বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আইএসে যোগ দেয়া শামিমা ফিরতে চান বৃটেনে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৫০ পিএম

খেলাফত কায়েম করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে দুই বান্ধবী খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসের সঙ্গে লন্ডন থেকে পালিয়ে সিরিয়া গিয়েছিলেন শামিমা বেগম। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। সেখানে গিয়ে যোগ দেন জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে। কিন্তু যেমনটা তিনি ভেবেছিলেন জীবন তেমন নয়। তার চোখের সামনে মারা গেছে নিজের গর্ভজাত দুটি সন্তান। মারা গেছেন তার দুই বান্ধবীর একজন। অন্যজন কোথায় সে তথ্য দিতে পারেন নি তিনি।
সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবির থেকে লন্ডনের দ্য টাইমস পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে ১৯ বছর বয়েসী শামিমা বেগম বলেন, তিনি সিরিয়ায় থাকার সময় ডাস্টবিনে মানুষের কাটা মাথা পড়ে থাকতে দেখেছেন কিন্তু এসব তাকে বিচলিত করে নি। তিনি জানান, তিনি নয় মাসের গর্ভবতী। এর আগে তার দুটি সন্তান হয়েছিল, কিন্তু দু’জনই মারা গেছে। তার পেটের সন্তানটির জন্যই তিনি দেশে ফিরতে চান।
সিরিয়ায় যাবার জন্য লন্ডন ত্যাগের সময় বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামিমা বেগম ও আমিরা আবাসির বয়েস ছিল ১৫, আর খাদিজা সুলতানরা বয়েস ছিল ১৬। লন্ডনের কাছে গ্যাটউইক বিমান বন্দর থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তারা তিন জন তুরস্কের উদ্দেশ্যে উড়াল দেন। তারা তাদের বাবা-মাকে বলেছিলেন, তারা একসাথে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন। তুরস্কে নামার পর তারা সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় ঢোকেন। তখন সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে রয়েছে আইএস।
ইসলামিকে স্টেটের স্বঘোষিত ‘খেলাফতের' রাজধানী’ রাকায় এসে তারা প্রথম একটি বাড়িতে ওঠেন। সেখানে তাদের সাথে ছিল আরো কয়েকজন মেয়ে, যারা আইএস যোদ্ধদের বধূ হবার জন্য দেশ ছেড়ে এসেছিল। শামিমা বলেন, ‘আমি একটা আবেদনপত্র দেই যে আমি ইংরেজিভাষী একজন যোদ্ধাকে বিয়ে করতে চাই, যার বয়েস ২০ থেকে ২৫ বছর বয়েসের মধ্যে।’ দশ দিন পর তার সাথে ২৭ বছর বয়স্ক একজন ডাচ লোকের বিয়ে হয়, যে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
তার পর থেকে শামিমা ওই ব্যক্তির সাথেই ছিলেন, এবং দু’সপ্তাহ আগে তারা পূর্ব সিরিয়ায় আইএস গোষ্ঠীর শেষ ঘাঁটি বাঘুজ থেকে পালিয়ে যান। এ সময় শামিমার স্বামী সিরিয়ান যোদ্ধাদের একটি দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে। শামিমা এখন উত্তর সিরিয়ায় ৩৯ হাজার লোকের বাস এমন একটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন।
টাইমসের সাংবাদিক এ্যান্টনি লয়েড তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, রাক্কার জীবন যেমন হবে বলে তিনি আশা করেছিলেন, তা কি তেমনই ছিল? জবাবে শামিমা বলেন, ‘হ্যাঁ, ছিল। এটা ছিল একটা স্বাভাবিক জীবনের মতোই। তাদের প্রচারমূলক ভিডিওতে যেমন দেখানো হতো, তেমনই একটা স্বাভাবিক জীবন।’ তিনি বলেন, জীবনে প্রথমবার যখন তিনি মানুষের কাটা মাথা দেখেছিলেন, তাতে তিনি একটুও বিচলিত হননি। সেটা ছিল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ধরে আনা একজন বন্দী যোদ্ধার মাথা, একজন ইসলামের শত্রু।’
শামিমা বলেন, ‘আমি এখন আর সেই ছোট্ট ১৫ বছরের স্কুলের মেয়েটি নেই, যে বেথনাল গ্রিন থেকে পালিয়েছিল। এখানে আসার জন্য আমি দু:খিত নই।’ তবে সেখানে তিনি যে দমন-নিপীড়ন দেখেছেন তা তাকে ‘স্তম্ভিত’ করেছে, এবং ইসলামিক স্টেটের ‘খেলাফত’ শেষ হয়ে গেছে বলেই তার মনে হয়।
শামিমার দ্বিতীয় সন্তানটি আগে মারা যায় আট মাস বয়সে। আর প্রথমটি মারা যায় এক বছর নয় মাস বয়সে। অপুষ্টির কারণে প্রথম সন্তানটির অসুস্থতা খারাপ মোড় নিয়েছিল। তিনি দ্বিতীয় সন্তানকে তিনি একটা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কোন অষুধ ছিল না, এবং যথেষ্ট ডাক্তার-নার্সও ছিল না। তিনি জানান, শরণার্থী শিবিরে থাকলে তার পেটের সন্তানটিও আগের বাচ্চাদের মতোই মারা যাবে, এ ভয় তার বাঘুজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করেছে। তার সন্তান যে কোন দিন ভূমিষ্ঠ হতে পারে, এবং এ জন্যই তিনি ব্রিটেনে ফিরতে চান। কারণ তিনি জানেন যে সেখানে তিনি অন্তত চিকিৎসা পাবেন।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, শামিমা বেগমের ব্যাপারে তিনি আইনগত কারণে কোন মন্তব্য করবেন না। তবে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বা সমর্থন দিতে যে ব্রিটিশ নাগরিকরা সিরিয়া গেছেন, তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে যে দেশে ফিরে এলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের সম্মুখীন হতে হবে এবং বিচারও হতে পারে। সূত্র: বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন