আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা ‘থোক বরাদ্দ’ দিয়েছে সরকার। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টাকা শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে দেওয়ার শর্তারোপ করা হয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা এখন বকেয়া পাওয়ার প্রহর গুনছেন।
বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত টাকা শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর জন্য কিছুটা সময় লাগছে। খুব শিগগিরি তাদের হিসাবে টাকা চলে যাবে বলে আশা করছি।’
এদিকে সাধারণ শ্রমিকরা বলছেন, ঈদের আগে আমাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করায় সরকারকে ধন্যবাদ। তবে এটা যেন শুধু সান্ত¡না না হয়।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিলের শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের তিন থেকে চার মাসের বেতনসহ প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এরমধ্যে শুধু শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ৫৮ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত চার মাসে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা বকেয়া বেতন রয়েছে।
বকেয়া বেতন, মজুরি ও উৎসব ভাতার দাবিতে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটকল শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ৫ মে বিকেল থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি পাটকলে কর্মবিরতি শুরু হয়ে ১৩ মে থেকে সারাদেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলে এ কর্মবিরতি ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার এই বরাদ্দ এলো।
পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা ও যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, পাটকলের শ্রমিকদের জন্য জরুরি বিবেচনায় ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ খবরে আমরা খুশি। দীর্ঘদিন ধরে না খাওয়া শ্রমিকরা এ খবর শুনে অনেক খুশি হয়েছেন। তবে নয় দফা দাবি আদায়ের জন্য শ্রমিকরা যে আন্দোলন করছিলেন তার মধ্যে কেবল একটি দাবি পূরণ হয়েছে। আমরা মজুরি কমিশনসহ বাকি ৮ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় হতাশ হয়েছি।
সব শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে।
এর আগে ২১ মে তিনটি শর্তে পাটকল শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। খুলনার জেলা প্রশাসন, বিজেএমসি ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে টানা ১৫ দিনের আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়াম্যান শাহ মোহাম্মদ নাছিম বলেন, খুব শিগগিরি যেকোনও সময় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিজেএমসির হিসাবে শ্রমিক কর্মচারীদের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া পাওনা ও বোনাসের অর্থ ছাড় দিতে পারে। বিজেএমসির অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর সেখান থেকে ২৬ পাটকলের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে জরুরিভাবে কাজ করবে বিজেএমসির হিসাবসহ সব বিভাগ। হাতে পাওয়ার পর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা তাদের নিজ-নিজ অ্যাকাউন্টে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বিজেএমসি। তবে পাটকলের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শ্রমিক কর্মকর্তাদের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে হবে।’
স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান শাওন মাহমুদ বলেন, আমার হিসাব বিভাগকে প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের হিসাবে টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা দ্রুত তাদের হিসাবে দেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন