তামিম ইকবাল নাকি এনামুল হক বিজয়- কে আগে শতক পাবেন, একসময় সমীকরণটা ছিল এমন। রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে এমন দাপুটেই ছিল প্রাইম ব্যাংকের পারফরম্যান্স। তামিম ও এনামুলের শতকে রূপগঞ্জের ২২৯ রান ২৬.৪ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই পেরিয়ে গেছে প্রাইম ব্যাংক। ৮৪ বলে ১১২ রানে অপরাজিত ছিলেন এনামুল, তামিম ১০৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন ৮১ বলে। এই সংস্করণে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি নেই আর কারো। ২০তম সেঞ্চুরি।
রান তাড়ায় আসরে তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ১১২ রান করেন এনামুল। ৮২ বলে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের পঞ্চদশ শতক ছোঁয়ার পরের দুই বলে ছক্কায় ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এনামুল। ৮৪ বলে ৬ ছক্কা ও ১১ চারের ইনিংসের সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি। এই ইনিংসের পথে অনন্য এক কীর্তি গড়েন এনামুল। লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এক আসরে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন এক মৌসুমে হাজার রানের মাইলফলক। চলতি আসরে ৩ সেঞ্চুরি ও ৮ ফিফটিতে তার রান এখন ১০৪২।
এক আসরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটি এতদিন ছিল সাইফ হাসানের। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচে সেটি নিজের করে নেন এনামুল। ২০১৯ সালের লিগে প্রাইম দোলেশ্বর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ৮১৪ রান করেছিলেন সাইফ। ওই বছরের লিগে এই রূপগঞ্জের হয়েই ৮০৭ রান করেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। সাইফ ও নাঈমের ওই রান ছিল ১৬ ইনিংসে। এনামুল ছাড়িয়ে যান ১২ ইনিংসেই। এক হাজার রান করলেন তিনি পরের ইনিংসেই। রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে তার, এখনও লিগে বাকি একটি ম্যাচ।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার অবশ্য ১০ বছরও হয়নি এখনও। একসময় দেশের ম‚ল ক্রিকেটের আকর্ষণই ছিল ঐতিহ্যবাহী এই টুর্নামেন্ট। বরাবরই এটি ছিল দেশের ক্রিকেটের ম‚ল প্রতিযোগিতা। তবে বিসিবির উদ্যোগের অভাবে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পেতে দেরি হয়ে যায় অনেক। ২০১৩ সালের আসর থেকে লিস্ট ‘এ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এই লিগ।
লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার আগে অনেক রেকর্ডই সংরক্ষিত নেই এই লিগের। বিশেষ করে সত্তর, আশি, নব্বইয়ের দশকের বেশির ভাগ পরিসংখ্যানই নেই। তাই সব মিলিয়ে রেকর্ডটি কার, তা বলা মুশকিল। রেকর্ডে থাকা পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সালের লিগে মোহামেডানের কেনিয়ান ক্রিকেটার স্টিভ টিকোলো ১৬ ইনিংসে করেছিলেন ১ হাজার ২২৭ রান। সেই যুগেই তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১১২.২৫, গড় ৯৪.৩৮। এছাড়া ওই লিগেই সিটি ক্লাবের পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ওয়াসিম নাঈম করেছিলেন ৯৯০ রান, বাংলাদেশ বিমানের পাকিস্তান ব্যাটসম্যান মাজিদ সাঈদ করেছিলেন ৯১২। ২০১১-১২ লিগে ১৬ ইনিংসে ৯৫১ রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এছাড়াও আগে নানা সময়ে অনেকের দারুণ সব মৌসুমের কথা জানা যায়। তবে সংরক্ষিত আছে সেসবের সামান্যই।
একই ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ব্যাটিং কীর্তির অনেকগুলো ‘প্রথম’ যার হাত ধরে রচিত হয়েছে, সেই তামিম ২০ সেঞ্চুরিতেও বাংলাদেশের প্রথম। গত ম্যাচে ৯০ রানে আউট হওয়া তামিম এবার খেলেন ১০৯ রানের ইনিংস। তার ৮১ বলের ইনিংসটি সাজানো ৭ ছক্কা ও ৯ চারে। এই ইনিংসের পথে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১০ হাজার রানও পেরিয়ে যান দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই মাইলফলকেও তিনি বাংলাদেশের প্রথম। তামিমের ২০ সেঞ্চুরির ১৪টিই বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনী লিমিটেডের হয়ে করেছেন দুটি। বাকি চারটি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিভাগ ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সেঞ্চুরির রেকর্ডে তামিমের কাছাকাছিও নেই বাংলাদেশের কেউ। ১৫ সেঞ্চুরি নিয়ে দুইয়ে প্রাইম ব্যাংকে তামিমের উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী এনামুল হক। এই দুজনের পর সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি মুশফিকুর রহিমের। ১৩ সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি আছেন তালিকার তিনে, ১২ সেঞ্চুরিতে যৌথভাবে চারে নাঈম ইসলাম ও লিটন কুমার দাস। পঞ্চম সর্বোচ্চ ১১ সেঞ্চুরি যৌথভাবে মোহাম্মদ আশরাফুল ও ইমরুল কায়েসের। রানের তালিকায় তামিমের থেকে খুব দ‚রে নেই মুশফিকুর রহিম। এ দিনই প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে ১৬ রান করে আউট হয়েছেন মুশফিক। তার রান ৯ হাজার ৭৭৬।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন