জনগণের দুঃখ-দুর্দশার দিকে নজর না দিয়ে সংসদে এক শিল্পীর মুখে নিজের বন্দনা শুনে সরকারের প্রধানমন্ত্রী পুলকিত হলেও জনগণ লজ্জিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট কিংবা ভোট ডাকাতি, এমপিরা যেভাবেই সংসদে প্রবেশ করুক, বাস্তবতা হচ্ছে সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রতি মিনিটে রাষ্ট্রের ব্যয় প্রায় দুই লাখ টাকা। সুতরাং যেখানে বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যাপীড়িত মানুষ যখন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে, বেঁচে থাকার লড়াই করছে সেখানে রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে সংসদে বসে বসে কোন এক শিল্পীর গান শোনা রীতিমতো মানবতার প্রতি অবমাননার শামিল। গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে যার ইচ্ছেমতো গান, কবিতা, খিস্তিখেউড় আর মিথ্যাচার চালিয়ে জনম্যান্ডেটহীন সংসদকে ইতোমধ্যেই রঙ্গশালায় পরিণত করা হয়েছে। সুতরাং, সংসদ অধিবেশনের নামে গান, নাটক, কবিতা আর খিস্তিখেউর শোনার জন্য রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ না করে সেই টাকা বরং বন্যার্তদের পেছনে খরচ করা এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে আওয়ামী লীগ এখন লুটেরা আর টাকা পাচারকারীদের দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি এবং স্বাধীনতার ঘোষকের পরিবার সম্পর্কে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করাই এই দলটির নেতা মন্ত্রীদের এখন একমাত্র কাজ। এই দলটির সাধারণ সম্পাদক, আত্মীয়স্বজনদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি সম্পর্কে খোদ ওবায়দুল কাদের সাহেবের আপন ছোট ভাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। প্রকাশ্যেই বারবার দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। অথচ ওবায়দুল কাদের সাহেব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি সম্পর্কে কিছু না বলে তিনি নিত্য নিয়মিত বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন। ফলে এটি প্রমাণিত, বিএনপি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পর্কে মিথ্যাচারই, নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রী-এমপি হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা।
রিজভী বলেন, বিনাভোটে বছরের পর বছর ধরে এমপি পদবী উপভোগ করার পর মমতাজ-নিক্সনদের মনে হয়তো মন্ত্রী হওয়ার খায়েশ জেগেছে। কিন্তু তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বেশি লোভ ভালো নয়। রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে সংসদে বসে এমন পাগলামি-খিস্তিখেউর অব্যাহত থাকলে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, জনরোষ থেকে বাঁচতে পুরো নিশিরাতের সরকারকেই জনচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতে হতে পারে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যা কবলিত। সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ১৫টি জেলার ৯৫টি উপজেলা এবারের প্রলয়ংকারী বন্যায় ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা কবলিত মানুষরা চরম দুর্ভোগের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছেন। বন্যার করাল গ্রাসে তাদের সর্বস্ব-সবকিছু ভেঙে-চুরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকায় কিছুটা পানি নামতেই মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে পেটের পীড়া-ডায়ারিয়া-কলেরা-রোগ বালাই। নিজেদের বাড়িঘরের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। কেউ কেউ এলাকায় ফিরে বিধ্বস্ত ও শূণ্য ভিটা দেখে অনেকে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। চারদিকে ত্রানের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। সেদিকে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জনগণের দল বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা এই বন্যার শুরু থেকে উদয়াস্ত ত্রাণ কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রতিটি দুর্গত এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীরা সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করছেন। আমাদের কেন্দ্রীয় ত্রাণ টিম ছাড়াও স্থানীয় নেতাকর্মীরা বানভাসিদের সাহায্য সহযোগিতা করছেন। আর সরকার ত্রাণের পরিবর্তে ব্যস্ত পদ্মা সেতু নিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের গল্প প্রচারে। তাই আবারো প্রমাণ হয়েছে জনগণের দুঃখ দুর্দশা বিপদ আপদে একমাত্র বিএনপিই তাদের পাশে থাকে। আর আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা ব্যস্ত থাকে লুটপাট-অপকর্ম আর অপপ্রচারে সরকার ব্যস্ত আখের গোছাতে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন