দুনিয়ার কোথাও ছয় মাস দিন এবং ছয় মাস রাত, এরূপ বিরল দৃষ্টান্তের কথা উঠলে অবাক হবার কিছু নেই। আল্লাহ এরূপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা সূর্য অস্তমিত হয় না, ২৪ ঘণ্টাই দিবস থাকে, এ দৃষ্টান্তও নতুন নয়। ব্যতিক্রম ধর্মী এ প্রাকৃতিক ঘটনার কবলে ইউরোপের প্রত্যন্ত অঞ্চল নরওয়ে ও বুলগেরিয়ার প্রভৃতি স্থান। তথাকার মুসলমানগণ রমজান মাসের রোজা নামাজ নিয়ে দারুণ সংকটে নিপতিত বলে জানা যায়। ২৪ ঘণ্টা রমজান মাসের রোজা পালন করতে হচ্ছে নরওয়ের মুসলমানদেরকে। গত ১০ মে ইনকিলাবে প্রকাশিত ‘২৪ ঘণ্টাই রোজা পালন করে থাকেন তারা’ শীর্ষক খবরটির প্রতি অনেকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ার কথা। খবরটি ইউরোপের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হলেও মুসলিম মাত্রেরই তা জানার আগ্রহ-কৌতূহল হতে পারে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্কেন্ডিনেভিয়া অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে দিন বড় রাত খুবই ছোট। আবার কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে। নরওয়ের আইসল্যান্ডের মুসলমানরা রোজা রাখা নিয়ে খুব সমস্যার মুখোমুখি।
উল্লেখিত অঞ্চলের মুসলমানদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক স্থায়ী সমস্য। এ প্রাকৃতিক সমস্যাটির প্রাকৃতিকভাবে সমাধান ছাড়া বিকল্প সমাধান খুঁজতে গেলে দিবসকে অর্থাৎ বড় দিবসকে খন্ডিত করে সময় বা ঘণ্টা হিসেবে ভাগ করে মুসলমানদের রোজা-ইফতারের নিয়ম চালু করতে হবে। আর সে নিয়মই জায়েজ করার নানা প্রক্রিয়া চলছে। কেননা কোরআন ও হাদীস দ্বারা দিনের অংশেই রোজ পালনের বিধান রয়েছে, বড় দিনকে খন্ডিত করে নয়।
নরওয়ের রাজধানী অসলোর একটি মসজিদের ইমাম ও মুসলমান স্কলার অসিম মোহাম্মদের উল্লেখ করে খবরে বলা হয় যে, তিনটি উপায়ের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। এ তিনটি উপায় হচ্ছে;
১. যে অঞ্চলে সূর্য ডোবেইনা, সে অঞ্চলের লোকেরা হয়তো নিকটস্থ শহরের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখে রোজা ও ইফতার করতে পারবেন।
২. মুসলমানদের কেবলার নগরী মক্কার সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এবং
৩. তাদের এলাকায় কিছুদিন আগে যখন সূর্যাস্ত হতো সেই সময় হিসাব করতে পারেন।
এ তিনটি উপায় বা ধারণার কোনটি শরীয়ত সম্মত, সে সিদ্ধান্ত দেবেন ফকীহ ইমামগণ। তবে বর্ণিত অঞ্চল বা স্থানগুলোতে এ সমস্যা নতুন নয়, প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। মাত্র কয়েক দশক আগেও মধ্য প্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল। জানা মতে, বিগত শতকের শেষ দশকগুলোতে যখন বিষয়টি আরব বিশে^ তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি করে তখন নানা আঙ্গিকে এর ধর্মীয় দিকও উঠে আসে এবং আমাদের দেশেও এটি আলোতিচ হয়েছিল, যা কিছুটা নি¤œরূপ;
যেখানে ২৪ ঘণ্টাই দিন সেখানে সূর্য উদিত হওয়ার পর তার স্থায়িত্বকালও ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা, অস্তমিত হওয়ার পর যতই স্বল্প সীমিত হোক ওটাই ইফতার ও মাগরেবের সময়। আরও বিলম্ব হলে এশা এর সময়ও পাওয়া যাবে। সুবহে সাদকেরে আগেই যদি পরবর্তী সূর্যোদয় হয়, তাহলে ফজরের নামাজের সময়ও গেল। সময় বা ঘণ্টা হিসাবে দীর্ঘ বা বড় দিনকে ভাগ করে রোজা রাখা হলে অর্থাৎ দিনের একাংশে ইফতার করা জরুরী হয়ে যাবে। এ অবস্থায় দিনের ভাগেই ইফতার করা হল। এসব নানা বিষয়ে সঠিক তথ্য অবগত হওয়ার পর একজন মুফতি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে ফতোয়া দিতে পারেন।
রমজান মাসের রোজা একটি বার্ষিক ফরজ এবাদত। যারা এই মাস প্রত্যক্ষ করবে তাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ, এটি কোরআনের বিধান। ফজর তুলু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করার নির্দেশও কোরআনে এসেছে। রমজান মাসের রোজা পালনের মত একটি শারীরিক এবাদতের যে সব বৈশিষ্ট্য ও মাহাত্ম্যের কথা কুরআনও হাদীসে বর্ণিত রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সবাই অবগত। আর এ কথাও সকলের জানা আছে যে, সকল ফরজ এবাদতের জন্য সময়কাল নির্ধারিত। যেমন, দৈনিক পাঁচবার নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ ফরজ, জীবনে একবার হজ্জ ফরজ, আর্থিক সক্ষম ব্যক্তিদের ওপর প্রতি বছর রমজান মাসের সিয়াম সাধনা, জাকাত প্রদান করা ফরজ। নির্দিষ্ট নিয়মেই ফরজ এবাদত পালন করতে হয়। রমজান এর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য অর্থাৎ রমজান মাসেই রোজা পালন করা ফরজ। কিন্তু প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দিবা-রাতের তারতম্য ঘটে থাকে।
কোন কোন দেশের মুসলমানগণ বরকতময় রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করতে এক মহাসংকটের সম্মুখীন, তাদের প্রতি রোজা ফরজ কি না অতবা তারা কিভাবে রোজা পালন করবেন? এই সমস্যাটি কোন কোন সময় এমন প্রকট আকার ধারণ করে থাকে যে, এ ব্যাপারে ফকীহগণ এ যাবৎ কোন চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। অবশ্য তারা সমাধানের বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করার চেষ্টায় নিয়োজিত। নরওয়ে, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশে রমজান মাসের সিয়াম পালনে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়ায় এই সমস্যা বিদ্যমান। ওই সব দেশের মুসলমানগণ কেবল রমজান মাসের রোজা পালনেই সমস্যার সম্মুখীন নন, বরং মাগরিবের ও এশার নামাজের ব্যাপারেও একই ধরণের সমস্যায় পতিত। এ কারণে সংশ্লিষ্ট দেশ বা দেশগুলোর মুসলমানগণ বিশে^র মুসলিম ফকীহ ও মুফতীগণের শরণাপন্ন হয়ে তাদের এই জটিল সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকেন এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশ জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া:
সমস্যাটির ধরণ-করণ, জটিলতা এবং সমাধানের উপায় সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ঘটনা উল্লেখের মাধ্যমে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করা যেতে পারে, যাতে ঐ সব দেশের মুসলমানগণও রমজানের ফরজ রোজা পালন করার সৌভাগ্য লাভ করতে পারেন। হিজরী ১৪০৬ মোতাবেক ১৯৮৬ সালের ঘটনা। আল আজহারের একটি ফতোয়া প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। মাহে রমজান আরম্ভ হওয়ার প্রাক্কালে নরওয়ের রাজধানী অসলো-তে তথাকার ইসলামী কেন্দ্রের উদ্যোগে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল রমজান মাসে রোজা রাখা ও ভঙ্গ করার (ইফতারের) সময় সম্পর্কে আলোচনা করা। উত্তর ইউরোপীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে ইফতারের সময় সম্পর্কে মতবিরোধ দেখা দেয়। সেখানকার কোন কোন অঞ্চলে সিয়ামের সময় ২৩ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় এবং কানাডা ও অন্যান্য অঞ্চলে এই সময়ের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের নিকট আল আজহারের একটি ফতোয়া আসে, এতে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের বেলায় ইফতার ও সেহরীর সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে।
নিকটবর্তী কোন মুসলিম রাষ্ট্রের অনুকরণে এই ফতোয়া অপর ফতোয়ার পরিপন্থী। কেননা দিনের একাংশে ইফতার করা আল্লাহ তাআলার একটি উক্তি বিরোধী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে পর্যন্ত না তোমাদের নিকট সোবহে সাদেকের সাদা রেখা পৃথক হয়ে যায় কালো রেখা হতে, অত:পর রোজা পূর্ণ কর রাত্রি পর্যন্ত।’ কোরআনের প্রকাশ্য দলীলের বর্তমানে ইজতেহাদ করা চলে না। সম্মেলনকারীরা এ পরস্পর বিরোধী ফতোয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা জেদ্দার ফেকাহ একাডেমির পরামর্শের অনুসরণ করতে বলেন, তাতে ‘আল-মুসলিমুন’ ও ‘আশশারকুল আওসাত’ পত্রিকাদ্বয়ে নামাজের যে সময় সূচি প্রকাশ করা হয়, এর অনুসরণ করার পরামর্শ দেন।
একাডেমির প্রস্তাব অনুযায়ী ইউরোপের অঞ্চলসমূহের মুসলমানদের যেখানে সময়ের নিদর্শন অবর্তমান বিশেষত মাগরেব, এশা ও ফজরের নামাজের সাথে সম্পর্ক যুক্ত সেখানে নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহের অনুসরণ করা উচিত যেখানে উল্লেখিত নিদর্শনগুলো পাওয়া যায়। অথবা সেখানে অনুমান করে কাজ করবে।
‘আল মুসলিমুন’ পত্রিকার নামে প্রেরিত এক সুদীর্ঘ পত্রে নরওয়ের অধিবাসী মুসলমানগণ বলেন যে, তারা একই সময় অপর একটি ফতোয়াপ্রাপ্ত হয়েছেন যাতে বলা হয়েছে যে, ২০ ঘণ্টার অধিক সময় যেসব দেশে দিন সেখানে দিনের এক অংশে ইফতার করার অনুমতি দেয়া যেতে পারে। অথবা অনুরূপ হুকুম উত্তর ইউরোপীয় দেশ সমূহের জন্য প্রযোজ্য। এই ফতোয়ায় বলা হয়েছে যে, এই অঞ্চলের মুসলমানগণ ১৫ ঘণ্টা রোজা পালন করবে অথবা নিকটবর্তী মুসলিম দেশগুলোর অনুসরণ করবে। উত্তর ইউরোপের মুসলমানদের নিকট যে ফতোয়া এসেছে তাতে বলা হয়েছে যে, ‘আল্লাহ তাআলা সিয়াম ফরজ করেছেন এবং তা হচ্ছে দিবসের পানাহার হতে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলার উক্তি অনুযায়ী, তোমরা আহার এবং পান কর যে পর্যন্ত না তোমাদের নিকট সোবহে সাদেকের সাদা রেখা পৃথক হয়ে যায় কালো রেখা হতে। অত:পর রোজা পূর্ণ কর রাত্রি পর্যন্ত।”
এই আয়াত প্রমাণ করে যে গোটা দিবাভাগে পানাহার হতে বিরত থাকা ওয়াজেব। আর এই সম্বোধন সমগ্র মুসলমান সমাজের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। সুতরাং তারা যথাসাধ্য এই হুকুম মেনে চলছে এবং তাদের নিকট দিনে ব্যবধান ঘটে দীর্ঘ ও ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে এবং শীতে ও গরমে যখন দূরে অবস্থিত মুসলমানগণ সক্ষম হবে। যেমন, ফিনল্যান্ড ইত্যাদিতে দিবা ভাগের যতটুকু সম্ভব রোজা পালন করবে। কোন কোন আলেম ফতোয়া প্রদান করেছেন যে, নিকটবর্তী অধিকাংশ দেশে যেভাবে পালন করা হয় তার অনুসরণ করবে। কেননা ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত যেখানে দিন সেখানে ভীষণ গরমের সময় পূর্ণ দিবস রোজা পালন করা মানুষের পক্ষে কঠিন ব্যাপার। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সাথে সহজ করতে চান এবং তিনি তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না।’ আল্লাহ আরও বলেন, ‘দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদের ওপর এরূপ অসুবিধা চাপাতে চান না। ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও কষ্ট হওয়ার ভয়ে ও রোগীর জন্য এবং মুসাফিরের জন্য রোজা ভঙ্গ করা শ্রেয়।
আরব দেশগুলোর ন্যায় যেখানে দিন দীর্ঘ ও ক্ষুদ্র হয়, তদ্রƒপ আফ্রিকা ও আমেরিকার মুসলমানদের পূর্ণ দিবস রোজা পালন করা আবশ্যক এবং তা এভাবে যে, অতিরিক্ত সময় অতি সামান্য হওয়ায় রোজা পালনকরা কিঠন নয়, দিবা ভাগ হয় অতি ছোট কয়েক ঘণ্টা মাত্র। ঐ সব দেশের লোকেদেরকে রাত্রিভাগে পানাহার হতে বিরত থাকার অনুমতিও দেয়া হয় না। অতিরিক্ত সময় এত অধিক হয় যে, দিবা ভাগ ২০ ঘণ্টা অথবা আরও অধিক হলে দিনের স্বাভাবিক অংশ পর্যন্ত রোজা পালন করবে অধিকাংশ দেশের অনুকরণে যেমন ১৫ ঘণ্টা ও তদনুরূপ। আর যদি দিবা ভাগ চার ঘণ্টা কিংবা এর চেয়ে কম হয়, তাহলে দিবা ভাগে পানাহার হতে বিরত থাকলে চলবে না, দিনের সঙ্গে রাতের কিছু অংশও যোগ করতে হবে যা নিকটবর্তী মুসলিম দেশের অধিকাংশ লোক অনুসরণ করে। আর দিন বড় হচ্ছে এবং পানাহার হতে বিরত থাকা সম্ভব হলে রোজা পালন করা আবশ্যক।
নরওয়ে ইসলামী সম্মেলন; ‘দিনে ইফতার সম্পর্কে আল-আজহারের ফতোয়া’ শিরোণামে ‘আল-মুসলিমু’ পত্রিকায় প্রকাশিত এই ফতোয়া বিবরণী সে সময়কার বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। নরওয়েসহ উত্তর ইউরোপের মুসলমানগণ রমজান মাসের ফরজ রোজা কিভাবে পালন করবেন উল্লেখিত ফতোয়া বিবরণীতে তার একটা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে আমরা উপমহাদেশের বিখ্যাত মুফতি আল্লামা মোহাম্মদ শফি (রহ.) এর একটি মন্তব্য দিয়ে এ লেখার উপসংহার টানতে চাই;
সূরা বাকারায় ১৮৫ নং আয়াতের শুরুতেই বলা হয়েছে; ‘ফামান শাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফাল ইয়াছুমহু’। অর্থাৎ কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি প্রত্যক্ষ করে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। এ আয়াতাংশের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তফসীর মাআরে ফুল কোরআনে হযরত মাওলানা মুফতী মোহাম্মদ শফি (রহ.) যে ব্যখ্যা দিয়েছেন তা নি¤œরূপ;
মুফতি সাহেব বলেন; মাসআলা, এ আয়াতের দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার জন্য রোজার যোগ্য অবস্থায় রমজান মাসের উপস্থিতি একটি শর্ত। এমতাবস্থায় যে লোক পূর্ণ রমজান মাসকে পাবে, তার উপর গোটা রমজান মাসের রোজা ফরজ হয়ে যাবে, যে লোক এ অবস্থায় কিছু কম সময় পাবে, তার উপর ততদিনই ফরজ হবে। কাজেই রমজান মাসের মাঝে যদি কোন কাফের ব্যক্তি মুসলমান হয়, কিংবা কোন নাবালেগ যদি বালেগ হয় তবে তার উপর পরবর্তী রোজাগুলোই ফরজ হবে। বিগত দিনগুলোর রোজা রাখা বা করার প্রয়োজন হবে না।
মাসআলা; যে সব দেশে রাত ও দিন কয়েক মাস দীর্ঘ হয়ে থাকে, সে সব দেশে বাহ্যত মাসের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা যায় না। অর্থাৎ রমজান মাসের প্রত্যক্ষ প্রকাশ্য আগমন ঘটে না। কাজেই সে দেশের অধিবাসীদের উপর রোজা ফরজ না হওয়াই উুচিত। হানাফী মাযহাব অবলম্বী ফেকাহবিদ গণের মধ্যে হাল ওয়ানী, কেবালী প্রমুখ নামাজের ব্যাপারেও এমন ফতোয়া দিয়েছেন যে, তাদের উপর নিজেদের দিন-রাত অনুযায়ী নামাজের হুকুম বর্তাবে। অর্থাৎ, যে দেশে মাগরিবের সাথে সাথেই সুবহে সাদেক হয়ে যায় সে দেশে এশার নামাজ ফরজ হয় না। (শামি)
এর তাগাদা হল এই যে, যে দেশে ছয় মাসের দিন হয় সেখানে শুধু পাঁছ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হবে। রমজান আদৌ আসবেনা। হযরত হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) ও ‘এমদাতুল ফাতাওয়া’ গ্রন্থে রোজা সম্পর্কে এ মতই গ্রহণ করেছেন। (বাংলা সংস্করণ: পৃষ্ঠা: ৯৪ ও ৯৫)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন