যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশীতে গড়ে ওঠা নীলকুঠি ফ্যামিলি পার্কের দখলে থাকা কয়েক’শ বিঘা কৃষি জমি ফেরত নিতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় ৫ জন নিরীহ গ্রামবাসী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে ঐ এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।
মির্জাপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন, মহিউদ্দিন মাস্টার, মোস্তফা খাঁ, বৃদ্ধ নবিছন বিবি, আবু সাদ, সেকেন্দার আলী, সাফিয়া খাতুনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছর ধরে তাদের বৈধ ফসলি জমি জোরপূর্বক দখল করে ‘নীলকুঠি ফ্যামিলি পার্ক’ গড়ে তোলেন শার্শা উপজেলার উলাশীর যুবলীগ নেতা ও ইউপি মেম্বার তরিকুল ইসলাম মিলন। ওই পার্কে একরকম প্রকাশ্যে চলে অনৈতিক কর্মকান্ড।বিপদগামী হয়ে পড়ে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা।
মেম্বার মিলনের বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল, সরকারি বেতনা নদী দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বোমাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। জমির মালিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার সালিশও হয়েছে। কিন্তু ওই মেম্বার ক্ষমতার জোরে দখলকৃত জমি মূল মালিকদের ফেরত দেননি।
এমনকি জমির মালিকদের সাথে কোন চুক্তিও করেননি তিনি। উপরন্তু জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা। বেশ কয়েকবার উলাশী ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিচার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। জমির মালিকদের অভিযোগ, তাদের জমি ফেরত পেতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, দুই উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দুই থানা পুলিশের ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর বেশ কয়েকবার লিখিত আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি।
অভিযোগে জানা যায়- মিলন মেম্বর তার পার্কে মাদক ব্যবসা, পতিতা ব্যবসা করে আসছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল, সরকারী বেতনা নদী দখল, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, বোমাবাজিসহ একাধিক অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ গতকাল সকালে ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানার ওসিকে অবগত করে শাšিতপূর্ণভাবে ইউপি মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ঝিকরগাছার মির্জাপুর- নীল কুঠি পার্কের ভেতর অবৈধ দখলে থাকা জমি জমির প্রকৃত মালিকরা তাদের জমিতে বেড়া দিতে যান। এ সময় মেম্বার মিলনের বড় ভাই শরিফুল ইসলাম পিপুল, ভাইপো আশিক, সোহেল, আসাদুল, ম্যানেজার শরীফ, বাবলুর রহমান, শামীমসহ ১৫/২০ জন জমির মালিকদের ওপর হামলা ও বোমা হামলা করেন। তারা ওই পার্কে ৫ টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন। বোমার আঘাতে জমির মালিক জসিম উদ্দিন (৩৫), হবিবর রহমান (৫৫) ও চৌকিদার ইসরাফ আলী (৪০) আহত হন।
আহত জসিম ও হবিবর জানান. মেম্বার মিলনের বড় ভাই পিপুল, আশিক, নাককাটি আসাদুল ও সোহেলসহ অনেকজন তাদের বেদম মারপিট করেছেন। এর আগেও সন্ত্রাসীরা মির্জাপুর গ্রামের প্রফেসর কামরুজ্জামান স্বপন, কালু, ফিরোজ, কেয়ামউদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তিকে মারপিট করে। বর্তমানে তাদের ভয়ে মির্জাপুর গ্রামের মানুষ উলাশী বাজারে আসতে পারছে না।
এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর ওয়ার্ডের মেম্বার আয়নাল হক জানান, মিলন মেম্বারের পোষা সন্ত্রাসীরা জমির মালিকদের ওপর বোমা হামলা করেছে। তারা আবার সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিতে নিজেরাই ভাঙচুর করেছে পার্কের কিছু মূর্তি। ঘটনার পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নীলকুঠি ফ্যামিলি পার্কের মালিক দাবিদার মেম্বার তরিকুল ইসলাম মিলন জানান, ‘ঘটনার সময় আমার কোন লোক পার্কে ছিল না। আমার লোকজন বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়নি। বরং পার্কে হামলাকারীরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাচ্চাদের সব খেলনা ভাঙচুর করেছে’। তিনি বলেন, ‘পার্কের ভিতরে একজন জামায়াত নেতার ১২ শতক ও একজন আওয়ামীলীগ নেতার ১৪ শতক জমিতে আম ও মেহগনি গাছ লাগানো রয়েছে। এরা দু জন লিজের টাকা নেন না। অন্য সকলের ১০০% বাৎসরিক লিজের টাকা দেয়া হয়’।
ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ওসি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মিলন মেম্বার অনেকের জমি জোর করে দখল করে রেখেছেন। ঙ্প্রকৃত মালিকরা তাদের জমিতে আসলে উভয়পরে মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিবেশ এখন শাšত’।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক। সাধারণ মানুষ গ্রামে হামলার আশঙ্কা করছে। মিথ্যা মামলার ভয়েও রয়েছে অনেকে। তারা এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন র্কর্তৃপরে হস্তপে কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন