প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ছিলেন মানব জাতীর মধ্যে সকল পূর্নতার অধিকারী। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁকে রহমাতুল্লিল আলামিন (জগতসমূহের জন্য রহমাত) হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে মানব জাতীর জন্য স্বীয় পথনির্দেশ পরিপূর্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর মাধ্যমে মানব জাতী অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে জ্ঞানের আলোকোজ্জল জগতে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি ছিলেন সকল প্রকার উন্নত সমাজ গঠনে সর্বোত্তম নিদর্শন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সমগ্র জীবনই হলো আদর্শ সমাজের নমুনা। তাঁর শিক্ষা মানেই হচ্ছে পারস্পরিক একতা, ভ্রাতৃত্ব, সমতা, ন্যায় ও কল্যাণের মৌলিক মূল্যবোধের শিক্ষা। উজ্জল ঐতিহ্যের মহৎ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি সমাজকে আলোকিত করেছেন। যখন সমগ্র পৃথিবী অন্ধকারের অতল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। মানব সভ্যতার লেশমাত্রও অবশিষ্ট ছিলো না বরং হিংসা-বিদ্বেষ, যুদ্ধ-সংঘাত, অত্যাচার-অনাচার, চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি, সর্বপ্রকার অন্যায়, অপকর্ম ও পাপাচারে মানুষ লিপ্ত ছিলো। কোথাও ছিলো না শান্তি, ছিলো না কোথাও স্বস্তি। চারদিক চলছিলো মানুষে মানুষে হানাহানি, কাটাকাটি, দুর্বলরা শক্তিধরদের অত্যাচার ও নির্যাতনে জর্জরিত হচ্ছিলো। ধর্মের নামে সর্বত্র বিরাজ করছিলো শিরক, কুফর আর ধর্মহিনতা। নারী সমাজ পরিণত হয়েছিলো, পণ্য সামগ্রীতে। তাদের ব্যাবহার করা হতো আসবাব পত্রের মতো। তাদের ছিলো না কোন অধিকার। ছিলো না কোন মর্যাদা। কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো। মানবিক মূল্যবোধ বলতে কোথাও কিছু ছিলো না। অরাজাকতাপূর্ণ এক অস্থির পৃথিবীতে শান্তির মহাপয়গাম নিয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আবির্ভূত হয়ে সমাজকে করেছেন উন্নত ও আলোকিত। তাঁর আগমনে ধন্য হয়েছিলো সমগ্র মাখলুকাত। মুখ থুবরে পড়েছিরো দীর্ঘ কালের যাবতীয় অন্ধকার এবং বিকশিত হয়েছিলো সত্য সুন্দর হিদায়াতের সমুজ্জ্বল রশ্মি। যুগ কাল ও মহা কালের বিবর্তনশীল পৈঠায় দাঁড়িয়ে যার আগমনের জন্য জগৎ অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলো, যার সান্নিধ্য ও সংস্পর্শ লাভের আশায় কুল-মাখলুকাত ছিলো উদ্বেল। তিনি আগমন করেছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহ পাকের অনন্ত অসীম রহমাত ও নিয়ামতের জীবন্ত প্রতীক হয়ে এবং বাহন করে এনেছেন বিশ্ব মানবের জন্য চিরশান্তি ও চির নাযাতের পয়গাম। পৃথিবীকে দিয়েছেন একটি নতুন সমাজব্যবস্থা, নতুন চিন্তা ও উপলব্ধি এবং উপমাতুল্য একটি চেতনাকাঠামো। আর এভাবেই তিনি সমাজকে করেছেন সবচেয়ে সুন্দর ও উন্নত। আর এই ব্যবস্থার নামই হচ্ছে ইসলাম। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আনিত এই দ্বীন মানুষের চেতনা ও কর্মপ্রয়াসের সব অঙ্গকে এমন এক ঐক্যবদ্ধ কাঠামোতে নিয়ে আসে, তাতে মুমিনের মাঝে সৃষ্টি হয় অভিন্ন লক্ষ্য, পারস্পরিক সহযোগীতা ও সহাবস্থানের অনুভূতি।
ভারসাম্য ও মধ্যপন্থার এক নিদর্শন এই ইসলামে, সময় ও যুগের চড়াই-উৎরাইয়ে যা কখনো মলিন হয় না; বরং ইসলামের আলোকিত শিক্ষার বদৌলতে মানুষের সমাজ ও সামাজিক সংকটগুলোর সর্বোত্তম সমাধান বের হয়ে আসে। এজন্যই এই ধর্মকে বলা হয়, দ্বীনে ফিতরাত বা স্বভাব অনুকূল ধর্ম। এ ধর্মের শিক্ষার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সহজতা ও স্বাভাবিকত্ব; জটিলতা ও সংকর্ণীতা এতে অনুপস্থিত।
জাহেলিয়াত ও জাহালত-মূর্খত্ব ও মূর্খতার মাঝে ইসলাম একটি পরিস্কার বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছে। ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছে, জাহেলিয়াত হচ্ছে বিশেষ ওই আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির নাম, যা মিথ্যা-অহংকার, গোত্রীয় অভিজাত্য ও প্রাধান্যের দ্ব›দ্ব, অন্ধ আবেগ ও চেতনা এবং প্রতিশোধ ও চরমপন্থার এক সমন্বিত রূপ। জাহেলিয়াত হচ্ছে শক্তিপুজারী একটি আচরণব্যবস্থা। এতে ধৈর্য ও পরমত সহিষ্ণুতা গণ্য হয় দুর্বলতা হিসেবে। বুদ্ধি ও মেধার ক্ষেত্রে উন্মাদনা এবং সংলাপের জায়গায় প্রতিশোধের আওয়াজ উচ্চকিত করা জাহেলিয়াতের নীতি।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ১৩ বছরের মক্কা জীবনে কাটিয়েছেন সাহাবায়ে কেরামের তরবিয়াত ও জীবন গঠনের পিছনে। এরপর যখন জিহাদের হুকুম হলো তখনও এ নির্দেশনা প্রবল ছিলো, সব শত্রæতা ও বৈরিতার মধ্যেও যেন ন্যায়ের নিশান হাতছাড়া না হয়। জিহাদ হচ্ছে, হক্বের আওয়াজ উর্ধ্বে তুলে ধরা, প্রতিশোধের নাম জিহাদ নয়। তাওহীদের মর্ম একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া, অপর ধর্মানুসারীদের প্রভুদের গালাগাল দেওয়া নয়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন মানবতার প্রতি সম্মান। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর শিক্ষায় বর্ণ, বংশ, ভাষা ও সম্পদের ভিত্তিতে কারো মর্যাদা নির্ধারিত হয় না। মর্যাদা ও সম্মান নির্ধারণ হয় কেবল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সুন্নাহ ও আদর্শ বাস্তবায়নের ভিত্তিতে।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর আদর্শ মানুষকে অন্ধকার থেকে সরিয়ে আলোর পথে এনে দেয়। তাঁর মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা সাধিত হয়েছে এবং নবুয়াতের ধারা সমাপ্ত হয়েছে।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সমগ্র জীবনী আলোচনায় ফুটে উঠে, ইসলাম নিরাপত্তার ঘোষক, সততার পতাকাবাহী এবং মানবতার বার্তাবাহক। মানবতার প্রতিটি সদস্যই ইসলামের দৃষ্টিতে সাম্য ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে। ইসলাম বর্ণ ও গোত্রের বিভাজনমালিন্য থেকে মুক্ত। মানবতার সকল শ্রেণি ও স্তরের জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এসেছেন বিশ্বজাহানের রহমাত স্বরূপ।
অমুসলিম নাগরিকদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি ইসলাম। ইসলামের দেয়া অধিকার ও মর্যাদায় অমুসলিমরা এতটাই সম্মানিত বোধ করে, পূর্বে এর কোন নজীর তারা পায়নি। সভ্যতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে ইসলাম এসেছে একটি পশ্চাৎপদ সমাজে।
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন