গুরুতর অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে সিচিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ২ মার্চ অসুস্থ হবার পর দিন সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তার অনুপস্থিতি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কে তা নিয়ে চলছে দল ও দলের বাইরে নানা আলোচনা।
অতীতে অনেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও এবার আলোচনার হিসেবটা একটু ভিন্ন। হিসেব ভিন্ন হবার মূল কারণ দুটি; ১. ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থ্যতার মাত্রা বেশি, স্বাভাবিক অবস্থায় রাজনীতিতে শক্তভাবে ফিরে আসাটা একটু অনিশ্চিত; ২. এবছরের শেষে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাব্যতা। এ দুটি কারণেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা নিয়ে আগ্রহের মাত্রা বেশি। নেতাকর্মীরা মনে করছেন যাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হবে তারই আগামীতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা সরবচেয়ে বেশি।
ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মী দলের এক নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তাদের মতে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক অনুপস্থিত থাকলে দলের এক নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তবে নেতাকর্মীদের অন্য অংশ বলছে, এখনো মাহবুব উল আলম হানিফকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। দুই নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এছাড়া আরেকটি অংশ বলছে, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হবে। এখন পর্যন্ত কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
দলের শেষ অংশের নেতাকর্মীদের মতে, সাধারণত দলের সভাপতিমন্ডলীর একজনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। অতীতের সম্মেলনগুলোতে এমনই হয়েছে। ওবায়দুল কাদের সুস্থ স্বাভাবিক না হলে আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে এবং ড. আব্দুর রাজ্জাকের সাধারণ সম্পাদক হবার সম্ভাবনা বেশি। তাই তাকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র জানায়, ‘এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ঘোষণা আসেনি। দলের সিদ্ধান্ত আসলে তা গণমাধ্যমে জানানো হবে।’ তাই এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। কে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তা নিশ্চিত হবার চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা। আর কেউ দায়িত্ব পালন না করলে কাকে দায়িত্ব দেয়া হবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
এদিকে, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫.(১)-এর (গ) ধারায় বলা হয়েছে, সাধারণ সম্পাদক কার্য উপলক্ষে অনুপস্থিত থাকিলে অনুপস্থিতকালের জন্য তার সমস্ত কার্য ও দায়িত্ব পালনের ভার নামের ক্রমানুসারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ওপর এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকগণ অনুপস্থিত থাকলে তাহাদের দায়িত্ব ক্রমানুসারে বিভাগীয় সম্পাদকদের ওপর ন্যস্ত থাকিবে। এরই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের পদ পদবীর নামের ক্রমানুসারে ৪ জনের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। নামের ক্রমানুসারে-১. যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ২. ডা. দীপু মনি, ৩. জাহাঙ্গির কবির নানক, ৪. আব্দুর রহমান।
তবে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যখন বিদেশ সফরে যান, তখন তিনি নিজেই কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যান। কিন্তু বর্তমানে ওবায়দুল কাদের নিজে অসুস্থ থাকায় তিনি কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যান নি।
গত বছরের ২২ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ভারত সফর করলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে। ওবায়দুল কাদের ওই সময়ে ঢাকা ছাড়ার আগে অন্য নেতাদের সামনে মৌখিকভাবে এ দায়িত্ব দেন তাকে। সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই ওই সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন। তখন দলীয় সভঅপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশের বাইরে সফরে ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাউকে করা হয়েছে কিনা কিংবা কাকে করা হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ইনকিলাবকে বলেন, এ বিষয়ে যথাসময়ে গণমাধ্যমেক অবহিত করা হবে।
সূত্র জানায়, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই চূড়ান্ত। তিনি এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কারো নাম চূড়ান্ত করেননি। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিলেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন