শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

আল্লাহ্র অস্তিত্ব : আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন তত্ত¡

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

তের

কেননা কুরআন এখন থেকে দেড় হাজার বৎসর পূর্বে নাযিল হয়েছে, আর বিজ্ঞান প্রাকৃতিক জগতের ব্যাখ্যা দিচ্ছে- যা কুরআনের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে তা মাত্র একশত বৎসর পূর্বেই প্রমাণ। তবে এখানে একটি বিষয় প্রথমেই উল্লেখ করা প্রয়োজন আর তা হচ্ছে, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত¡ ও তথ্য সম্বলিত কুরআনের বাণী সংখ্যায় সুপ্রচুর। এত ছোট পরিসরে তার সবটুকু কেন সামান্য অংশও উল্লেখ করা মুশকিল। এখানে সংক্ষেপে মাত্র তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করা হলো ঃ
প্রথমত, পানির প্রসঙ্গটি উল্লেখযোগ্য। কুরআনের দু’টি জায়গায় পানির একটি বিশেষ নীতি প্রকৃতির বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, “তিনিই দুই দরিয়াকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটির পানি মিষ্টি, সুপেয় এবং অপরটির পানি লোনা, খর- উভয়ের মধ্যে তিনি রেখে দিয়েছেন এক অন্তরাল, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।” “সূরা ২৫, আয়াত ৫৩”।
অন্য জায়গায়, “তিনি প্রবাহিত করেন দুই দরিয়া যারা পরষ্পর মিলিত হয়, কিন্তু ওদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা ওরা অতিক্রম করতে পারে না। “সূরা ৫৫, আয়াত ১৯-২০”।
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে পানির যে বহিঃপ্রকাশের উল্লেখ করা হয়েছে তা প্রাচীনতম যুগ থেকে মানুষের জানা থাকলেও এই ঘটনা প্রকৃতির কোন নিয়মের অধীনে ঘটে চলছে তার কারণ অতি স¤প্রতি জানা গেছে। আধুনিক পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, তরল পদার্থের মধ্যে পৃষ্ট প্রসারণ (ঝঁৎভধপব ঞবহংরড়হ)-এর একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে এবং এই নিয়মই উভয় প্রকার পানিকে পৃথক রাখে। উক্ত আয়াতদ্বয়ে যে বরযাখ বা অন্তরাল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কৃত পৃষ্ঠ প্রসারণ (ঝঁৎভধপব ঞবহংরড়হ)-এর দিকেই ইংগিত করছে। “ড. ওয়াহীদুদ্দীন খান, আধুনিক চিন্তাধারা বনাম ধর্ম, পৃ. ১৫৯”।
দ্বিতীয়ত, রাত ও দিনের আবর্তন সংক্রান্ত প্রসংঙ্গটি উল্লেখ করা যায়। কুরআনে বলা হচ্ছে, “তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে ওদের একটি অন্যটিকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে।” “সূরা ৭, আয়াত ৫৬৪”।
এই আয়াতে রাত ও দিনের বাহ্যিক আগমন-নির্গমনের কথা বলা হলেও পৃথিবীর আপন কক্ষপথে পরিভ্রমনের একটি অতি সুন্দর ইঙ্গিত রয়েছে। যা আধুনিক পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে। এ প্রসঙ্গে রাশিয়ার প্রথম মহাশূণ্য ভ্রমণকারীর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা যায়। আর তা হলো, তিনি মহাশূণ্য থেকে পৃথিবীতে এই রূপে দেখেছেন যে, সূর্যের সম্মুখে আপন অক্ষের উপর আবর্তিত হওয়ার কারণে তার উপর আলো ও আঁধারের আগমন নির্গমনের একটি দ্রুত ধারাবহ (জবঢ়রফ ঝঁপপবংংরড়হ) অব্যাহত রয়েছে। “ড. ওয়াহীদুদ্দীন খান, আধুনিক চিন্তাধারা বনাম ধর্ম, পৃ. ১৬১। আরো দেখুন, ড. মরিস বুকাইলি, বাইবেল”।
তৃতীয়ত, মহাশূণ্য বিজয়ের কথা বলা যায়। কুরআনে বলা হচ্ছে, ‘হে জ্বীন ও মানব মণ্ডলী, যদি তোমরা প্রবেশ করতে পার আসমান ও যমিনের এলাকায়, তাহলে তাতে প্রবেশ কর। তোমরা এতে প্রবেশ করতে পারবে না মহাক্ষমতা ব্যতিরেকে।’ “সূরা ৫৫, আয়াত ৩৩”।
উপরোক্ত আয়াতে যে শর্তেÍ (যদি) কথা বলা হয়েছে তা অর্জিত হতে পারে এমন কথা বোঝাচ্ছে। কেননা ‘যদি’ বুঝাতে আরবীতে ‘ইজা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে তা অর্জন করা সম্ভব নয় বোঝায়। উপরোক্ত আয়াতে ‘ইন’ শব্দটি দ্বারা এমন এক যদির ধারণা দেওয়া হয়েছে যা অর্জনযোগ্য। এ প্রসঙ্গে ড. মরিস বুকাইলী বলেন,
“মহাশূন্য বিজয়ের কর্মসূচীতে এই মানুষেরা যে মহাক্ষমতার (সুলতান) বলে সাফল্য অর্জন করবে, ধারণা করা যেতে পারে যে, সেই ক্ষমতা আসবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র তরফ থেকে।” “ড. মরিস বুকাইলি, বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান, পৃ. ২৬৯”।
কুরআনে বর্ণিত অসংখ্যা বিজ্ঞান ভিত্তিক আয়াতের মধ্যে এখানে মাত্র দু’একটি আয়াত পেশ করা হলো যা প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। যদি আল্লাহ্ বলে সত্তা না থাকেন তাহলে একন থেকে দেড় হাজার বৎসর পূর্বে সম্পূর্ণ অক্ষর জ্ঞানহীন একজন মানুষের দ্বারা এমন বক্তব্য পেশ করা আদৌ সম্ভব নয়। আল্লাহ্র অস্তিত্বের প্রমাণকে ‘জাগতিক অভিজ্ঞতা ভিত্তিক প্রমাণ’, ‘উদ্দেশ্যমূলক প্রমাণ’, ‘আত্মিক চেতনা ভিত্তিক প্রমাণ’ এবং ‘প্রত্যাদেশ ভিত্তিক’ প্রমাণে বিভক্ত করে দেখানো যেতে পারে। এখন কুরআনের আলোকে উপরোক্ত শিরোনামে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ বর্ণনা করা হচ্ছে।
সৃষ্টি জগতের দিকে তাকালে পরিস্কার বোঝা যায় এই জগৎ আল্লাহ্র স্বাক্ষ্য দিচ্ছে। এই জগতে বিদ্যমান এমন একটি বস্তুও নেই যা নিজ থেকেই বিদ্যমান। প্রতিটি ক্ষুদ্র-বৃহৎ বস্তুর পিছনে একজন নির্মাতা অবশ্যই আছে। এর এটা একটা বাস্তবিকই অর্থহীন কথা যে, সৃষ্টিকে স্বীকার করা হবে কিন্তু স্রষ্টাকে স্বীকার করা
হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন