বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বর্ষবরণ আয়োজনে সেজেছে সারা দেশ

এসো হে বৈশাখ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়....। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতার মতোই নতুনের জয়গান নিয়ে বছরঘুরে আবার এসেছে পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। পুরনো দিনের দুঃখ, গ্লানি, হতাশা দূর করে আসবে নতুন ভোর। যে ভোরে উদিত হবে নতুন সূর্য। কালবৈশাখী ঝড়ঝঞ্ঝা সব উপেক্ষা করে এক নতুনের শুভবারতা নিয়ে এসেছে বৈশাখ। নব উদ্যমে সাজবে পৃথিবী, এটাই সবার প্রত্যাশা।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট তার বাণীতে বলেছেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ উৎসব সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালির আত্মপরিচয় এবং জাতিসত্তা বিকাশের শেকড়। তিনি তার বাণীতে অতীতের গ্লানি, দুঃখ, জরা মুছে; অসুন্দর ও অশুভ পেছনে ফেলে নতুন কেতন উড়িয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ জাতীয় জীবনে আরো সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক- এ প্রত্যাশা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা অতীতের গ্লানি ভুলে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে আশায় বুক বাঁধি। দেনা-পাওনা চুকিয়ে নতুন করে শুরু হয় জীবনের জয় গান। পয়লা বৈশাখ তাই যুগ যুগ ধরে বাঙালির মননে-মানসে শুধু বিনোদনের উৎস নয়, বৈষয়িক বিষয়েরও আধার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা নববর্ষ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বাঙালি জনগোষ্ঠী বর্ষবরণ উৎসবকে ধারণ করেছে তাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন। তিনি তার বাণীতে নববর্ষের নতুন আলোতে দেশের সকল মানুষের সুখ ও শান্তি কামনা করেন।
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে মানুষের মনে বইছে আনন্দের ফল্গুধারা। নতুন দিনের আলোয় আজ সবাই দিনভর মেতে থাকবে উৎসব-আনন্দে। সর্বস্তরের মানুষ হৃদয়ের টানে মিলিত হবে এ উৎসবে। তাতে থাকবে না কোনো ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ, থাকবে না ধনী-গরিবের বৈষম্য।
নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নানা বয়সের মানুষ উৎসবের আলোয় রঙিন হয়ে উঠবে। পোশাক-পরিচ্ছদ, খানাপিনা, গানবাদ্যসহ সব কিছুতে থাকবে বাঙালিয়ানার প্রাধান্য। দিনভর ঘোরাঘুরি, আড্ডা, আমন্ত্রণ ও তুমুল উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে তারুণ্য। যান্ত্রিক শহর ঢাকার মানুষ সাতসকালেই ঘর থেকে বের হবে। নারীরা পরবে লাল-সাদা শাড়ি, ছেলেদের পরনে থাকবে রঙ- বেরঙের পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ বৈশাখের সাজসজ্জা। মা-বাবার সঙ্গে বেরিয়ে পড়বে শিশু-কিশোরের দল। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসবে নানা সাংস্কৃতিক উৎসব। মানুষ দলবেঁধে তাতে অংশ নেবে।
প্রতি বছরের মতো এবারো রমনার বটমূলে ছায়ানটের গানে গানে আর চারুকলা থেকে বের হওয়া নববর্ষের শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালি বরণ করবে নতুন বছরকে। সে আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন চূড়ান্ত করেছেন। তৈরি হয়েছে বিভিন্ন স্ট্রাকচার। এ ছাড়াও মুখোশ, চিত্রকর্ম, মাটির তৈরি সরা, পুতুল, মাছ, পাখি, সূর্যসহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়েছে। এবারে মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজের দায়িত্বে আছে চারুকলার ২১তম ব্যাচ। জয়নুল গ্যালারিতে শিক্ষার্থীদের তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। চারুকলায় আগত দর্শনার্থীরাও পছন্দমতো সেগুলো কিনছেন।
আয়োজকরা জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরোভাগে থাকবে মহিষ, পাখি ও ছানা, হাতি, মাছ, বক, জাল ও জেলে, ট্যাপা পুতুল, মা ও শিশু এবং গরুর আটটি শিল্প কাঠামো। এ ছাড়া রয়েছে পেইন্টিং, মাটির তৈরি সরা, মুখোশ, রাজা-রানীর মুখোশ, সূর্য, ভট, লকেট ইত্যাদি
সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে বের হবে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বর্ণিল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে।’ ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে ‘মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মেলা, পান্তা ভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে।
ঢাকায় পয়লা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠান। ভোরে সূর্যোদয়ের পরপরই ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানাবে। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুরু।
ছায়ানট ছাড়াও আরো অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর নানান আয়োজনে নববর্ষ বরণ করবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও থাকবে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Md Jalal Uddin ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
আসুন! আমরা পহেলা বৈশাখে বিগত এক বছরের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় জীবেনর ব্যর্থতা, ভুল-ত্রুটি এবং অতৃপ্তির জায়গাগুলো রিভিউ করি। এবং আগামী এক বছরের জন্য ব্যক্তি, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা, অভিপ্রায় গ্রহণ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোক। আমিন।
Total Reply(0)
Jashim Uddin ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
আমাদের ধর্ম, জাতি-গোষ্ঠী ও ভৌগলিক পার্থক্য সত্ত্বেও বাঙালি হিসেবে কিছু না কিছু কমন সংস্কৃতি রয়েছে, সেগুলি আসলে কী? ধম-বর্ণ নিবিশেষে আমাদের বাঙালি জীবন-যাপনের সঙ্গে বাঁশ, কাঠ, রশি, ছন, খড়, ইট, পাথরের ঘরবাড়ি; লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, শাড়ি ইত্যাদির গ্রামীণ পোশাক-পরিচ্ছেদ; স্থানভেদে রেশম শিল্প, চা শিল্প, রাবার শিল্প, তামাক শিল্প ও তাঁত শিল্প, কৃষিকাজসহ গ্রামীণ বিভিন্ন পেশা; গ্রামীণ আড্ডা, জারি সারি, মুর্শিদি, কবিগান, পালাগান, যাত্রাভিনয়ের মাধ্যমে চিত্তবিনোদন; গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু, কানামাছি, কড়ি, ডাংগুলি, লাঠি, মোরগ ও ষাঁড়ের লড়াইয়ের খেলাধুলা; নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের যোগাযোগ ব্যবস্থা; ব্যবসায়ীদের হালখাতা, এবং যৌথ পরিবার ব্যবস্থা।
Total Reply(0)
Kabil Hosen Kabil ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৯ এএম says : 0
পহেলা বৈশাখে এসব বিষয়ের ওপর সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, মঞ্চ নাটক, প্রদর্শনীর আয়োজনের মাধ্যমে গ্রামীণ আবাহমান সংস্কৃতি তুলে ধরা যেতেই পারে। এছাড়া বৈশাখি মেলায় চেয়ার, টেবিল, চৌপায়া, ব্যালন, পিঁড়ি, রেহেল, লাঠি, ইঁদুর ধরার ফাঁদ, কুলা, নারকেল কোরানি, পুতুল, গাঁইল, চেগাইট, খড়ম, বাঁশের বাঁশি, পাউডি, ডাল ঘুটনি, ঘুড়ির নাটাই, মাটির তৈরি রকমারি জিনিস, খেলনা, মুড়ি, মণ্ডা, মিঠাই, জিলাপি, বাতাসা, তিলের খাজা, তেজপাতা ইত্যাদির বিক্রয় ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে।
Total Reply(0)
Monsur Rahman ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৯ এএম says : 0
বাঙালি হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষি জাতির চেয়ে যেমন আমাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি রয়েছে, তেমনই আমাদের বাঙালিদের মধ্যে ধর্মীয় ও ভৌগলিক কারণে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। সঙ্গত কারণেই বাঙালির সার্বজনীন সংস্কৃতিকে নির্দিষ্ট করতে হলে অবশ্যই তা সচেতনতা, গ্রহণযোগ্য ইতিহাস-ঐতিহ্যের মাধ্যমে হতে হবে। তাই আমরা যেমন বাঙালি বলে যেমন হিন্দুদের ওপর মুসলিমদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে পারি না, তেমনি মুসলিমদের ওপর হিন্দুদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারোর নেই। আবার ভৌগলিক অবস্থান ভেদে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও সাংস্কৃতিক বিভেদ রয়েছে; যা কেও অস্বীকার করতে পারবেন না। অন্যদিকে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বাংলাবর্ষ নিয়ে একদিনের হেরফের আছে। বাংলাদেশের নববর্ষের পালনের পরের দিন পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ পালিত হয়, যা মোটেই ভালো দেখায় না।
Total Reply(0)
Nurul Kabir ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
কিন্তু দু:খজনক বিষয় হলো দিনদিন সার্বজনীন বাঙালি সংস্কৃতির নামে এ বিশেষ উৎসবে নানাভাবে অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জায়গা করে নিয়েছে; যা একদিকে যেমন সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা তৈরি করছে। তেমনই কলঙ্কজনকভাবে প্রকাশ্যে জনতার ভিড়ে গণহারে মা-বোনেদের বস্ত্রহনন-শ্লীলতাহানির সুযোগ করে দিচ্ছে। আর এসব সম্ভব হচ্ছে নারী-পুরুষের অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত মেলামেশার কারণে। যা নারী-পুরুষের মাঝে ভালোবাসা-সুন্দর্যের পরিবেশকে যৌন আক্রমণ-বিভেদ চর্চায় রূপান্তরিত করছে।
Total Reply(0)
Nurul Kabir ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
শুভ নববর্ষ ১৪২৬
Total Reply(0)
ক্রাশ মন্ত্রণালয়'র সচিব ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
বেকারত্ব ই মূল কারণ! অলস মস্তিষ্ক কাজে লাগাতে হবে দ্রুত
Total Reply(0)
Mohiuddin Bhuiyan ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
মানুঘ কি হয়ে যাচ্ছে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন