বহিষ্কার, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, কমিটির বিলুপ্তি ও আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে তালা পাল্টা তালা, সিনিয়র নেতার বাড়িতে হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াকে ঘিরে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে বগুড়া বিএনপিতে। এই অবস্থায় আগামী ২৪ জুন বগুড়ার সদর সংসদীয় আসনে যদি বিএনপি প্রার্থী দেয় তাহলে ভোটের ফলাফল অতীতের মতো বিএনপির পক্ষে যাবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান।
গত ৪ মে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর গত বুধবার সকালে জানা যায়, চিহ্নিত সংষ্কারবাদি সাবেক এমপি জিএম সিরাজকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট বগুড়া জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আগে থেকেই ক্ষিপ্ত নেতাকর্মীরা ইফতারের পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন জ্বালায় ও দলের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা জি এম সিরাজকে টাকা দিয়ে মনোনয়ন ক্রয়ের পর দলের পদ ক্রয়ের পাশাপাশি তাকে আওয়ামী এজেন্টে বলে দাবি করে।
এই গ্রুপের নেতাকর্মীরা স্থান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ঐদিন তারাবীর নামাজ শেষ করে নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মধ্যে রেজাউল করিম বাদশা, আলী আজগর তালুকদার হেনা প্রমুখের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিরোধীদের লাগানো তালা ভেঙে ফেলে নতুন করে তালা লাগায়। তাদের বক্তব্যে নেতারা বলেন, দলে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার অংশ হিসেবে তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায় যে কমিটি হয়েছে সেই কমিটিকে যারা মানে না তারা সরকারের এজেন্ট।
এরপর আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা বগুড়ার ‘চম্পা মহল’ খ্যাত সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালুর বড়িতে সমবেত হয়ে আলোচনায় বসে। খবর পেয়ে আহ্বায়ক কমিটি বিরোধীরা এমপি লালু বাসভবন চম্পা মহলের বাড়ির বাইরে জড়ো হয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে। পরে বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের ধাওয়া করে। এতে রাতের বেলায় ওই এলাকায় বসবাসকারি লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতির সঞ্চার হয়। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহষ্পতিবার বিএনপি নেতা নেতা শাহাবুল আলম পিপলু, জাসাস নেতা দেলোয়ার হোসেন হিরু পশারীসহ যুবদলের ৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও ছাত্রদলের ২ নেতাকর্মীকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
একই দিনে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলমের এবং বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে দলের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে বগুড়া সদর সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন। আগামী ২৩ মে এই আসনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ। নির্বাচনে প্রার্থীতার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ, মহাজোট, ১৪ দলীয় জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যচ্ছে। বিএনপি উপনির্বাচনে প্রার্থী দেবে কিনা এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত তা’ জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা ধারণা করছে, এই আসনে কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন এমন কথা কৌশলে প্রচার করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে পদত্যাগ করানো হয়। এরপর আসলে জিএম সিরাজকেই এখানে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হবে এটা প্রায় নিশ্চিত। মূলত সিরাজের এমপি হওয়ার খায়েশ পূরণ করতেই এত কিছুর আয়োজন বলেও মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বিষয়টি কারাবন্দী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তিনি এতে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
নব গঠিত আহ্বায়ক গতকাল বৃহষ্পতিবার পার্টি কার্যালয়ে ইফতার পার্টি করার ঘোষণা দিলে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিকেল থেকেই আহ্বায়ক কমিটির বিরোধীরা দলের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বসে পড়ে। তাদের টাঙানো ব্যানারে লেখা ছিল ‘হঠাও সিরাজ বাঁচাও দল’। এই অবস্থান ও পাল্টা প্রস্তুতিকে ঘিরে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে টান টান উত্তেজনা।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্রোতের প্রতিক‚লে বগুড়া সদর আসনের প্রার্থী বিএনপি মহাসচিবকে ভোট দিয়েছিল তারা। এখন তিনি কৌশলগত কারণে শপথ নেননি। কিন্তু কি কৌশলগত কারণে বগুড়া-৪ আসনের বিজয়ী প্রার্থী সংসদে গেলেন আর বগুড়া সদরের প্রার্থী বিজয়ী হয়েও সংসদে গেলেন না বগুড়ার ভোটাররা তা’ বুঝতে অক্ষম। অনেকেই বলছেন, বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতিতে বগুড়া সদর আসনের নির্বাচনে বিএনপির অতীত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি আর নাও হতে পারে। বিএনপি সমর্থিত অনেক ভোটারই এবার বগুড়া সদরের ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন