শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নেতৃত্বের অভাবে মানুষ পথে নামছে না

ঢাকা ফোরামের গোলটেবিল বৈঠক, ব্যর্থ স্বাধীনতা সবার জন্য কলঙ্ক : ব্যারিস্টার মইনুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দেশে বিরোধী দলের রাজনীতিকদের ব্যর্থতার কারণেই ভোটের অধিকার হারানো মানুষ রাজপথে নামছে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এম হাফিজ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি কুলসিত হতে হতে সর্বশেষ পর্যায়ে চলে গেছে। গণতন্ত্রের প্রথম যে শর্ত সেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এখন আর দেশে নেই। গণতন্ত্রের এ সংকট থেকে মুক্তি পেতে গণআন্দোলন প্রয়োজন। গণআন্দোলনের প্রয়োজন, কিন্তু নের্তৃত্বে ব্যর্থতায় মানুষ বাধ্য হয়ে ঘরে বসে রয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দি ঢাকা ফোরাম’ আয়োজিত গণতন্ত্র ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বলেন, ব্যর্থ স্বাধীনতা সবার জন্যই কলঙ্ক। জেলখানায় বসে ভোট ডাকাতির খবর শুনেছি। ১৭ কোটি মানুষকে ভীতির মধ্যে রেখে দেশে চলছে এখন মুষ্টিমেয় সুবিধাবাদীর সরকার। তাদের কাছে মিথ্যাই সত্য, দুর্নীতিই সততা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বেম গোলটেবিল বৈঠকে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, স্বাধীন দেশের সরকার হবে জনগণের অধিকার রক্ষার সুশাসন। নির্বাচন হবে বৈধতার ভিত্তিতে। কিন্তু জেলে থেকে আমাকে শুনতে হলো ভোট ডাকাতির কাহিনী। দেশে ভোটের রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে। ভোট ডাকাতি করতে পুলিশি শক্তির অপব্যবহার করা হয়েছে। জনগণ এখন প্রশাসনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। ১৭ কোটি মানুষ অন্যায় অবিচারের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। দেশের রাষ্ট্রীয় শক্তির ভয়ভীতির আতঙ্কে আমরা রয়েছি। ভোটাধিকারের দাবি নাগরিকত্বের দাবি। ভোটাধিকার রক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতা দলীয় রাজনীতির ব্যর্থতা নয়, আমাদের স্বাধীনতার ব্যর্থতা। স্বাধীনতার অর্থ স্বাধীনভাবে সরকার গঠনের স্বাধীনতা, দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার। স্বাধীনতা জনগণের সরকারের নয়। সরকারের থাকতে হবে জনগণের প্রতি দায়িত্ব্ পালনের দায়বদ্ধতা। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোট নড়বড়ে অবস্থায় বিচার ব্যবস্থাকে কোনোভাবে ধরে রেখেছে। নিম্ন আদালতের জজ-বিচারকদের চাপের মুখে রাখতে সরকারের অসুবিধা হচ্ছে না। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব নিজেই অহরহ ফোন করেন জজ-ম্যাজিস্টেটদের কারণীয় নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। জনগণের সুবিচার পাবার অহয়াত্বের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে। অপরদিকে আইনমন্ত্রী বলছেন বিচার বিভাগ স্বাধীন বলেই দুর্নীতিপরায়ণরা পার পাচ্ছে। সরকার এতো সাধু হলে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকতে হতো না। পুলিশি মামলা দিতে সরকারকে আইনের কথা ভাবতে হয় না। সরকারই আইন। জামিন না পেলেই লক্ষ্য হাসিল। তিনি বলেন, ভয়-ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা আতঙ্কের মধ্যে জনসমস্টিকে রাখা স্বাধীনতা নয়। দেশে চলছে মুষ্টিমেয় সুবিধাবাদীদের সরকার। সরকার পরিচালনায় সেই গোষ্ঠীই প্রভাবশালী যারাই জনগণকে নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করতে সাহায্য করছে। তাদের কাছে মিথ্যাই সত্য, দুর্নীতিই সততা। তাদের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। জিডিপি কেন্দ্রীক উন্নয়নের বড় বড় দাবির সমর্থনে তথ্য প্রকাশে সরকারের অস্বীকৃতি বোধগম্য। তিনি বলেন, জনগনের ভোট হরন করে যে সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে হয় সে সরকারের ব্যর্থতার কথা, গণ-ভীতির কথা অন্যদের বলতে হয় না। জনগণের ভোটাধিকার অস্বীকার করাই সরকারের চরম ব্যর্থতার স্বীকৃতি।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, দেশে ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তা কলংকজনক নির্বাচন। ডাকসুতেও একই কায়দায় নির্বাচন হয়েছে। দেশের গুটিকতক এর প্রতিবাদ করলেও আমরা এর প্রতিবাদ করতে পারিনি। মূলত মানুষের মনে এখন ভয় ঢুকে গেছে। টকশোতে সত্য কথা বললে এখন আর তারা ডাকে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখন তেমন কোন আভাস দেখা যাচ্ছে না। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সেটা হচ্ছে না। তবে সুদানে যেভাবে ৩০ বছর পর পরিবর্তন এসেছে আমাদের দেশে ১৫ বছরের শাসন চলছে। আরো হয়তো ১৫ বছর পর পরিবর্তন আসতে পারে। এজন্য গণআন্দোলন প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ এক সময় অনেক প্রতিবাদী ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষের সেই প্রতিবাদী মনোভাব এখন কোথায় গেল? মানুষ কি নির্জিব হয়ে গেল?
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সামষ্টিক সূচকের ভিত্তিতে দেশের উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে। কিন্ত দিনকে দিন মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়েই চলেছে। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষ উন্নয়নের সুবিধা থেকে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কারণ এখন জনগণ নয় পুঁজিই ক্ষমতার উৎস হয়ে গেছে। দেশে সুশাসন নেই, জবাবদিহিতার প্রচন্ড অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। ভোটধিকার এখন ক্ষমতা ও অর্থের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। দেশের এ সংকট থেকে মুক্তি পেতে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়ন এর পথে এগিয়ে যেতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। মানুষ এখন ভয়ে কথা বলতে পারে না।
ঢাকা ফোরামের এই গোলটেবিলে বক্তৃতা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. আনু মুহাম্মদ, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান ফখরুল আযম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ তিতুমীর, ড. জামাল খান, মাহমুদ জামিল, ঢাকা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ফিনান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ঢাকা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এফ এ শামীম আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ আজীজ, সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আখতার, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. মাজহারুল হক প্রমুখ। #

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Sarwer Morshed ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
সত্যি একজন বিবেকবান মানুষ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন!
Total Reply(0)
Sushantoo Kumar ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
একমত
Total Reply(0)
M S Ahmed Kamal ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
100% Correct
Total Reply(0)
Patwary Chandpur ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
100 Persent Right. Jati Br.Moinul , Saleh ahmed , Mahmudur Rahman ...er moto loker netritter opekkhay.
Total Reply(0)
Md Rafiqul Islam Ferdouse ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
১০০% সত্য কথা।
Total Reply(0)
Safat islam ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
আপনাদের মত বুদ্ধিজীবি থাকলে প্রতিবাদ হবে কি করে? আগে আমার নিজের অবস্থান ঠিক করি, আমি সঠিক পথে আছি কি না ? আপনি টিআইবি সভাপতি থাকা অবস্থায় যে রিপোর্ট গুলো করতেন তা পারেন কিনা? সত্যি, মিথ্যা পরের ব্যাপার, আপনাদের প্রক্রিয়া ঠিক ছিল না। কোন একটি পক্ষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছেন। এই জন্যই আপনার মতো শুশীলদের আর আগের অবস্থানে নেই।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
এক সময় যারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে আন্দোলন প্রতিবাদ করতো এখন সুযোগ তারাই জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাই করেছে। তাহলে প্রতিবাদটা করবে কে? আর এদেশের মানুষ কি শুধু ভোট দেওয়ার জন্য জনম জনম ধরে প্রতিবাদ করতে থাকবে? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থেকে কিছু লোক যাচ্ছেতাই করবে আর জনগণের একমাত্র কাজ হচ্ছে রুটি রুজির ধান্ধা বাদ দিয়ে সেসবের প্রতিবাদ করা? তাহলে তো দেশের কোটি কোটি মানুষকে ৩৬৫ দিনই রাজপথে থাকতে হবে না খেয়ে না নেয়ে।
Total Reply(0)
মিরাজ মাহাদী ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
People are not dead but they are confused. Whom they will trust? Any politician irrespective of party - AL , BNP, JP .....! All are same to them. People's education, financial situation also different than sixties and seventies. Nation needs new leadership , new party. Do not worry time will produce it.
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
কারণ হচ্ছে দেশে একটি বোকা জেনারেশন গড়ে তোলা হয়েছে যাতে কেউ কিছু না জানে, কেউ কিছু না বোঝে আর ইচ্ছামত পারিবারিক রাজনীতির ব্যবসা খুলে বসা যায়। ইন্টারনেটের জগতে ......চ্যাট নিয়ে ব্যাস্ত; জানার কোন সুযোগ নাই; শিক্ষা পলিসি লুকিয়ে রাখা; যে শিক্ষকরা তা জানাবেন তারা আজ নিজেরাও সুবিধাভোগী ও স্লোগান নিয়ে ব্যস্ত।
Total Reply(0)
Amir ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ৯:৫২ এএম says : 0
মানুষ কি নির্জিব হয়ে গেল? না, মানুষ এক অর্ধ পেটভরাকে বাদ দিয়ে পুরাখালিপেট ওয়ালাকে ক্ষমতায় আনতে চায় না!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন