রাতের আঁধারে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। মানব পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। টেকনাফ-উখিয়া ও মহেশখালী পুলিশ গত এক সপ্তাহে পৃথক অভিযানে উদ্ধার করেছে এ ধরণের শতাধিক রোহিঙ্গাকে। এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
গত রোববার ১২ মে টেকনাফে মালয়েশিয়াগামী নারীসহ ৮ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। রাত ১০ টার দিকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়ার ডেইল পাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, রোববার রাতে উপক‚ল এলাকা দিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাত্রার প্রস্তুতির সংবাদদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ নারী ২পুরুষ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তারা সবাই বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির থেকে এসেছিল। একদিনের ব্যবধানে প্রায় কাছাকাছি এলাকা থেকে আরো ৩১ নারী শিশু পুরুষকে রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তারা ওই জায়গায় জড়ো হয়েছিল। আটক রোহিঙ্গারা মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল। মহেশখালী থানা পুলিশ গত ২৪ ঘন্টায় মালয়েশিয়াগামী ২৬ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে। ১১ মে পানিরছড়া থেকে ১২ নারী পুরুষকে উদ্ধারের পর রাতে কালারমার ছড়া এলাকায় পৃথক অভিযানে উদ্ধার হয় আরো ১৪ নারী পুরুষ। মহেশখালী থানা পুলিশ ১২ মে রাত সাড়ে ১০টায় উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের আঁধার ঘোনা ও নোনাছড়ি এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ১৪ জন মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে আটক করে। মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধরের নেতৃত্বে কালারমার ছড়া পুলিশ ক্যাম্পের এসআই লিটন চন্দ্র সিংহ, এএসআই জাহাংগীর ও হোয়ানক পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এএসআই সফিকুল ইসলামের যৌথ অভিযানে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাদ্য ও পানীয়সহ নানা অনটনে বিষিয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের জীবন। শত শত এনজিও রোহিঙ্গাদের নাম ভাঙ্গিয়ে শত কোটি টাকার বাণিজ্য করলেও রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে জুটছে তার সামান্য। এতে করে ক্যাম্পে থাকা বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের অভাব-অনটনসহ দুর্বিষহ অবস্থা।
ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের কারো কারো আত্মীয় স্বজন সউদী আরব মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। মানব পাচারকারী একটি চক্র ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সাথে যোগাযোগ করে সাগরপথে তাদেরকে মালয়েশিয়াসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে বিদেশে অবস্থানরত আত্মীদের থেকে বিশাল অঙ্কের টাকার বাণিজ্য করলেও এসব রোহিঙ্গা নারী-শিশু পুরুষগুলোকে সাথে করা হচ্ছে প্রাতারণা।
অতীতে দেখা গেছে, মানব পাচার চক্রের সদস্যগুলো রোহিঙ্গাদের নারী-পুরুষদের ক্যাম্প থেকে বের করে সাগরপথে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে মাঝপথে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে অথবা বাংলাদেশের অন্য কোন উপকূলে নামিয়ে দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন