শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

একদিকে লাশ.. অন্যদিকে মেজবান!

রাউজান উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৯, ৩:০৬ পিএম

রাউজান পৌরসভায় গত বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত (৫ দিনের ব্যবধানে) একই বাড়ীর ৩ জনের স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শোক চলছে সমগ্র বাড়ীতে। জানাগেছে পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের গুরামিয়া মুন্সির বাড়ীর মরহুম নুরুল ইসলামের বড় ছেলে ফকিরহাটের শুটকী ব্যবসায়ী রফিক সওদাগর (৭০) গত বুধবার দুপুরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। ঐদিন রাত ৯টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। তিনি ৪ ছেলে, ২ মেয়ে রেখে যান। রফিক সওদাগরের মৃত্যু শোক কাটতে না কাটতে বৃহস্পতিবার রাত পৌণে ১২টায় বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান নুরুল আলমের স্ত্রী ও ফকিরহাট পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ী ঘী এজেন্ডধার আলমগীরের মা বেদুরা বেগম (৯০)। তার জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয় পরদিন শুক্রবার সকাল ১১টায়। এটির রেশ কাটতে না কাটতে আবারো রোববার দুপুর আড়াইটায় মারা যান মরহুম মাহবুবুল আলমের ছেলে আবুধাবী প্রবাসী আকতার হোসেন (৫০)। তিনি গত কয়েকদিন আগে বিদেশ থেকে বাড়ীতে এসেছিলেন মাত্র। তার নামাজে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয় রোববার রাত ৯টা ৩০মিনিটে।
পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সেক্রেটারী ও মারা যাওয়া তিনজনের নিকটজন জয়নুল আবেদীন জানান, রোববার দুপুরে প্রবাসী আকতার হোসেন গত বুধবারে মারা যাওয়া রফিক সওদাগরের জেয়াফত উপলক্ষে মেজবানের মাংস কাটার দৃশ্য চেয়ারে বসে দেখছিলেন। দৃশ্য দেখার সময় হঠাৎ বলে উঠে আমার খারাপ লাগছে, ততক্ষণে আমি সহ কয়েকজন তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে ঘরে ঢোকাতে ঢোকাতে তার হার্ট বন্ধ হয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই সকলের সামনেই মারা যান প্রবাসী আকতার। তার ২ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে, বড় মেয়ে চবিতে অধ্যায়নরত। বড় ছেলে ক্লাস টেনে পড়ে, আর ছোট ছেলে একটি মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেনীতে পড়ে।
রোববার রাত ১০টায় ঐ বাড়ীতে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় পাশা-পাশি লাঘোয়া ৩টি ঘরের একটি উঠানে চলছে কান্না, আরেকটি উঠানে চলছে মেজবান। রোববার দুপুরে মারা যাওয়া আকতার হোসেনের জানাযা রাত সাড়ে ৯টায় সম্পন্ন হওয়ার প্রাক্ষালে সমগ্র বাড়ীতে চলে শোকের মাতম। বন্ধ হয়ে যায় মেজবানের কার্যক্রম। দাফন শেষে পরিবেশন করা হয় পুনরায় মেজবানের খাবার।
আকতারের বন্ধু মুহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, আমরা একসাথে প্রাইমারীতে লেখা পড়া করেছি। সে অত্যন্ত ভাল বন্ধু ছিল। বাড়ীর প্রতিবেশী ও মরহুম রফিক সওদাগরের শ্যালক অধ্যাপক মুহাম্মদ ফারুক বলেন, সম্পর্কে রফিক সওদাগর আর আকতার চাচাত জেঠাত ভাই হন, আর মরহুমা বেদুরা বেগম সম্পর্কে রফিক সওদাগরের চাচী হন। তিনজনই একই বংশের একই ব্লাডের। তিনজনের মৃত্যুতে আত্মীয়স্বজন সহ বাড়ীর মহিলা পুরুষ সকলেই বাকরুদ্ধ। একদিকে মেজবান অন্যদিকে লাশ-বেকায়দাতে পড়েছিলেন আগত মেহমানগণ।
জানাগেছে, বেদুরা বেগমের ঈছালে সাওয়াব উপলক্ষে মেজবান হবে মঙ্গলবার দুপুরে। এ নিয়ে গোটা বাড়ীর মানুষ হিমশিমে পড়েছেন। আয়োজন একটি শেষ করে আরেকটির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। অতিষ্ট গরমে আত্মীয় স্বজনরা ঘুরে ফিরে বারংবার আসা যাওয়ায় সীমাহিন কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। একই বাড়ীতে ৫ দিনের ব্যাবধানে ৩ জনের মৃত্যুতে চলছে শোকের মাতম ও আহজারী। এরপরও মানুষ মানুষের জন্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন