ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলীম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করা হয়। অভিযোগ গঠনের শুনানি বিকাল ৪ টা পর্যন্ত চলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) হাফেজ আহমেদ বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৪/১/৩০ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। এর মধ্যদিয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচার শুরু হলো। আগামি ২৭ জুন এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
অভিযোগ গঠনকালে গ্রেফতার ১৬ আসামিই আদালতে হাজির ছিল। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো বরখাস্থ হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম (৫০), নুর হোসেন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মদ শমীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)। পিআইবির পরিদর্শক মো. শাহআলম বলেন, আদালতের নির্দেশে আসামিদের চার্জ গঠনের জন্য হাজির করা হয়েছে।
এর আগে ২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম চার্জ দাখিল করেন। চার্জশিটে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার নথি জমা দেন। পরদিন ৩০ মে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন আদালত মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন। এ সময় আদেশ পাঠানোর সাথে সাথে ১০ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। পরে ১০ জুন আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০ জুন চার্জ গঠনের দিন ধার্য তারিখ ছিল।
উল্লেখ্য, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতের মা শিরীন আক্তার বাদি হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এর পর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। তাকে কৌশলে পাশের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের সহযোগিরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় । টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯ টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদি হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজসহ বাকি ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। মামলার এজহারভুক্ত ৮ আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন