বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

কৃষ্ণচূড়ায় রঙিন ইবি ক্যাম্পাস

প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চৈত্রকে বিদায় জানিয়ে বাঙালি বরণ করেছে বৈশাখকে। বৈশাখ মানেই ভিন্ন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। আর এ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মিলে গ্রীষ্মের জানান দিতে খরতাপে পুড়ছে সারা দেশ। তীব্র গরমে আমের মুকুলের গন্ধমাখা মৃদু দোলখেলা বাতাসের অপেক্ষায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে বাংলার কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী মানুষের। এই গ্রীষ্মের খরতাপের মাঝে একটু প্রশান্তি দিতে প্রকৃতির পরিবর্তন এনে বাংলার শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে ফুটেছে অগ্নিরাঙা কৃষ্ণচূড়া। রক্তমাখা এই কৃষ্ণচূড়ার মোহিত রূপ কড়া নাড়ছে ভাবুক মনের মানুষগুলোর মনের দরজায়। শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জের সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রকৃতির এই নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যেন কৃষ্ণচূড়ার ক্যাম্পাস। গ্রীষ্মের শুরুতেই পুরো ক্যাম্পাস যেন আবীর রঙে রেঙেছে। সূর্যের তীব্র উত্তাপটুকু কেড়ে নিয়ে নিজেকে আরো অগ্নিরাঙা করতে ব্যস্ত এই কৃষ্ণচূড়া। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পথকে লালগালিচাময় করতে প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে ডালপালা ছড়ানো বিশাল আকৃতির কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছটির শাখায় শাখায় রক্তবর্ণ ফুলেল সমাহার। যেন ধারণ করেছে রক্তিম আভা। সময়ের ব্যবধানে শাখায় ঠাঁই না মেলা কৃষ্ণচূড়াগুলো শিক্ষক-শিক্ষার্র্থী এবং অতিথিদের জন্য পিচঢালা পথকে করছে লালগালিচাময়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা অতিথিদের পাশাপাশি রক্তমাখা এ কৃষ্ণচূড়াটি নজর কাড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কের যাত্রীদেরও। প্রধান ফটকের কৃষ্ণচূড়ার প্রেমে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একর ঘুরে দেখেন সাতক্ষীরা থেকে পরিবার নিয়ে সফরে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সামনের এ কৃষ্ণচূড়া গাছটি আমাকে ভিতরে আসতে বাধ্য করেছে। রবীন্দ্রনাথের কুঠিতে যাওয়ার সময়ই কৃষ্ণচূড়া গাছটি আমার চোখে পড়ে। তাই ওদিকে সময় কম দিয়ে ক্যাম্পাসটি একটু ঘুরে দেখছি। বিভিন্ন ভবনের সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে নতুন রূপ দিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে, পেছনে এবং পশ্চিম পাশের গাছগুলোর আগুন রাঙা ফুল প্রকৃতির সব রঙকে ম্লান করে দিয়েছে। টিএসসিসির সামনের গাছটিতে যেন সূর্যের সব রঙ এসে ধরা দিয়েছে। খরতাপের এই তীব্র দাবদাহের মাঝে শিক্ষার্থীদের আড্ডার জন্য এটি এখন অন্যতম রঙিন জায়গা। সকাল থেকে ক্লাস পরীক্ষার ফাঁকে নিজেদের ক্লান্তি দূর করতে টিএসসিসির সামনের এ কৃষ্ণচূড়ার নিচটি এখন তাদের পছন্দের স্থান। টিএসসিসির পেছনে রয়েছে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া। যা দেশের ক্যাম্পাসভিত্তিক সর্ববৃহৎ এই শিক্ষক-ছাত্র মিলনায়তনের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। কৃষ্ণচূড়ার তলে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাঁকে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত রিভা বলেন, ‘গরমের এ সময়ে ক্যাম্পাসে বসার এটাই শ্রেষ্ঠ জায়গা। এখানে এলে প্রাকৃতিক লীলাভূমির এ ক্যাম্পাসকে খুব আপন মনে হয়। কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডাটাও ভালো জমে। গাছটি যেন উপরে ছাউনি দিয়ে নিচে বিছানা পেতে আমাদের জন্যই অপেক্ষা করে থাকে।’
“গ্রীষ্মের এই ক্যাম্পাসে একমাত্র প্রাপ্তি আমাদের এই কৃষ্ণচূড়া। সারাদিনের খরতাপের অতিষ্ঠ যন্ত্রণা শেষে রাতের লোডশেডিংয়ের সময় এখানে জমে ওঠে গল্প। গাছের নিচের বসার জায়গাটি পরিণত হয় আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ ছাড়া কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির সাথে খুনশুটির তালে তালে প্রিয় মানুষটির সাথে ফোনালাপও জমে ওঠে অনেকের”Ñ এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছিলেন বেগম খালেদা জিয়া হলের মাঝে কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে নিয়মিত আড্ডাবাজ নুসরাত জাহান নিশি। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, জিমনেশিয়াম, ডরমেটরিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক গাছে ফুটেছে রক্ত লাল কৃষ্ণচূড়া।
কৃষ্ণচূড়া নিয়ে কোনো এক আধুনিক কবি গদ্য ছন্দে লিখেছেন, “আমাদের অজ¯্র বিকেল কেটেছে কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে/ রোদের মধ্যে কৃষ্ণচূড়া হাসতো, উড়ে যেত .... কৃষ্ণচূড়া দেখিয়ে তুমি আমায় বলতে, ইস, আমি যদি এমন লাল হতে পারতাম।” Ñলেখকের প্রিয়তমার কৃষ্ণচূড়ায় লাল হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে কিনা জানি না। তবে নিজেদের মনের মানুষটিকে কৃষ্ণচূড়ায় সাজাতে ভুল করছে না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে বন্ধু-বান্ধবী, প্রেমিক-প্রেমিকার বাঁধনহারা আড্ডা চলছেই। কেউ কেউ রক্তাভ এ ফুল ছিঁড়ে প্রিয়তমার খোপায় গুঁজে দিচ্ছে। কেউ আবার ফুল ছিঁড়ে প্রিয় বন্ধুকে দিচ্ছে প্রাকৃতিক উপহার। বসে নেই সেলফিবাজ ও ফটোপ্রেমিকরাও। কৃষ্ণচূড়ার রক্তাক্ত আভায় নিজেদের রাঙাতে সদা ব্যস্ত তারা। ক্যাম্পাসের এই অপরূপ দৃশ্যটিকে নিজের সাথে ফ্রেমে বন্দি করে চলেছে সবাই। এভাবে গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতিকে নিয়ে চলছে ইবি ক্যাম্পাস, হয়তো সবার প্রত্যাশা অমর হয়ে বেঁচে থাকুক কৃষ্ণচূড়া।

ষ শাহাদাত তিমির/ আব্দুল্লাহ আল ফারুক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন