রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির বিরোধ এখন প্রকাশ্যে

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

প্রায় ১৬ মাস ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দেশের বাইরে। এই অবস্থায় দলের সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট ডাকাতির অভিযোগে বর্তমান সরকারের অধীনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করে বিএনপি

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তৃর্ণমূল পর্যায়ের প্রায় ২০০ নেতাকে বহিষ্কারও করা হয় দল থেকে। একইভাবে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান দলের প্রথম এমপি হিসেবে সংসদে যোগ দেয়ায় তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এরপরই হঠাৎ করে দলের বাকীরাও সংসদে যোগ দেয়ার পর থেকেই দলে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এটিকে ভালোভাবে নিতে পারেনি। এ নিয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। এই সিদ্ধান্তে পেছনে যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে জানান যে, দলের সিদ্ধান্তেই এমপিরা শপথ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তিনি নিজে শপথ গ্রহণ না, তার আসন বগুড়া-৬ এর উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ, সংরক্ষিত আসনে দলের মনোনয়ন দেয়ায় তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয় নেতাকর্মীদের মাঝে। সিনিয়র নেতাদের ক্ষোভ প্রশমনে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাতেও মুক্তি মিলছে না সমালোচনা থেকে। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচিতদের সংসদে যোগ দেয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ এখন তুঙ্গে। দলীয় ফোরাম, সভা-সমাবেশ সব জায়গায় প্রকাশ্যেই এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন সিনিয়র নেতারা। সুযোগ পেলে প্রশ্ন তুলতে ছাড় দিচ্ছেন না মধ্য ও নিচের সারির নেতারাও।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সংসদে যাওয়া বিএনপির এমপিদের লোভী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, সরকারের চাপে নয়, লোভে পড়েই বিএনপির ৫ এমপি সংসদে শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল সংসদে যাব না। কিন্তু সংসদে গেলাম। এখানেই তো বুঝতে হবে, আমাদের প্রতিশ্রুতির অভাব আছে। আমরা অবাধ্যকে বাধ্য করতে পারি না। কারণ, ওই পাঁচজনের দলের প্রতি, রাজনীতির প্রতি অঙ্গীকার নেই। এই পাঁচজন অবাধ্যকে যদি আমরা বাধ্য করতে পারতাম, তাহলে আজকে আমাদের দুঃখ থাকত না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই ৫ জন দল ছেড়ে চলে গেলে যেতেন। এঁরা একটা দিনের জন্য বলেছেন যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্ত না হলে সংসদে যাব না? এই ৫জনের কেউ বলেছেন? এক দিন? কেউ বলছেন? বলেননি। তাহলে তাঁদের সংসদে যাওয়াটা জরুরি। বেগম জিয়ার মুক্তিটা কিন্তু জরুরি না। দলের নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যাঁরা উপদেশ দেন, তাঁরা নিজের বেলায় সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন করেন, তা একটু ভেবে দেখা দরকার। বলা হয়, ঘরে বসে মিটিং করব না। কিন্তু ঘরেই ডাকা হয়।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে দলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কারণ নির্বাচনের পরবর্তীতে দলীয়ভাবে আমরা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম এবং সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলাম। সেজন্য আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি নাই। আর যারা অংশগ্রহণ করেছিল প্রায় ২০০ জন তাদেরকে আমরা বহিস্কার করেছি। গত নির্বাচনে আমাদের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, জেল খেটেছেন এমনকি অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু সংসদে যোগদান করার কারণে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি বিরাট ক্ষোভ এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

নেতারা ব্যর্থ হলে তাদের সরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমরা যদি ব্যর্থ হয়েও থাকি আর ব্যর্থ না হয়েও থাকি; আর ব্যর্থ হয়ে থাকলে আমাদেরকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্বের ব্যবস্থা করুন। কিন্তু দলটাকে শক্তিশালী রাখতে হবে।

তিনি অবিলম্বে এই ভেদাভেদ, ক্ষোভ দূর করার জন্য সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দলসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি ডেকে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল বুঝাবুঝির অবসান করার আহ্বান জানান।
শুধু সিনিয়র নেতারাই নয়, বিএনপির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর তৃণমূলে নেতারাও। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তারাও ছাড়ছেন না প্রশ্ন তুলতে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কৃত নেতা মৌলভীবাজার জেলা যুবদল সহ-সভাপতি লিটন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বারবার কেন্দ্রকে বলেছিলাম- তৃণমূলের রাজনীতি ধরে রাখতে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হোক। তা না দিয়ে আমাদের বলা হলো- সংসদ নির্বাচনে সরকারের প্রতি অনাস্থা দেখাতে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নির্বাচন বয়কট করবে বিএনপি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জনগণের চাপকে প্রাধান্য দিতে আমরা উপজেলা নির্বাচন করলাম বলে আমাদের বহিষ্কার করা হলো। এখন বর্তমান সরকারের অধীনে উপ-নির্বাচনে গেলে সেটি দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত দাঁড়াবে না?
একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করে বহিষ্কৃত নেতা কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, কী করবে তার ঠিক পাচ্ছে না বিএনপি। একবার নিজেরাই বলছে- নির্বাচন হারাম, আবার নিজেরাই বলছে- নির্বাচন জায়েজ। দলে সাংগঠনিক কোনো সমন্বয় নেই। কে, কখন, কী, কেন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা বোঝা মুশকিল। উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে তো আমরা যারা বহিষ্কৃত তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু যা হচ্ছে তা নিয়ে দলের কর্মীদের ভেতরে যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে তা মোটেই বিএনপির জন্য ভালো হবে না। এটা ভেবে দেখা দরকার।

এদিকে কয়েকদিন আগে বিএনপির একটি সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, তাকে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে যাওয়াসহ নানা বিষয়ে সমালোচনায় মুখর হন। একই সভায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাও দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি মহাসচিবকে সরাসরি প্রশ্ন করেন।

সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় দলের মধ্যে বিভেদ, ক্ষোভ প্রশমনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারাগার থেকে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রতি সপ্তাহে একটি বার্তাই পাঠান। আর তা হলো দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। এ পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত হয়েছে সবই তার পরামর্শে নেওয়া।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে গিয়েছি গণতন্ত্র ও আমাদের দলকে রক্ষা করার জন্য। হাজার হাজার নেতাকর্মীর স্বার্থেই। আমরা সংসদে গেলাম কেন? এটা অনেকেই প্রশ্ন করেন। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নাই। আমরা সংসদে দলের সিদ্ধান্তেই গিয়েছি। যারা সংসদে গেছে তারা দলের সিদ্ধান্তেই গেছে। আমি নিজে যাইনি, সেটাও দলের সিদ্ধান্তে।

যদিও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এই মূহুর্তে কারাবন্দি। তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। আমরাও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। তিনি (খালেদা জিয়া) আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Arafath Hossain ৩ জুন, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
Thanks leader finally I am satisfied that our BNP still exists.
Total Reply(0)
পিচ্চি বানর ৩ জুন, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
জিয়ার প্রধান উক্তি তারা আজকে ভুলে যেতে বাধ্য হয়েছে সেটা হল " ব্যক্তির চেয়ে দল বড় , দলের চেয়ে দেশ বড় ।''
Total Reply(0)
Nurulhoque Mollah ৩ জুন, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
কি লাভ বিরোধ থাকলে কি আর না থাকলে কি এতো বড় একটা দল নেত্রীকে মুক্ত করতে পারে নাই আবার একতার গান গায় শরম ও লাগে না
Total Reply(0)
MD Mostakim ৩ জুন, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
বাংলাদেশের মানুষ কোন রাজনৈতিক দলকে আর বিশ্বাস করে না......আর কত ভেল্কিবাজি দেখবে জনগণ
Total Reply(0)
মেজর ডালিম ৩ জুন, ২০১৯, ১:৪৯ এএম says : 0
কেন যে এই দলটাকে ভালবেসে ছিলাম, আগে যদি জানতাম এই দলে কৌতুক অভিনেতা এতো বেশি তাহলে আমিও জোকার হতাম
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন