‘কাঠ বাদামের সেই বড় গাছটি কি এখনো আছে? সেখানে ভোরবেলাতে ছোট ছেলেরা ইটের ওপর কাঠবাদাম রেখে ভেঙে ভেঙে খেত। শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের মাজার ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয়। এর এক পাশেই অবস্থিত আমার প্রাণের সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। সেই ১৯৮৬ সালে কটা চেয়ার টেবিল, একটি কি দুটো স্টিল আলমারি নিয়েই যাত্রা শুরু। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ক্লাবে আড্ডা, তথ্য সংগ্রহ, লেখা এবং সন্ধ্যায় অফিসে গিয়ে টরেটক্কার মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো। এই ছিল নিত্যদিনের কাজ। আর সেই প্রেসক্লাব তিন দশক পূরণ করেছে...’ এভাবেই সাবলীল ভাষায় স্মৃতিকাতর স্বরে বলে যাচ্ছিলেন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি আমানুল্লাহ মাসুদ হাসান।
পদ্মা নদীর তীরবর্তী রাজশাহীর অদূরে মতিহারের সবুজ চত্বরে ‘আমরা নির্ভীক সত্য লিখবই’Ñ এই স্লোগানকে লালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ, মেধাবী, সাহসী এবং কর্মঠ শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টায় ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সব বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে তিন দশক পূর্ণ করল ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি।
প্রেসক্লাব একজন শিক্ষার্থীকে শুধু সাংবাদিকতাই শেখায় না, তৈরি করে পরস্পরের প্রতি আত্মার বন্ধন। তাই তো সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিদুল ইসলামের নীরব কথায় ভেসে আসছিল এমনই কথা, ‘প্রেসক্লাবের একজন সাবেক সদস্য হিসেবে আমি সার্বক্ষণিক একটা আকর্ষণ বা টান অনুভব করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবÑ এটি কোনো শব্দ বা বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটা বরং ইতিহাসের অংশ।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস লিখতে গেলে প্রেসক্লাবকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ১৯৮৬ সাল থেকে বিগত ৩০ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসক্লাব একটি উজ্জ্বল নাম। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা যদি এর যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। আর এই প্রেসক্লাবে এসে আমি নিজেই এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলছিলেন প্রেসক্লাবের নবাগত কলমসৈনিক মুক্তা বিনতে আনোয়ার। গত ২৩ এপ্রিল পালিত হয়েছে প্রেসক্লাবের তিন দশক পূর্তি অনুষ্ঠান। প্রকৃতির সুন্দর আলোয় আলোকিত কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলে ফুলে দিনটি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল এক মনোরম মুখরিত কলরবে। অনেক সুন্দর এবং পরিপাটি করে সাজানো হয়েছিল পুরো অনুষ্ঠানটিকে। বেলুন-ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক ও প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা ড. মশিহুর রহমান। উদ্বোধন শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালি শেষে ‘আঞ্চলিক সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রেসক্লাবের বিভিন্ন কার্যক্রম সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। আগামীতেও প্রতিষ্ঠানটি সেই ধারা অব্যাহত রাখবেÑ এটা আমার প্রত্যাশা’ বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন।
ষ ইমদাদুল হক সোহাগ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন