্টন চেস এবং কেমো পলকে ফেরানেও যে চোখ জুড়িয়েছে আগত ২৪ হাজার টাইগার সমর্থকদের!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MD Nazrul Islam ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:২৩ পিএম says : 0
লিটন দাসের দু’টি করে দারুণ ক্যাচও।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন