সিরিয়ার গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখন্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করা গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে উপসাগরীয় দেশ সউদী আরব, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত ও ইরান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ইস্যুতে তাদের আগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, পোল্যান্ড ও বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতিতে তারা জানান, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে তারা, যেটি ১৯৬৭ সালে দখল করেছিল ইসরাইল। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। চীন, রাশিয়া, কানাডা ও লেবাননও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্ব স্বীকার করে না তারা। এদিকে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সিরিয়ার জনগণ। বিভিন্ন দেশে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে তারা। এদিকে, অধিকৃত গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি বিষোদগার করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান। ট্রাম্পকে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, কার ভূমি তুমি কাকে দিচ্ছ, ট্রাম্প? জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী এই জমি তো সিরিয়ার। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে ইস্তাম্বুলে র্যালি শেষে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন এরদোগান। তিনি বলেন, গোলান মালভূমি ইসরাইলের বলে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই স্বীকৃতি দেয়ার আগে শুক্রবার ওআইসির এক জরুরি সভায় যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেন এরদোগান। তিনি বলেন, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের দখলদারিত্ব তুরস্ক কোনো দিনই মেনে নেবে না। তুরস্ক প্রেসিডেন্ট বলেন, ৯ এপ্রিল ইসরাইলের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গোলানকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফের ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেয়া হলো। যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র রাষ্ট্র যে কিনা গোলানকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দিল। গোটা বিশ্ব এটিকে দখলীকৃত ভূমি হিসেবেই জানে। প্রসঙ্গত, সোমবার ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে গোলান মালভূমি ইসরাইলের ভূখন্ড এ ঘোষণাপত্রে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল এ জায়গাটি সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র জেনেছে গোলান ইসরাইলের সার্বভৌম। আর এ কারণেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ৫২ বছর পর গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বে স্বীকৃতি দেয়ার সময় এটিই। মালভূমিতে বর্তমানে ২০ হাজার অবৈধ দখলদার বসবাস করছেন। কাজেই এ দখলদারিত্ব কখনই আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় স্বীকৃতি দিতে পারে না। এদিকে ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনা ও নিন্দা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ রয়েছে। ১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। আনাদোলু, রয়টার্স, বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন