শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নেপালের এয়ার ট্রাফিক চাইলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত: বেবিচক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৪৭ এএম

এটিসি যখন দেখছে এয়ারক্রাফট পথে ছিল না। তখন এটিসি চাইলে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারত, বড় ভূমিকা রাখতে পারত। যার মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোধ করা যেত। কিন্তু তারা তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি।
সোমবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে ( বেবিচক) এক সংবাদ সম্মেলন নেপালে ইউএস-বাংলার এয়ারলাইনসের দুর্ঘটনায় বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ও এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশের (এএআইজি-বিডি) প্রধান ক্যাপ্টেন ও নেপাল সিভিল এভিয়েশন গঠিত তদন্ত কমিটির একমাত্র বাংলাদেশি সদস্য সালাহ্উদ্দিন এম রহমতউল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা নেপালের প্রকাশিত প্রতিবেদন অস্বীকার করছি না। পাইলটের দোষ ছিল, অবতরণের সময় সঠিক পথে ছিল না। তবে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসির) চাইলে দুর্ঘটনা এড়াতে পারত।
তিনি আরও বলেন, পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ধূমপান করেছিল উড়োজাহাজ পরিচালনার পূর্বে, যা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। আর এটা নিষেধও না। তাছাড়া ডেথ সার্টিফিকেটে এর কোনো ইফেক্ট ছিল না পাইলটের। পাইলট মানসিকভাবে দুর্বল ছিল। উড়োজাহাজ অপ্রোচ মিস করেছিল। যেখানে নেপালের এয়ার ট্রাফিক চাইলে বড় ধরনের ভূমিকা নিতে পারত।
সালাহউদ্দিন বলেন, তারা ফাইনাল প্রতিবেদন তৈরির পূর্বে ড্রাফট কপি আমাদের পাঠায়। সেগুলো আমি দেখে বেশকিছু সুপারিশ পাঠাই। তারা গতকাল ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেওয়ার পূর্বে আমাকে একটা কপি পাঠায়। সেখানে পুরোপুরি এটিসির বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমি তাৎক্ষণিকভাবে এটিসির বেশকিছু সুপারিশ পাঠিয়েছি। নেপাল এটিসির দুর্বলতা ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন দিক সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের বিষয়গুলো প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে। তরা যদি অন্তর্ভুক্ত না করে, তাহলে আমরা আইকাওতে অভিযোগ করব।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যে বিষয়টি স্পষ্ট এয়ারক্রাফটের কোনো সমস্যা ছিল না এবং আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিল।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল নাইম হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা নেপালের প্রতিবেদন অস্বীকার করছি না। তবে এটিসির বিষয়গুলো আসলে পূর্ণতা পেত প্রতিবেদনে।
এদিকে, নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিএস-২১১ দুর্ঘটনায় পড়ার আগে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ অবস্থায় থাকায় পাইলট আবিদ সুলতান পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন’ বলে মনে করছে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন।
গত রোববার নেপালের পর্যটনমন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারীর কাছে জমা পড়া ৪৩ পৃষ্ঠার ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কমিশন সুপারিশ করেছে, স্বাস্থ্য বা মানসিক অবসাদের কারণে কোনো পাইলটকে দায়িত্ব পালনে বিরত রাখার ইতিহাস থেকে থাকলে তার লাইসেন্স নবায়নের আগে অবশ্যই স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে গত বছর ১২ মার্চ দুপুরে কাঠমান্ডুতে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১। আরোহীদের মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়, যাদের ২৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
তদন্ত কমিশন বলছে, ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার পরীক্ষা করার পর তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, ক্যাপ্টেন বড় ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টার ওই ভয়েস রেকর্ডে কো-পাইলট পৃথুলা রশিদের সঙ্গে কথোপকথনে পাইলট আবিদের ‘মানসিক অস্থিরতা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তার অসতর্কতার’ বেশকিছু নমুনা পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই যাত্রায় পাইলট আবিদ এক নারী সহকর্মীকে নিয়ে কথা বলছিলেন, যিনি ইউএস-বাংলাতেই কো পাইলট হিসেবে কাজ করেন, তবে সেদিনের সে ফ্লাইটে তিনি ছিলেন না। ওই নারী সহকর্মী ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে আবিদের সুনাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সে কারণে আবিদ মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন। ওই পরিস্থিতিতে অবতরণের আগের ওই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উড়োজাহাজ চালনার বিধিবদ্ধ নিয়মগুলো অনুসরণ করতে ব্যর্থ হন ফ্লাইটের দুজন ক্রু। পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন না। অসতর্কতার কারণে পাইলটরা বুঝতে পারেননি, তাদের ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ উড়োজাহাজটি নির্ধারিত পথ থেকে কতটা সরে গেছে। এর অর্থ হলো, তারা ঠিকমতো রানওয়ে দেখতে পাচ্ছিলেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন