ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব এ তিনে মিলে সময়টা যেন একেবারেই বিরক্তিকর, উপায়ান্তর না দেখে শেষমেশ এ বন্দিদশা থেকে একটুখানি মুক্তির আশায় মাধবপুর লেক থেকে ঘুরে আসল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। নিজেদের ভ্রমণ কাহিনী জানাচ্ছেন তানভীর আহমেদ নাইম। অনুলিখনে মেহেদী কবীর। ছবি তুলেছেন এম এ আলিম মুকুল।
দিনটি ছিল ৭ মে। টিক টিক করে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল সাতটা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনের সামনে একে একে জমায়েত হতো লাগলো সিএসই পরিবারের সকল সদস্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসলেও সবার গন্তব্য এক। মাধবপুর লেক। ১০ বছর, হ্যাঁ দশ বছর পর পিকনিকে যাচ্ছে গোটা পরিবার। আয়োজক ২০১২ ব্যাচ। আটটায় সকালের নাস্তা শেষ করে যাত্রা শুরু। শ্রীমঙ্গলের আগে ১০ মিনিটের খানিকটা বিশ্রাম। এরপর শুরু হলো সবার দুরন্তপনা। লাউয়াছড়া বনের মধ্যে দিয়ে চলছে বাস। বাইরের গাছগাছালি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। শিক্ষকদের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, পরিবারের একঝাঁক শিক্ষার্থী উঠে গেল বাসের ছাদে। লাউয়াছড়ার আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছাদে উঠে মনে হচ্ছিল এ যেন বাস নয়, রোলার কোস্টারে রয়েছে সবাই। সেই রোলার কোস্টারে যেতে যেতেই মশিউর, আব্দুল্লাহর গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে খাওয়ার দৃশ্য কি ভোলার মতো? আর একটু পর পর গাছের কচি ডালে কাকন, শুভ, মুকুল ভাই, ধ্রুব আর আমার বাড়ি খাওয়া যেন পরিপূর্ণতা এনে দিচ্ছিল এ এডভেঞ্চারে।
সাড়ে ১১টা নাগাদ পৌঁছে গেলাম মাধবপুর লেকের প্রবেশদ্বারে। এবার বাস থেকে নামতে হয়। তর যেন আর সইছিলো না। বাস থেকে নেমে খানিকটা হাঁটলেই নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক। নীল শালুকে ভরে উঠা পুরো লেক, পাড় ঘেঁষে সুউচ্চ টিলা, টিলায় চা বাগান, আর সাথে নাম না জানা ছোট বড় অসংখ্য গাছ, গাছে কিচিরমিচিররত অসংখ্য পাখপাখালি, কি নেই এখানে?
চারপাশের দৃশ্যগুলো এতটাই মনকাড়া যে সবাই দিকভ্রান্ত হয়ে গেল। কোথায় আগে যাবে, কোথায়ই বা পরে যাবে। এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত। এরই মাঝে কেউ চলে গেল টিলায়, কেউবা গেল লেকের পাঁড় ঘেঁষে। আর একদলতো নেমেই পড়লো লেকের পানিতে। শিক্ষকগণও ছিলেন এই উচ্ছ্বাসে।
ভাবতে ভাবতে এক ফাঁকে আমি, নিশিকান্ত আর ছোটোভাই মোতাহার বেরিয়ে পড়লাম এডভেঞ্চারের খোঁজে। দুর্গম এক টিলা পার হয়ে ঘুরে এলাম খাসিয়া পল্লীর খুব কাছ থেকে আর মুগ্ধতায় অবলোকন করলাম অপরূপ প্রকৃতির নীরব ভাষা। পিছনের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল আর কিছুটা সময় থেকে গেল ভালো হতো। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ ব্যাচের যেন আফসোসটা আরেকটু বেশী। বিশ^বিদ্যালয় জীবনের প্রথমেই এতো সুন্দর একটা আয়োজন! সে কি ভুলে যাওয়ার মতো? এতটা কম সময়ে যেভাবে সবার সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তাতে মনে হয় সত্যিই আমরা অনেক ভাগ্যবান। এভাবেই নিজের কথা ব্যক্ত করলো ১৫ সেশনের অনিক।
শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন