চার
ইসলাম ধর্মে আল্লাহ্র ধারণা ঃ ইসলাম ধর্মকে জগতের শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ধর্মের প্রবর্তক স্বয়ং আল্লাহ্। আল্লাহ্ পাক যুগে যুগে নবী-রাসূলদের মাধ্যমে সেই সময়ের এবং স্থানের প্রেক্ষিতে ইসলামের বিধান রূপ হিদায়াতকে ক্রমান্বয়ে নাযিল করে তা সম্পূর্ণ করেছেন সর্বশেষ গ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণের মাধ্যমে। “সূরা- আয়াত ৩৮; সূরা-৫, আয়াত ৩”।
সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে, কুরআনে আল্লাহ্র একত্বের যে বর্ণনা দেওয়া পেশ করা হয়েছে সেটাই ইসলামী ধারণা। তবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্র একত্বের যে বর্ণনা দেওয়া -------
হয়েছে তা নির্দিষ্ট এক জায়গায় নয়। এই বর্ণনা এসেছে বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াতে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে। এর মধ্যে সূরা ইখলাসে বর্ণিত আল্লাহ্ সম্পর্কিত যে ধারণা তথা পরিচয় পেশ করা হয়েছে তা সংক্ষিপ্ত হলেও পূর্ণাঙ্গ বলো যেতে পারে। উক্ত সূরায় আল্লাহ্র ধারণা তথা পরিচয় দিতে যেয়ে বলা হচ্ছে যে, “বল, আল্লাহ্ এক, অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ অন্য নিরপেক্ষ। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তিনি নিজেও জাত নন। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, তিনি তুলনাহীন”। “সূরা-১১২”
উক্ত আয়াতে আল্লাহ্র একত্ববাদের ধারণাই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তাছাড়া আল্লাহ্ সম্পর্কিত ধারণার সংক্ষিপ্ত হলেও একটি পরিস্কার পরিচয় পাওয়া যায় ‘কালেমা তাওহীদ’ বা ইসলামের সাক্ষ্য ঘোষণায় (ষ্টেটমেন্ট অব টেষ্টিমনি) ‘আল্লাহ্ ব্যতীত কোন প্রভু নেই, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ্র রাসূল’ এই উক্তি বা কালেমার মধ্যে সুষ্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ ছাড়া সমগ্র বিশ্বে আর কোন মাবুদ বা প্রভু নেই; তিনি ব্যতীত এমন কোন সত্তা নেই যাকে প্রভুর সমকক্ষ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। আবদুল জলিল মিয়া “তাওহীদের তাৎপর্য” দর্শন ও প্রগতি, প্রথম সংখ্যা, ডিসেম্বর-১৯৮৪, ঢাকা: পৃ. ১২৯”। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ্র একত্বের ধারণা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে। এদের মধ্যে সবগুলো উল্লেখ করা সম্ভব নয় বিধায় এ সম্পর্কে আর একটি মাত্র তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ধৃতির উল্লেখ করা হলো ঃ “আল্লাহ্, তিনি ছাড়া আর কোন প্রভু নেই। তিনি চিরজীবন্ত, স্বলালিত ও পরিচালিত এবং চিরন্তন। আকাশ ও জমিনের সমস্ত জিনিসি কেবল তাঁরই। সমগ্র আকাশ-পৃথিবীব্যাপী তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব এবং এসব তত্ত¡াবধান ও সংরক্ষণ করতে তিনি ক্লান্তিবোধ করেন না। কেননা তিনি হচ্ছেন সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ট।” সূরা ২, আয়াত-২২৫”।
উপরের আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলামে আল্লাহ্র যে ধারণা পেশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ একত্ববাদের (গড়হড়ঃযবরংস) ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। ধর্মে আল্লাহ্র ধারণা বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এখন খ্রীষ্টান ধর্মে আল্লাহ্ সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায় তা আলোচনা করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, বিশ্বের গোটা মানব সমাজের মধ্যে খ্রীষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা কম নয়। হযরত ঈসা (আ) কর্তৃক প্রচারিত আল্লহ্র একত্ববাদের ধর্ম “সূরা-৩ আয়াত-৫০-৫২”।
পরবর্তীকালে খ্রীষ্ট ধর্ম নামে পরিচতি লাভ করে। “নূর নবী, আল্লাহ্তত্ত¡ (গ্রীন বুক হাউস লিমিটেড, ঢাকা : ১৯৮১). পৃ. ৭”।
পবিত্র কুরআন থেকে জানা যায় যে, হযরত ঈসা (আ) ছিরেন আল্লাহ্র একজন সম্মানিত রাসূল এবং তাঁকে পাঠানো হয়েছিল পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের কিতাবের সত্যতার নিদর্শন রূপে। “সূরা-৩, আয়াত ৫০”।
“এবং আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন পয়গাম্বর পাঠিয়েছি, যিনি এই বলে আহ্বান জানিয়েছেন, এক আল্লাহ্র বন্দেগী কর এবং খোদাদ্রোহীদের আনুগত্য থেকে দূর থাক। ” সূরা-১৬, আয়াত ৩৬”।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ঈসা (আ)- এর প্রথামিক যুগের অনুসারীরা ঈসা (আ)-এর শিক্ষার পুরোটাই অনুসরণ করে চলতো। তাঁরা ঈসা (আ)-কে শুধু একজন নবী বলেই মানতো; তাঁরা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল এ্ং মুসা (আ)-এর শরীয়তের অনুসারী ছিল। আকীদাহ-বিশ্বাস, হুকুম-আহকাম ও ইবাদত বন্দেগীর ব্যাপারে তারা অন্যান্য (ইসরাইলী) ইয়াহুদীদের থেকে কিছুতেই পৃথক মনে করতো না। প্রসঙ্গে ড. মরিস বুকাইলী তাঁর ‘বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামক গ্রন্থে কার্ডিনাল ডানিয়েলুর গবেষণার যে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন সেটি হলো ঃ যীশুখীষ্টের অন্তর্ধানের পর তাঁর---
‘প্রেরিতদের একটি ক্ষুদ্র দল’ এমন একটি স¤প্রদায় গঠন করলেন-যারা ইয়াহুদী মন্দিরের উপাসনার পদ্ধতির প্রতি ছিলেন একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত।” কিন্তুু পরবর্তীকালে তারা হযরত ঈসা (আ) কর্তৃক প্রচারিত তৌহিদের মর্মবাণীকে বিকৃত করে এক আল্লাহ্র পরিবর্তে আল্লাহকে ত্রি-ধা বিভক্ত করে। “সূরা-৪, আয়াত ১৭১”।
বর্তমান খ্রীষ্ট সমাজ যে তাদের মূলধর্মকে বিকৃত করে তৌহিদের মর্মবাণী থেকে নিজেদেরকে শিরকবাদে পর্যবাষিত করেছে তা আধুনিক নান গবেষক প্রমাণ কতে সমর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে ড. মরিস বুকাইলী খৃষ্ট ধর্মের উপর যে ব্যাপক অনুসন্ধান কাজ চালিয়েছেন তাতে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, বর্তমান খ্রীষ্টানরা যে চারটি সুসমাচারকে যিশুর সময় রচনা করা হয়েছে বলে দাবী করেন তা সত্য নয়। সেগুলোর রচয়িতাগণের মধ্যে একজনও যিশুর সাহাবী ছিলেন না। বরং বর্তমান খ্রীষ্টান সমাজে প্রচলিত যে চারটি সু-সমাচার রয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মানুষের মনগড়া কথায় তথা শিরকবাদে ভরপুর। উক্ত গ্রন্থসমূহের রচয়িতাগণের যিনি পৃষ্ঠপোষক, তিনি ছিলেন (পৌল বা সেন্টপল) খোদ যিশুখ্রীষ্টের পরিবারের সদস্যদের নিকট বিশ্বাসঘাতক এবং যার সাথে যিশুর কোনদিনই সাক্ষাৎ ঘটেনি। “ড. মরিস বুকাইলি, বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান, পৃ. ৮৮”।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন