ফেনী সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ মোট ১৬ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) জমা দিয়েছে পিবিআই। গতকাল বুধবার দুপুর ২ টার দিকে ফেনী জজ কোর্টে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম।
অভিযোগপত্রে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে হুকুমদাতা আসামী করা হয়েছে। অভিযুক্ত বাকি ১৬ জন হচ্ছেন- এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০), রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
এর আগে পিবিআই ও পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। পিবিআই’র তদন্তে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেয়া হয়। এরা হলেন- নুর হোসেন প্রকাশ হোনা মিয়া, আলাউদ্দীন, কেফায়েত উল্লাহ জনি, সায়েদুল, আরিফুল ইসলাম।
হত্যার ১ মাস ১৯ দিনের তদন্তে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা, হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জানায় পিবিআই। তাদের ভাষ্য, মাদ্রাসায় অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াতেই নুসরাতকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা। আলোচিত এ ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ছিলেন মাদ্রাসাটির পরীক্ষার্থী।
হত্যা মামলায় ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিম‚লক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকারীদের বাঁচানোর আশ্বাস দেওয়া এবং এক আসামির সঙ্গে ফোনালাপের ঘটনায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২৬ সেকেন্ডের সে কথোপকথন পিবিআইয়ের হাতে আছে। নুসরাতকে শ¬ীলতাহানির ঘটনার পর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন থামাতে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেন বলে পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে।
গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে শ¬ীলতাহানির অভিযোগ করেন নুসরাত। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন সিরাজ। গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে বলে খবর দেয়। পরে নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামির ফাঁসি চায় নুসরাতের পরিবার। সেই সঙ্গে এ মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুনেছি মামলার চার্জশিটে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর মাকছুদ আলমসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পিবিআই।
নুসরাতের পক্ষের আইনজীবী এড. শাহজাহান সাজু জানান, ফেনীর চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিটে ফেনীর মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। যে ৫ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে মামলার বাদীর কোন অভিযোগ থাকলে নারাজি দেয়া হবে। এ মামলায় পিবিআই ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেন। ইতিমধ্যে ১৬৪ ধারায় ৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছে। বৃহস্পতিবার মামলার হাজিরার তারিখে মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান চার্জশিটে তাদের প্রত্যাশার ঘাটতি রয়েছে কি না তা দেখবে।
এদিকে নুসরাতের মা পিবিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা নুসরাতকে বোনের মতো ভেবে নিরসলভাবে কাজ করেছেন। কম সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতার করে নজির সৃষ্টি করেছে পিবিআই। তিনি এই অভিযুক্ত ১৬ আসামীর ফাঁসির দাবি করেন।
কোনো ধরনের হুমকি কিংবা চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, অনেক ধরনের হুমকি আসে। তবে আমরা এটাকে আমলে নেই না। যেখানে মেয়েকে হারিয়েছি সেখানে নিজেরা বেঁচে থেকে কি করব। যেখানে নুসরাত হত্যার বিচারের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন, সেখানে আমাদের মেরে ফেললেও কোনো সমস্যা নেই। এ সময় তিনি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন