শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভোলার উপকূলের ৫ লাখ মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে বসবাস করছেন

ভোলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৯, ৩:৩৮ পিএম

পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার সংকট, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আধুনিক প্রশিক্ষণের অভাব, নির্ধারিত সময়ে ঝড়ের পূর্বাভাস না পাওয়া ও ঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে না পারায় প্রতি বছরই দ্বীপজেলা ভোলায় প্রাণহানি ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এতে উপকূলের ৫লাখ মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে বসবাস করছেন।
উপকূলের বাসিন্দারা জানান, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার কোল ঘেঁষা দেশের বৃহৎ দ্বীপটি হচ্ছে ভোলা। প্রায় ১৮ লাখ জনগোষ্ঠীর এ জেলার উপকূলের ৫লাখ মানুষ প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমের সময় দুর্যোগ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়লেও জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। যারফলে ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। একমাত্র আয়ের উৎস ফসলি জমি, গবাদি পশু আর স্বজনদের হারিয়ে উপকূলের মানুষ আজও ঘুরে দাড়াতে পারছেনা। আকাশে মেঘ দেখলেই যেন তারা আঁতকে উঠেন। ঝড়ের কোন পূর্বাভাস কিংবা বিপদ সংকেত তাদের কাছে পৌঁছে না বলে অভিযোগ তাদের।
ঢালচরের মোস্তফা মুন্সি জানান, দুর্যোগের সময় প্রায়ই আগাম খবর আমরা পাইনা, যার ফলে ঝড়ে পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেনা। এ এলাকার অনেক মানুষ নিরাপদে যেতে পারেনা। শুধু মাত্র সতর্কবার্তার অভাবে।

জেলে আবু কায়েত ও মিরাজ বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই বুঝতে পারি ঝড় আসবে। তবে সতর্কবার্তা আমাদের কাছে যথসময়ে এসে পৌঁছায় না।
উপকূলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্গম চর ও দ্বীপচরের মানুষ ঝড়ের কোন পূর্বাভাস পায়না, যার ফলে সেই সময় সিডর-আইলায় এখানে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে আশ্রয় কেন্দ্রের সংকট রয়েছে। অনেক চরেই নেই আশ্রয় কেন্দ্র।
মেঘনা উপকূল তুলাতলীর হাসিনা বানু বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ঝড়ের সংকেত পাইনা, তাই সতর্ক হতেও পারিনা। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরাই।
ধনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এমদাত হোসেন কবির বলেন, এ ইউনিয়নটি নদীর কুলে, চারদিকে নদী এখনে আরো আশ্রয় কেন্দ্র হলে দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষ নিরাপদে থাকবে পারবে।
ভোলা সুশিল সমাজের প্রতিনিধি এ্যাড. নজরুল হক অনু বলেন, দুযোর্গের সময় দুর্গম এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে আনা হয়। এরফলে তাদের উদ্বার করতে গিয়ে উদ্ধারকর্মীসহ সবাই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তাই উদ্বার কাজে শক্তিশালী নৌযান ব্যবহার করলে দুর্গম এলাকার মানুষকে নিরাপদে আনা সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মী, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্বারকর্মীরা কাজ করলেও উপকূলের বিশাল এ জনগোষ্ঠির জন্য রয়েছে মাত্র ৬৬৭টি সাইক্লোন সেল্টার ও ৫২টি মাটির কেল্লা। এসব আশ্রয় কেন্দ্রের অধিকাংই মূল-ভূখন্ডে স্থাপিত হয়েছে। আর দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে ঝড়ের পূর্বাভাস পৌঁছায় না। যারফলে ঝড়ের প্রস্তুতি নিতে পারছেনা উপকূলের মানুষ। বিশেষ করে ঢালচর ও চরপাতিলাসহ তজুমদ্দিন ও মনপুরার অনেক চরেই নেই আশ্রয় কেন্দ্র।
এ অবস্থায় আধুনিক প্রশিক্ষন, সরঞ্জাম ও জনবল সংকটের কথা বললেন দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা দুর্যোগ ব্যবস্থা কর্মসূচী ও জেলা রেড ক্রিসেন্ট এর কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থানা কর্মসূচীর (সিসিপি) উপ-পরিচালক মো: সাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, মার্চ-এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নভোম্বর ৫ মাস দুর্যোগের মৌসুম। ৩ মাস গেলেও এখনো দুর্যোগের দুই মাস বাকি রয়েছে।

তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থানা কর্মসূচীর উদ্ধার কর্মী রয়েছেন ১০ হাজার ২০০জন। যারা দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগকারনী সময় ও দুর্যোগ পরবর্তি সময়ে কাজ করে। ইতিমধ্যে যেসব প্রকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে তার সবটিতে তারা কাজ করেছে। কিন্তু এসব উদ্ধারকর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষনের প্রয়োজন। এছাড়াও দুর্যোগ সময়ে ব্যবহারের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন।

জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব প্রধান আদিল হোসেন তপু বলেন, দুর্যোগের সময় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঝড়ের পূর্বাভাস, সতর্কবার্তা ও উদ্ধারকাজ করে থাকে। কিন্তু নৌ ও সড়ক পদে উদ্ধারকাজ করার জন্য কোন নিজস্ব নৌ-যান নেই আমাদের। নেই পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, হ্যান্ড মাইকসহ আধুনিক কোন সরঞ্জাম। দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হিসাবে ভোলায় এসব সরঞ্জাম জরুরী। তাই উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষনসহ আধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন।
এদিকে, বেসরকারী হিসাবে সিডর, আইলা, কোমেন, রেশমী, ফনি ও মহাসেন ছাড়াও ছোট বড় ২০টি ঝড়ে শতাধিক জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এরমধ্যে সিডরে ৪২জন, আইলায় ১৮জন, ১০অক্টোবর ২০১২ তে ১৫জন ও মহাসেনে ৪জনসহ অন্যান্য ঝড়ে প্রাণহানি ঘটে।
অপরদিকে, দ্বীপজেলা ভোলায় দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগ সময় ও পরবর্তী সময়ে প্রস্তুতি ও মোকাবেলায় সঠিক পদক্ষেপ আর ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে উপকূলের ৫ লাখ মানুষ দুর্যোগ মোকাবেলা করে নিরাপদে থাকবে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন