শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত : রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ভূয়া ভোটের সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য জনগণ নয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভোটের আগের দিন রাতেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের ভোটের অধিকারটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারাই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রাতভর ব্যালট বাক্সে নৌকা মার্কায় সিল দেয়া ব্যালট পেপারে ভরিয়ে দিয়েছে। ভোট জালিয়াতি করতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাসীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং গোপনে উৎকোচ দেয়া হলেও প্রকাশ্যে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ ছিল প্রধানমন্ত্রীর। গতকাল (রোববার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে মহাভোট ডাকাতির পর সেই নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য সরকার যা যা করছে তা চরম হাস্যকর। শুক্রবার তারা জনগণের কোটি কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে তথাকথিত বিজয়ের উৎসব উদযাপন করেছে। সারাদেশ থেকে বাসভর্তি ভাড়াটে লোকজন এনেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরতে পারেনি। সেখানে ‘নিশুতি রাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী’ ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে তাঁর দলকে বিজয়ী করার জন্য জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি (প্রাধানমন্ত্রী) বলেছেন- জনগণ নাকি এবার স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে তা তারা ভেবে পাচ্ছে না। যখন মহাভোট ডাকাতিতে ভোটাধিকারহারা জনগণ ব্যথিত, বিমর্ষ ও বাক্যহারা, তখন তাদেরকে নিয়ে এধরণের বক্তব্য নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন, নির্বোধ স্তাবকরা ছাড়া কে ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরাধীন মঞ্চে? আপাদমস্তক ভীতু, ফন্দিবাজ, পরান্নজীবী, কৃপাপ্রার্থী, উমেদার আর প্রবঞ্চকদের ভিড় ছিল। জনগণের পকেটকাটা টাকায় বর্ণাঢ্য র‌্যালী ছিল রাষ্ট্রের মালিক জনগণের সাথে আরেকটি অবজ্ঞাভরা মশকরা। বরং সোহরাওর্য়াদীতে গণতন্ত্র হত্যার উৎসবে পরিণত করা হলো।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ভূয়াভোটের সরকার প্রধান যখন বাংলাদেশে ভোটাধিকার হরণের পর উৎসব করছেন তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম ছিল বাংলাদেশে নির্বাচন অবশ্যই সঠিক ছিল না। বিবিসি’র হেড লাইন ছিল গণতন্ত্র থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্ব মিডিয়ায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। এই নির্বাচনকে সিএনএন বলেছে প্রহসন, এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিপজ্জনক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর খ্যাতনামা স্কলার’রা বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত স্কলার বলেছেন-বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে। ভাট চুরির সব নোংরা কৌশল প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ফলাফল নিজের দলের জন্য ভাগিয়ে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, মহা ভোট ডাকাতির মহা কেলেঙ্কারী আড়াল করতে ভুয়া ভোটের সরকার বৈধতা পেতে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেনদরবার শুরু করেছে। এরকম ভূয়া ভোটের নির্বাচন বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ ও তাদের নির্বাচিত সরকারের কাছে এর কোন কানাকড়ি মূল্য নেই। গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষের লড়াই ও অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে ভূয়া ভোটের এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর নির্বাচন এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোন সরকার কখনোই টিকতে পারে না, ভয় দেখিয়েও বেশি দিন টেকা যায় না।
মিথ্যা জয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কুৎসিত অপকর্ম করতে তারা এখন বেপরোয়া। এরা বিরোধী দলের সহায়-সম্পত্তি দখল ও লুটের পাশাপাশি নারীদের ওপর হানাদার বাহিনীর কায়দায় হিংসা লালসায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে সৌজন্যবোধ ও হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। এরা শকুনির দৃষ্টি নিয়ে সারাদেশে নির্ভয়ে শিকার করে বেড়াচ্ছে। এদের হাত থেকে মা-বোন-শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। মিথ্যা জয়ের আনন্দের আতিশয্যে এদের বিভৎস রুপ দেখে দেশবাসী ভীত-শঙ্কিত। এদের নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশ এখন আদিম অন্ধকার যুগে প্রবেশ করেছে।
ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে নির্যাতিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপরাধে নির্যাতিতা পারুল বেগমের আহাজারী ও গোঙানী থামতে না থামতেই নোয়াখালীর কবিরহাটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে মা ও ছেলে-মেয়েদের জিম্মি করে তিন সন্তানের মাকে স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা গণধর্ষণ করেছে। ধর্ষিতার স্বামী আবুল হোসেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাকে নির্বাচনের আগে দুটি মিথ্যা মামলায় আটক করে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে, অথচ এফআইআর-এ তার নাম পর্যন্ত ছিল না। বন্দী স্বামীর স্ত্রীকে এভাবে ক্ষমতাসীন যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা গণধর্ষণ শুধু হৃদয়বিদারকই নয়, মনুষ্যত্বহীনতার এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। এরা মানুষরুপী পশু। নিরাপরাধ নারী-পুরুষের রক্তে রঞ্জিত আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনের দ্বারা শাসিত না হয়ে ভোট ডাকাতি ও ভোট জালিয়াতিতে ব্যস্ত থাকার পর এখন সরকারের তাবেদারিতে ব্যস্ত থাকায় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সর্বকালের মধ্যে চরম খারাপ অবস্থায় পতিত হয়েছে। আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলেই আওয়ামী যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বেপরোয়াভাব এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভোট ডাকাতির জয়ে ক্ষমতাসীনরা অহংকার আর উন্মত্ততায় বিচার বুদ্ধি হারিয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমূখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন