সন্ধ্যা ঘনিয়ে নামছে রাতের আঁধার। চারিদিকে গুমোট ভাব। নদীতে বাড়ছে পানির চাপ। পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বইছে ঝড়ো হাওয়া।
প্রকৃতির এমন আচরণে সিডর-আইলা দুর্গত খুলনাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে।
এদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার উপকূলবর্তী চার উপজেলার ১ লাখ ১১ হাজার পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তবে ঝড়ের তীব্রতা শুরু না হওয়ায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। শুক্রবার বেলা ৫টায় জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে, ক্রমশ এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণি। এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
রাত ঘনিয়ে আসায় উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার লোকজনকে নিকটস্থ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনছেন স্থানীয় প্রশাসন। যদিও মানুষ বসতভিটা ও গবাদি পশু রেখে আসতে চাইছেন না। ঝড়ের ভয়াবহতা বুঝিয়ে তাদের আনছেন স্থানীয় প্রশাসন।
সকালে বাতাস শুরুর পর থেকে স্বেচ্ছায় কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। সহায় সম্পদ রক্ষার জন্য পুরুষরা ঘরে থেকে গেলেও বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা আশ্রয় কেন্দ্র চলে এসেছেন। কোনো কোনো এলাকার মানুষ ঘর বাড়ি ছাড়তে না চাইলে তাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু তার নির্বাচনী এলাকা কয়রা ও পাইকগাছায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘুরে ঘুরে স্থানীয়দের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলেছেন। অনুরূপভাবে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন।
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের গৃহিণী তাসলিমা খাতুন বলেন, চোখের সামনে আইলা-সিডরের ভয়াবহতা দেখেছি। এখন ঝড়ের নাম শুনলেই ভয় করে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত আসছে। আর এই রাতেই নাকি ফণী হানা দেবে। তাই সবার উৎকণ্ঠা ও ভয় বাড়ছে। তার মতো দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কখন কি হয় এ নিয়ে।
খুলনা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে জেলার ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। যারা আসতে চাইছেন না পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে আনছেন।
তিনি জানান, কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার বেশকিছু দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে খুলনায় দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় খুলনা অতিক্রম করা না পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ফণীর অগ্রভাগ এখন খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা উপকূলে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন