চুক্তি বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আশানুরূপ অগ্রগতিতে পৌঁছাতে না পারায় মেয়াদ বাড়লো জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের। ৩ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ সম্মেলন ১৪ ডিসেম্বর শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরও বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। জলবায়ু ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত আলোচনা আজ রোবববার পর্যন্ত গড়াতে পারে।
এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হছে ২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা তৈরি করা, যাকে ‘রুলবুক’ বলছেন আলোচকরা। কিন্তু শুক্রবার আলোচনার শেষ দিনে এসেও আলোচকরা নিশ্চিত হতে পারেননি যে, একটি রুলবুক পাওয়া যাবে।
এর আগে বুধবার জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে সতর্ক করে দেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। ১৩০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার পরিমাণ কমাতে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু এ চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা হবে আত্মঘাতী।
চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে বিলম্বের আশঙ্কা করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের হাতে তিন দিনেরও কম সময় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের আশঙ্কাই সত্য হলো। নির্ধারিত সময়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলো আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়। আলোচনায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হছে। ওই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পোল্যান্ডের এ সম্মেলনে ব্যর্থ হলে তা সবুজ অর্থনীতির অপেক্ষায় থাকা মানুষের কাছে একটি বিপর্যয়মূলক বার্তা পাঠাবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল থেকে পালিয়ে আসতে এটিই আমাদের জন্য শেষ সেরা সুযোগ। এই সুযোগ না নেওয়াটা শুধু অনৈতিক হবে না, বরং এটি হবে আত্মঘাতী।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জলবায়ুর বিপর্যয়পূর্ণ পরিবর্তন ঠেকাতে নির্ধারিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় হাঁটছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত খুব একটা কিছু করতে পারছি না। এক্ষেত্রে আমাদের কাজের গতিও খুব একটা দ্রæত নয়।’ পোল্যান্ডের কাতোভিতাসায় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছে বিশ্বের ১৮৩টি দেশ। ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’ বা কপ নামে পরিচিত জাতিসংঘের এই বার্ষিক সম্মেলনের ২৪তম আয়োজন এটি। প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন ১৪ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের হার কমাবার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে দেশগুলোর পরিকল্পনা বিষয়ে সম্মেলনে আলোচনা করছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান কে, কাকে, কীভাবে দেবে তাও সম্মেলনের আলোচনার বিষয়বস্তু। প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়ার কথা। সেটি কার্যকর করতে একটি ‘রুলবুক’ বা নীতিমালা তৈরিই কপ২৪-এর মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে।
প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের তাপমাত্রা শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে যা ছিল, তার চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়তে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভব হলে তা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেছেন, ‘এটা নিশ্চিত যে জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম টেনে ধরার সুযোগ থাকা প্রজন্মগুলোর মধ্যে আমরাই সর্বশেষ। যদি এখনই আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারি তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত প্রজন্মটা হবো আমরাই।’
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে,২০২১-২০২৫ সাল মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সংস্থাটি ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল দেবে। এই অর্থ জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কল্যাণে সমানভাবে ব্যয় করা হবে। সূত্র : বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন