শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

আল্লাহ্র অস্তিত্ব : আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন তত্ত্ব

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

সাত

অনুরূপভাবে কেউ কেউ আল্লাহ্কে পিতৃরূপ কল্পনা করে তাঁর নাম দিয়েছে শিব, মহাদেব, নারায়ণ ইত্যাদি। আদতে আল্লাহ্র পরিবর্তে এই নামগুলোর সবই তাদের মনগড়া বৈ আর কিছুই নয়। “সুশান্ত ভট্রাচার্য, বেদ-পূরাণে আল্লাহ্ ও হযরত মুহাম্মদ (সা), পৃ. ৭৯”।
সুতরাং একথা পরিস্কার যে, পবিত্র বেদের মূল আহ্বানই ছিল একত্ববাদের দিকে।
পৃথিবীর প্রাচীন ধর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম অন্যতম। এই ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে গৌতম বুদ্ধের নাম করা হয়। এই ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ হচ্ছে ত্রিপিটক। সাধারণভাবে বলা হয় এই ধর্ম নিরীশ্বরবাদী।“ নূর নবী, আল্লাহতত্ত¡, পৃ. ৯”। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়, আর তা হলো, ধর্মে অবশ্যই অতীন্দ্রিয় ও অদৃশ্য শক্তিতে বিশ্বাস থাকতে হবে। কিন্তু কোন ধর্মে যদি অতীন্দিয় ও অদৃশ্য বিশ্বাসের কথা না থাকে অর্থাৎ সেই ধর্ম যদি নিরীশ্ববাদী হয় তাহলে সেটি কি কোন ধর্ম পদবাচ্য? “সাইয়েদ আবুল হাই, দর্শন ও মনোবিদ্যা পরিভাষা কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড), (বাংলা একাডেমী ঃ ঢাকা, ১৯৮৬), পৃ. ৮৬০”।
প্রকৃতভাবে ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে যে নিরীশ্বরবাদের কথা বলা হয়ে থাকে মনে হয় তা যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা বৌদ্ধধর্ম সুপ্রাচীন ধর্মের মধ্যে অন্যতম একটি ধর্ম। এই ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে যার নাম করা হয় অর্থাৎ বুদ্ধ ছিলেন মূলত দুনিয়ার প্রখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে একজন। তাঁর সম্পর্কে এ অনুমান করা হয় যে, সম্ভবত তিনিও নবী ছিলেন। “সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী, সীরাতে সরওয়ারে আলম (দ্বিতীয় খণ্ড), পৃ. ২১৪”।
তবে অনেকের মতে, তাঁর আনীত ধর্মকে নিরীশ্বরবাদী বলার কারণ এই হতে পারে যে, তিনি ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বেদকে অস্বীকার করতেন এবং সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নির্বাক থাকতেন। অবশ্য মানুষে মানুষে যে শ্রেণী বিভেদ করা হত বুদ্ধ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। বুদ্ধ মনে করতেন যে, সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ও দেবতাদের পূজা অর্চনার মাধ্যমে মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়, মুক্তি নিহিত তার নৈতিকতার উন্নতি সাধনের মধ্যেই। “সাইয়েদ আব্দুল হাই, দর্শন ও মনোবিদ্যা পরিভাষা কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড), পৃ. ১০-১০৯”।
যারাথুস্ত্রা কর্তৃক প্রচারিত যারাথুস্ত্রাবাদ একটি সুপ্রাচীন ধর্ম। এ মূল গ্রন্থ আবেস্তা মূল ভাষায় এখন আর বিদ্যমান নেই। “প্রাগুক্ত”। যদিও বলা হয়ে থাকে যে যারাথুস্ত্রাবাদের মূল তত্ত¡ হলো সৎ ও অসৎ এর দ্ব›দ্ব। অর্থাৎ এই ধর্মকে দ্বৈতবাদী বলা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে এই ধর্মও যে ছিল একত্ববাদের উপর প্রতিষ্ঠিত তা হাউগ (ঐধঁম) প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। হাউগের মতে, “যারাথুস্ত্রা সৎ ও অসৎ নামক নীতি দু’টিকে কার্যত পরস্পর বিরোধী মনে করতেন না; বরং তাঁর মতে এ দু’টি হলো একই প্রাথমিক সত্তার দুই অংশ বা দুই দিক।” “এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, সাইযেদ আবুল হাই, দর্শন ও মনোবিদ্যা পরিভাষা কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড), পৃ. ১১৭০-১১৭৬; মুহাম্মদ ইকবাল, প্রজ্ঞান চর্চায় ইরান, অনুবাদক- কামালউদ্দিন খান (পূর্ব পাকিস্তান ইকবাল একাডেমী, ঢাকা : ১৩৭২ বাংলা) পৃ. ১-৬”।
এটি আংশিক চীনা ও জাপানীদের ধর্মমত। কনফুসিয়াস (৫৫১-৪৭৯ খৃ. পূ.) একজন শাসক ও ধর্ম প্রচারক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ধর্মমত কনফুসীয় মতবাদ নামে খ্যাত। অতি
প্রাচীন ধর্ম হওয়ায় যদিও এ ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছু জানা যায় না, তবুও অনেক গবেষক মনে করেন, পৌত্তলিকতা পরিবর্তে রাজার উপাসনাই এ ধর্মের মর্মবাণী। “নূর নবী, আল্লাহ্তত্ত¡, পৃ. ১০”। কিন্তু মাইকেল এইচ. হার্ট “বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী” নামক গ্রন্থে কনফুসীয় মতবাদের প্রবক্তা কনফুসিয়াস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে দেখান যে, কনফুসিয়াস এক ঈশ্বরের প্রতিই মানুষকে আহবান জানিয়েছিলেন। “কনফূসীয় মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মাইকেল এইচ. হার্ট, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী, সংকলক- মোঃ হুমায়ুন কবীর (সোলেমানিয়া বুক হাউস, বাংলা বাজার, ঢাকা: ২০০১), পৃ. ৩৬২-৩৬৮”।
উপরে পৃথিবীর পাঁচটি বড় বড় ধর্মে আল্লাহ সম্পর্কিত ধারণার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হয়েছে এসব ধর্মের আলোচনা থেকে একটি বিষয় পরিস্কার, আর তা হলো, আদিতে প্রত্যেকটি ধর্মই ছিল মূলত তৌহিদবাদী যদিও কালের পরির্তনে একমাত্র ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মগুলোতে দ্বিত্ববাদী ও বহুত্ববাদী চিন্তার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
পূর্বেই উল্লেক করা হয়েছে যে, মানুষের মধ্যে কোন না কোনভাবেই আল্লাহতে বিশ্বাস রয়েছে। তবে দর্শন ও ধর্মতত্তে¡র ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যারা আল্লাহ্তে বিশ্বাস করেন এমন লোকদের মধ্যেও আল্লাহ্র স্বরূপ, শক্তি, সংখ্যা ও গুণাগুণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আল্লাহ্ সম্পর্কিত মতামতের এ বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য মোটামোটিভাবে ফুটে উঠেছে অনেকেশ্বরবাদ, দ্বি- ঈশ্বরবাদ ও একেশ্বরবাদ- এ তিনটি মতবাদে। “বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, Cunningham G. Watts, Problems of Philosophy (Now Delhi: Discovery Publishing House, 1993), Chapter-XXV.”।
নিম্নে এ তিনটি মতবাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং এ প্রসঙ্গে কুরআনের বক্তব্য উল্লেখ করা হলো ঃ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন