মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

হতাশ মাহমুদউল্লাহ, রেকর্ড গড়ে মুগ্ধ উইলিয়ামসন

তিন দিনেও ইনিংস হারের গ্লানি ওয়েলিংটন টেস্ট

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা শঙ্কাটাই সত্যি হয়েছে আবারো। বৃষ্টির কারণে তিন দিনে নেমে আসা টেস্টেও ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই গচ্ছিত ৭ উইকেট শেষ! ইনিংস ও ১২ রানের জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। হ্যামিল্টনে প্রথম টেস্টেও ইনিংস ও ৫২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
এই প্রথম নিজেদের ইতিহাসে টানা পাঁচ টেস্ট সিরিজ জিতলো নিউজিল্যান্ড। এমন রেকর্ড রয়েছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সবচেয়ে বেশি টানা নয়টি টেস্ট সিরিজ জয়ের রেকর্ড রয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের।
২০১৭ সালের মার্চে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারে নিউজিল্যান্ড। এরপর পাঁচ টেস্ট সিরিজের সবক’টি জিতে নেয় কিউইরা। এরমধ্যে চারটিই দেশের মাটিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড-শ্রীলংকা-বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিউজিল্যান্ড। অন্যটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
ওয়েলিংটনে টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ৮০ রান। ১৪১ রানে পিছিয়ে পঞ্চম বা শেষ দিন ব্যাট করতে নামা সফরকারীরা নিয়মিত উইকেট হারিয়ে অল আউট হয়েছে ২০৯ রানে।
ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দুই দিন ভেসে যায় বষ্টিতে। এরপরও ম্যাচ শেষ হলো মাত্র ২০১.৫ ওভারে। হিসাব করলে বাংলাদেশ হেরেছে দুই দিনের একটু বেশি সময়ে! লিটন-মিঠুনদের মাঝে যে টেস্ট ধরণার অভাব রয়েছে তাদের তাড়াহুড়ো ব্যাটিং দেখেই বোঝা গেছে। ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্টের বোলিংয়ে নাকাল হয়েছে মাহমুদউল্লাহরা। দ্বিতীয় ইনিংসে একমাত্র ফিফটি মাহমুদউল্লার ব্যাটে। ফিফটি জুটিও ছিল একটি।
পঞ্চম দিনে সাত উইকেট নিয়ে ক্রিজে নামেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। সৌম্য দুইবার লাইফ পেলেও প্রথম ৪০ মিনিট কোন অঘটন ছাড়াই কেটে যায়। এরপর হঠাৎ বোল্টের বরে ¯িøপে ক্যাস প্রাকটিস করিয়ে ২৮ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। ভেঙে যায় ৫৭ রানের জুটি। বাকি সময়ে ছিল আসা-যাওয়ার হিড়িক। এর ভিড়ে আক্রমনাত্মক ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ।
দলপতির ক্যারিয়ারে ১৬তম অর্ধশতকে সম্মান বাঁচানোর লড়াই হয়েছে মাত্র। তবে, ২০৯ রানের মাথায় ওয়েগনারের বলে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে রিয়াদকে (৬৭)। লড়াকু মিঠুন আউট হয়েছেন অর্ধশতক থেকে তিনরান দূরে থেকে হতাশাজনক শটে। লিটন এক রানেই বিদায় নিয়েছেন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। তাইজুল ফিরেছেন খাতা না খুলেই। বোলার মুস্তাফিজের দুই ছক্কায় ১৬ রান পরাজয়ের ক্ষণ বাড়িয়েছে মাত্র। এবাদাতও ফিরেছে শূন্য রানে।
লাঞ্চের সময় বাংলাদেশের হাতে ছিল ২ উইকেট। লাঞ্চে না গিয়ে ১৫ মিনিট বাড়ানো হয়। কিন্তু ৫ মিনিটেই খেলা শেষ! এক ওভারে দুজনকেই তুলে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন ওয়াগনার। ইনিংসে ৫ ও ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে শেষ করেন ওয়াগনার। ইনিংসে ৪টি ও ম্যাচে ৭ উইকেট নেন বোল্ট।
প্রথম ইনিংসে ৬১ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ২১১ রান। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৩২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে কিউইরা। রস টেলরের দ্বিশতকের পাশাপাশি শতক হাঁকান হেনরি নিকোলস।
স্বভাবতই এমন জয়ে মুগ্ধতা আড়াল করতে পারেননি নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। একই কারণে হতাশ পরাজিত বাংলাদেশ দলপতি মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘খুবই হতাশ। আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। এর থেকেও ভালো দল আমরা। পরের টেস্টে আমাদের আরও দ্রæত নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে।’
নিজের ব্যর্থতার সাথে, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান-বোলারদের নৈপুণ্যে ওয়েলিংটনে লড়াই করার মানসিকতাও দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। আড়াই দিনে ২০১.৫ ওভারের ম্যাচে হারের প্রধান কারণও জানালেন মাহমুদুল্লাহ। নিউজিল্যান্ডের ডাবল-সেঞ্চুরিয়ান রস টেইলরের ক্যাচ ফেলা দেয়াটা ম্যাচ হারের কারণ বললেন তিনি, ‘আমি টেইলরের ক্যাচ ফেলেছি, ¯িøপে আরও একটি পড়েছে। ঐ দু’টি ক্যাচ নিতে পারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।’
আড়াই দিনে টেস্ট জিতে দলের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক উইলিয়ামসন। তিনি বলেন, ‘দুর্দান্ত পারফরমেন্স। প্রথম ইনিংসে দ্রæত রান তুলে ম্যাচ জয়ের সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছি। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ভালো বল করেছে। তবে তাদের সাথে ভাগ্য ছিলো না। দলের খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স মুগ্ধ করেছে।’
প্রথম ইনিংসে ডাবল-সেঞ্চুরি তুলে ২০০ রানে আউট হয় নিউজিল্যান্ডের টেইলর। ফলে এই টেস্টের সেরা খেলোয়াড় হন টেইলর। এই সেঞ্চুরি দিয়ে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মার্টিন ক্রোকে টপকে যান টেইলর। এ ব্যাপারে টেইলর বলেন, ‘সে আমার মেন্টর। আমি নিশ্চিত আমার এমন অর্জনে সে খুবই খুশী হবে।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২১১। নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৩২/৬ (ইনিংস ঘোষণা)। বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৬ ওভারে ২০৯ (আগের দিন ৮০/৩) (মিঠুন ৪৭, সৌম্য ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, লিটন ১, তাইজুল ০, মুস্তাফিজ ১৬, আবু জায়েদ ০*, ইবাদত ০; বোল্ট ১৬-৫-৫২-৪, সাউদি ১২-১-৫৭-০, হেনরি ৯-৩-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৫-০-১১-০, ওয়েগনার ১৪-৪-৪৫-৫)। ফল: নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ও ১২ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে। ম্যান অব দা ম্যাচ: রস টেইলর

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন