ত্বরিকায়ে মাউজভান্ডারীয়ার পূর্ণতাদানকারী গাউছুল আজম, ইউছুফে সানী মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারী (ক.) এর পৌত্র, শায়খুল ইসলাম বিশ্বশান্তির দূত, আওলাদে রাসুল (স.) হযরত সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমদ আল হাছানী (ক.) হলেন মানবপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। ত্বরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার যুগোপযোগী সংস্কারে, এর বিশ্বব্যাপী প্রচারে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে প্রেম-ভালবাসা, শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনে সৈয়দ মঈন উদ্দিনের (ক.) অবদান আজ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে সমাদৃত ও অনুসৃত হচ্ছে। তাই তাঁকে মাইজভান্ডারীয়া ত্বরিকার সঠিক রূপরেখা দানকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ত্বরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়া প্রকৃতপক্ষে মহানবী (স.) এর নবুয়েরত পর বেলায়েতের ধারায় নবীজী (স.) নির্দেশিত কোরআনের অর্ন্তগত মূল দর্শন। এটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে প্রেম, শাস্তি, সম্প্রীতি, ঐক্য ও প্রগতি বিনির্মাণের ত্বরিকা। ত্বরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার মূল বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহপাক, রাসুল (স.) ও অন্যান্য সৃষ্টির প্রতি প্রেম বা ভালবাসা, যার মাধ্যমে শুরু হয় বীজ বপন। এই ব্যাপারে সৈয়দ মঈনউদ্দিনের (ক.) মন্তব্য স্পষ্ট ‘আল্লাহকে যিনি ভালবাসেন, তিনি রাসুলকে (স.) ও ভালবাসেন, তিনির তাঁর, সৃষ্টিজগৎকেও ভালবাসেন। তাঁর অন্তর সদা কোমল ও মায়ায় ভরপুর থাকে।’ ভালবাসার মাধ্যমে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে গভীর সংযোগ স্থাপনের উপযোগী করে তোলার মধ্যেই মাইজভান্ডারীয়া ত্বরিকার পরিপূর্ণতা নিহিত। বিভিন্ন শারীরিক (নামাজ, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি), আর্থিক (হজ্ব, ওমরা হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি), মানসিক (জিকির, নফস দমন ইত্যাদি) ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য ত্বরিকায় ন্যায় এই ত্বরিকায়ও রয়েছে আত্মশুদ্ধি অর্জন, যা বিশ্বাস, ধৈর্য্য, সহ্য, শোকরানা বিনয়, ত্যাগ ইত্যাদি সদগুণাবলীর উন্মেষ ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। তাই এটি একটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ সংগ্রামময় পদ্ধতি, যার যথাযথ অনুশীলন, অনুকরণ, অনুসরণের জন্য প্রয়োজন একজন যথোপযুক্ত শিক্ষক বা মুর্শিদের। ক্ষণিকের জিন্দেগীর লাভ নয়, বরঞ্চ পরকালীন জীবনের চুড়ান্ত লাভের প্রত্যাশায় যাবতীয় অসুদপায় বর্জন করে মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমাদেরকে আদর্শ অলী বুজুর্গদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন ও অনুসরণ করতে হবে। এভাবেই আত্মিক বিশুদ্ধকরণের প্রকৃত শিক্ষা ত্বরিকতপন্থী ভক্ত বা অনুসারীগণ লাভ করেন এবং ধীরে ধীরে স্রষ্টার প্রতি নবীজী (স.) এর ভালবাসার যে গভীরতা তা অনুধাবন করা যায় এবং পরবর্তীতে স্রষ্টার গুণে গুণাদ্বিত হয়ে স্রষ্টার মাঝে নিজেকে বিলীন হওয়ার সাধনায় রত হয়। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রায় দুইশত বৎসর আগে প্রবর্তিত এই ত্বরিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুল তথ্য প্রদান অপব্যাখ্যা ও কুসংস্কারের কারণে আসল সত্য ও মানবিক মূল্যবোধগুলো যখন হারিয়ে যাচ্ছিল তখনই বাবা মঈনউদ্দিন (ক.) তার ঐশ্বরিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতায় পরিপূর্ণ আলোকবর্তিকা নিয়ে সমাজের, দেশের ও বিশ্বের দরবারে ত্বরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার সঠিক ও নির্ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন এবং মানবপ্রেমের মাধ্যমে দিশেহারা মানুষকে সত্যের পথের সন্ধান দিয়েছেন। তাইতো তাঁর নাম মঈন-উদ-দ্বীন বা দ্বীনের সংস্কারক। পৃথিবীর প্রায় ৫টি মহাদেশেই মাইজভান্ডারীয়া ত্বরিকার ঝান্ডা হাতে নিয়ে তাঁর পদচারণা ছিল সাফল্যমন্ডিত। তাই মুসলিম দুনিয়া তথা বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘ সহ সমগ্র পৃথিবীতে ত্বরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়া আজ একটি স্বতন্ত্র স্থান দখল করে আছে। আর সেই সাথে পৃথিবীর অন্যান্য আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবি এবং শিক্ষাবিদগণের কাছে সৈয়দ মঈন উদ্দিন আল হাছানী (ক.) আজ একটি অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম ধারণ করে আছে।
১৯৮৮ সনে সুন্নিয়াতের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম ঘঠনে এবং বিভিন্ন দরবারের আন্তধর্মীয় কোন্দল নিরসনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। দেশবরেণ্য হাজার হাজার আলেম-উলামা, পীর মাশায়েকবৃন্দ ও গুণীজন তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। তাঁর মতে নবীপ্রেমই ঈমানের মূলশর্ত। তাঁরই বলিষ্ট নেতৃত্বে ১৯৯২ সন থেকে যথাক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা শহরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৮ সনে তিনি ওয়ার্ল্ড আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্বে ছিলেন।
ইসলাম ধর্মের প্রচারে ও তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। এশিয়ার ভুখন্ড অতিক্রম করে আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপে নিরলসভাবে ইসলাম এবং সুফীজম এর সঠিক তথ্য ও ব্যাখ্যা দিয়ে লক্ষাধিক অমুসলিম ও মুসলিমদের প্রকৃত ইসলামের সৌন্দর্য অবলোকন করিয়েছেন। শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। আধ্যাত্মিক সাধনার অনুশীলন, প্রচার এবং ত্বরিকতের চর্চার লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশে সহস্রাধিক খানকা, এবাদতখানা, এতিমখানা, হেফজখানা, মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মূলবাণী ছিল- ‘ভোগ নয় ত্যাগ, ঘৃণা নয় জোড় জবরদস্তি নয় বরং ভালবাসার মাধ্যমেই সবকিছু জয় করা সম্ভব, হিংসুকরা ব্যতীত’। কারণ হিংসা মানুষকে পশু বানিয়ে দেয়। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন কিভাবে পরের জন্য বেঁচে থাকতে হয়- শুধু নিজের জন্য নয়, কিভাবে মিথ্যা ও অন্যায়ের ভিত্তি দৃঢ় ও স্থায়ী হয় না, কিভাবে আল্লাহ ও রাসুলকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে ইত্যাদি। ক্ষমা, ত্যাগ, ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, শোকরানা, অল্পতে তুষ্টি, অসম্প্রদায়িকতা, অসংখ্য গুণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন বাবা মঈনউদ্দিন। তাই তাঁর জীবনের অধিক সময় তিনি অতিবাহিত করেছেন- নবী প্রেমিক, মানবপ্রেমিক, বিনয়ী দরিদ্রদের সাথে। আর্ন্তজাতিক মন্ডলে তাঁর এই চেস্টা বিশেষভাবে সমাদৃত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন