ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় দুই জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকালে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। এর আগে সকাল ১১টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
ফেনী জজ আদালতের পিপি এডভোকেট হাফেজ আহম্মদ জানান, নুসরাত হত্যা মামলায় রায়হানের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। এ সময় তাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহনের জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।
গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০) কে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। ৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ করা হয়। ২০ জুন একই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফীকে নিজ কক্ষে ডেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে রাফীর পরিবার মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলা তুলে নিতে রাফীর পরিবারকে হুমকি দেয় সিরাজের ক্যাডার বাহিনী। ওই মামলায় সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সিরাজের লালিত বাহিনী। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও পিবিআই। ২১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড হয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ১২ জনই রাফী হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে চঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন