শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ডিআইজি মিজানকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৯, ৭:০০ পিএম

সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালিয়েও ডিআইজি মিজানকে গ্রেফতার করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে হাইকোর্ট পুলিশে হস্তান্তর করে তাকে। গতকাল সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের ডিভিশন বেঞ্চ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। সেই সঙ্গে এ মামলার অপর দুই আসামি ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপন এবং ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে আত্মসমর্পনের নিদেশ দেয়া হয়েছে। গত ২৪ জুন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে এ মামলায় তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত‌না, ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপন এবং ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানকেও আসামি করা হয়। এ মামলার পরপরই পুলিশ থেকে ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুদকও তাকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় হানা দেয়। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই ৩০ জুন হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।

সোমবার তিনি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করেন। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট মমতাজউদ্দিন আহমেদ মেহেদী এবং আমিনুল ইসলাম জামিন চেয়ে বলেন, ডিআইজি মিজান পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। দীর্ঘ কর্ম জীবনে তিনি সুনামের সঙ্গে সরকারি চাকরি করেছেন। পুলিশ বাহিনীতে তার দক্ষতা ও সততার সুনাম রয়েছে। তিনি পরিকল্পিত এক ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেটির নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্ত হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। এমতাবস্থায় জামিন দেয়া হলে তিনি দেশ ছেড়ে পালাবেন না। এ সময় আদালত বলেন, মিজানুর রহমান প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে পুলিশ বিভাগের ইমেজ ধ্বংস করেছেন। যেটা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে কাম্য নয়। আদালত বলেন, তার জামিনের বিষয়ে দুদকের বক্তব্য না শুনে কোনো আদেশ দেবো না। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ডিআইজি মিজানুর রহমান আতত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ। তিনি মামলা থেকে বাঁচার জন্য ঘুষ লেনদেনের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ বিষয়ে দুদক পৃথক অনুসন্ধান চলছে। তিনি বলেন, আসামি অত্যন্ত ধূর্ত এবং মিথ্যাবাদী। তাকে জামিন দেয়া হলে মামলার তদন্ত প্রভাবিত হবে। তদন্ত কর্মকর্তা নির্ভয়ে, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে পারবেন না। দুদক কৌঁসুলির এ বক্তব্যের পর আদালত মিজানকে হাইকোর্টে দায়িত্বরত পুলিশকে ডেকে তাদের হাতে তুলে দেন। একই মামলার অন্য আসামিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন অনেকটা স্পর্শকাতর। গত রোববার সকালে ১৯ নম্বর কোর্টে যখন তার জামিন আবেদন দাখিল করা হয়, তখন আমরা সেখানে ছিলাম। পরে আদালত কাল বা পরশু শুনানি করতে পারেন বলে জানায়। তবে তার জামিনের আগে দুদকের বক্তব্য শুনতে চান বলেও আদালত আমাকে জানানো হয়েছিল। আদালত বলেছেন, ‘ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনের বিষয়ে দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য না শুনে কোনো আদেশ দেব না। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি দুদকের আইনজীবী হিসেবে জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে তার জামিনের আবেদন নাকচ করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এদিকে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘন্টা থানা পুলিশের হেফাজতে রেখে আদালতে ওঠানোর আনুষ্ঠানিকতা ডিআইজি মিজানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না-মর্মে জানিয়েছেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি। গতকাল আদালত মিজানুর রহমানকে পুলিশে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়ে এজলাস থেকে উঠে যান। আদালত প্রশাসন আদেশটি শাহবাগ থানাকে অবহিত করলে পুলিশের রমনা বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান হাইকোর্টে আসেন। এ বিষয়ে ওই আদালতের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক বলেন, আগাম জামিন চাওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ডিআইজি মিজান হাইকোর্টে আতœসমর্পণ করেন। আদালত তার এখতিয়ার বলে তাকে সরাসরি কারাগারে পাঠাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার পুলিশ হেফাজত ডিআইজি মিজানের জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে হাইকোর্টের আদেশের কপি বিচারিক আদালতে গেলে তারা আসামিকে পরবর্তী শুনানির জন্য হাজির হতে বলা হবে।

উল্লেখ্য, নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেন। এর পরপরই মিজান অভিযোগ করেন যে, দুদকের মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তিনি দুদক পরিচালককে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। পরে কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দুদক মিজানুর রহমান ও তার পরিবারের আরো ৩ সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় তিনি জামিন নিতে হাইকোর্টে আসেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন