জুয়েল মাহমুদ
গত ১১ মে ২০১৬ সালের এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, পাসের হার বিবেচনায় গতবারের থেকে ভালফল এটি। এবছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মোট ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থী আর পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৫২হাজার ৬০৫ জন। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ১৪০ জন কম। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে আসন নিয়ে কোনো সঙ্কট হবে না মনে করা হলেও মানসম্পন্ন কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় আছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কারণ রাজধানীর ভালো কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে আসন আছে ২০ হাজারের মতো। দেশের অন্যান্য এলাকার ভালো কলেজগুলোসহ সব মিলে আসন সংখ্যা ৩০ হাজার হতে পারে বলে ব্যানবেইস সূত্রে জানা গেছে। সেই হিসাবে ভালো কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে যে পরিমাণ আসন আছে তার থেকে অনেক বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
এসএসসি রেজাল্টের পর ঘরে ঘরে চলছে যেমন আনন্দ আয়োজন তেমনি ভর্তির বিষয়টি সামনে আসতেই হাসিমাখা মুখটি মলিন হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। অনেক অভিভাবককে বলতে শোনা গেছে কোথায় ভর্তি করব আদরের সন্তানকে। ভাল কলেজে ভর্তি হতে না পারলে পরবর্তীতে রেজাল্টের ধারাবাহিকতা থাকে না।
আর যারা জিপিএ-৪ বা তার কম পেয়েছে তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেশি। কেননা বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী জিপিএর ভিত্তিতে কলেজে ভর্তি হতে হয়। তাই সারাদেশের ভাল কলেজে যে আসন আছে তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
সংক্ষেপে এবছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা
গত ১১ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ১২ মে একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে অনলাইন এবং মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে ২৬ মে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ক্লাস শুরু হবে ১০ জুলাই। নীতিমালায় বলা হয়, ২০১৪. ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেশের যে কোন শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে যে কোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবেন। আগের বছরের মতো এবারও ভর্তির ক্ষেত্রে কোন ধরনের বাছাই বা ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। কেবল শিক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। বিভাগীয় ও জেলা সদরের কলেজগুলোতে ৮৯ শতাংশ আসন সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং অবশিষ্ট আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, ৩ শতাংশ বিভাগীয় ও জেলা সদরের বাইরের শিক্ষার্থী, ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারী, গভর্নিং বডির সদস্যদের সন্তান এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) ও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এসব কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ভর্তিও ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষা নেয়া হবে না, কেবল পরীক্ষার ফলাফলের ভর্তি করা হবে। চতুর্থ বিষয়ের ২ বিয়োগ করে ৯ বিষয়ে মোট জিপিএ ৪৩ ধরে মেধা তালিকা করে ভর্তি করা হবে।
ক্স জিপিএ সমান হলে গণিত অথবা উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এতেও নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে পর্যায়ক্রমে, ইংরেজী, পদার্থবিজ্ঞান, এবং রসায়ন বিজ্ঞানে প্রাপ্ত পয়েন্ট বিবেচনায় আনতে হবে।
ক্স নিজ নিজ বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
ক্স ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে কলেজগুলো চাইলে ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করতে পারবে।
ক্স নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনলাইনে ১৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করা যাবে। গত বছর অনলাইনে একাধিকবার আবেদনের সুযোগ থাকলেও এবার একবারই আবেদন করা যাবে। তবে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে প্রতি কলেজের জন্য ১২০ টাকা ফি দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। অনলাইনে কীভাবে আবেদন করা যাবে সে বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড নির্দেশনা জারি করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
টেলিটক প্রিপেইড ফোনের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনের নিয়ম
শুরুতে
শুধু টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল থেকে আবেদন করা যাবে। মোবাইলের গধংংধমব অপশনে গিয়ে ঈঅউ<ংঢ়ধপব>কাক্সিক্ষত কলেজের ঊওওঘ<ংঢ়ধপব> কাক্সিক্ষত গ্রুপের নামের প্রথম অক্ষর <ংঢ়ধপব> এসএসসি/সমমান পরীক্ষা পাসের বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <ংঢ়ধপব> রোল নম্বর <ংঢ়ধপব> এসএসসি/সমমান পরীক্ষা পাসের সন <ংঢ়ধপব> শিফটের নাম <ংঢ়ধপব> ভার্সন <ংঢ়ধপব> কোটার নাম লিখে ঝবহফ করতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
ভর্তিচ্ছু গ্রুপের ক্ষেত্রে : ঝপরবহপব এর জন্য ঝ, ঐঁসধহরঃরবং এর জন্য ঐ, ইঁংরহবংং ঝঃঁফরবং এর জন্য ই, ঐড়সব ঊপড়হড়সরপং এর জন্য ঊ এবং ওংষধসরপ ঝঃঁফরবং এর জন্যও লিখতে হবে।
ভার্সনের ক্ষেত্রে : বাংলা ভার্সনের ক্ষেত্রে ই, ঊহমষরংয ঠবৎংরড়হ ভার্সনের ক্ষেত্রে ঊ লিখতে হবে।
শিফটের ক্ষেত্রে : গড়ৎহরহম এর জন্য গ, উধু এর জন্য উ, ঊাবহরহম এর জন্য ঊ এবং আবেদনকৃত কলেজের যদি কোন শিফট না থাকে তবে ঘ লিখতে হবে।
কোটার ক্ষেত্রে : মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য ঋছ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত দপ্তরসমূহ, স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্যদের সন্তানদের কোটার জন্য ঊছ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঘোষিত বিশেষ কোটার জন্য ঝছ লিখতে হবে। কোন শিক্ষার্থী একাধিক কোটায় আবেদন করার যোগ্যতা থাকলে কমা (,) দিয়ে একাধিক কোটা উল্লেখ করতে হবে। যেমন কোন শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশেষ কোটায় আবেদনের যোগ্যতা থাকলেও তাকে কোটার জন্য ঋছ, ঝছ লিখতে হবে। উল্লেখিত কোটার আওতাধীন না হলে কোটার অপশনে কিছু লেখার প্রয়োজন নেই।
কোন প্রতিষ্ঠান একই সাথে স্কুল ও কলেজ শাখা চালু থাকলে ঐ প্রতিষ্ঠান হতে এসএসসি পাসকৃত সকল শিক্ষার্থী উক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য এসএমএস-এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে।
ফিরতি এসএমএস-এ আবেদনকারীর নাম, কলেজের ঊওওঘ, গ্রুপের নাম এবং শিফটসহ ফী বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে, তা জানিয়ে একটি চওঘ প্রদান করা হবে। আবেদন সম্মত থাকলে গবংংধমব অপশনে গিয়ে ঈঅউ<ংঢ়ধপব>ণবং<ংঢ়ধপব>চওঘ<ংঢ়ধপব>ঈড়হঃধপঃ ঘঁসনবৎ (নিজের ব্যবহৃত যেকোন মোবাইল অপারেটর এর নম্বর) লিখে ঝবহফ করতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
শর্তাবলী:
১. একজন আবেদনকারী একাধিক কলেজে/একই কলেজে একাধিক গ্রুপে/একই কলেজে একাধিক শিফটে আলাদাভাবে আবেদন করতে পারবে, তবে প্রতিক্ষেত্রেই ফী বাবদ ১২০ (একশত বিশ) টাকা কেটে নেয়া হবে।
২. এসএমএস-এর মাধ্যমে ভর্তির আবেদন ২৬-৫-২০১৬ তারিখ থেকে ১০- ৬-২০১৬ তারিখ রাত ১১:৫৯ মিনিট পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে।
ভতির জন্য মনোনীত মেধাক্রম ১৬-০৬-২০১৬ তারিখে এসএমএস, স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ড/ওয়েবসাইট এবং িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফ.মড়া.নফ এবং স্ব স্ব বোর্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানানো হবে। ভর্তি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমে মন্ত্রণালয় ও বোর্ড প্রদত্ত নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, একাদশ শ্রেণিতে পর্যাপ্ত আসন রয়েছে, তাই উত্তীর্ণদের ভর্তিতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। তবে ভালো কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মানসম্পন্ন ও ভালো কলেজে আসনের সমস্যা আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন