পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ক্ষতিকর পলিথিন ও প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রম জোরদার এবং পাটের তৈরী সোনালী ব্যাগ ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। সেই সাথে পাট শিল্প বিকাশে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেরও সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) উদ্যোগে গতকাল রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘পাটের অর্থনীতি : বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ বিপর্যয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ দাবি করেন। পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. শফিক উজ জামান।
বক্তারা বলেন, পরিবেশ বান্ধব বলেই পাটশিল্প আজ বিপুল সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আজ বিশ্বের সর্বত্রই পাট পণ্যের চাহিদা বাড়ছে এবং দেরিতে হলেও বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন এবং রপ্তানী বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী পাটের জিনগত বৈশিষ্ট্য আবিষ্কারের মাধ্যমে তুলার মত মিহি সুতা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছেন। বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমের আকস্মিক মৃত্যুর পর তাঁরই সহকর্মী বিজ্ঞানীরা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে পলিব্যাগ আবিষ্কার করেছেন যা সোনালী ব্যাগ হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। সরকার ঘোষিত ২১টি জেলায় পাট গুচ্ছ শিল্প (জুট ক্লাস্টার) গড়ে তোলার উদ্যোগটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়- পাটের উৎপত্তিস্থল সঠিকভাবে জানা না গেলেও আদি নিবাস হিসেবে দক্ষিণ চীন ও আফ্রিকায় বলা হয়ে থাকে। কোন কোন সূত্রানুসারে মালয় কিংবা শ্রীলংকায় এবং ভারতেও তিন হাজার বছর পূর্বে পাট চাষ শুরু হয় বাগানের সবজি ও ঔষধী গাছ হিসেবে। বাংলাদেশের গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বহুপূর্ব থেকেই পাট চাষ ঐতিহাসিকভাবেই স্বীকৃত।
সেমিনার থেকে যেসব সুপারিশ উঠে আসে তা হলো সরকার ঘোষিত ২১টি জেলায় পাট গুচ্ছ শিল্প (ক্লাস্টার) প্রকল্পটি দ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তাবায়িত করতে হবে। পাট গবেষণায় আরো বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত পণ্যের বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়া। সেই সাথে বিজ্ঞানীদের প্রনোদনা বৃদ্ধি করা। প্রতি বছর শুধুমাত্র পাট থেকে উৎপাদিত পণ্যের প্রদর্শনীর আয়োজন করা। ছাত্র-ছাত্রীদের পাটজাত ব্যাগ এবং শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা। কৃষকের পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। পাট গবেষণা কেন্দ্র থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও পণ্য দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারের কার্যক্রম গ্রহণ করা। রাষ্টীয় মালিকানাধীন পাটকল গুলিকে আধুনিকিকরণের উদ্যোগ নেয়া। পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে প্রচারণা বাড়ানো এবং বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্যের ব্যবহারে জনগণকে আরো বেশি উৎসাহিত করা। পাট মোড়ক আইন-২০১৩ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সোবহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো: তৈয়ব আলী, পবা’র সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, বানিপা’র সভাপতি প্রকৌশলী মো: আনোয়ার হোসেন, ছায়াতল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বি এম সোহেল রানা, সেতু সংঘ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মো. ইলিয়াস হায়দার, পবা’র সদস্য দিনা খাদিজা, বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা মোস্তারী বেগম প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন