বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পদ ফিরে পেতেই খুন

আজিমপুর মসজিদের খাদেম হত্যাকান্ড

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাজধানীর আজিমপুরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের খাদেম হানিফ শেখকে হত্যার পর একটি ভাঙা কবরে লাশ গুম করার পরিকল্পনা ছিল ঘাতকের। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমন তথ্য দিয়েছে ঘাতক ওই মসজিদের অপর খাদেম সাইফুল ইসলাম (৩৮)।
গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদর দফতরে সংস্থার প্রধান বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার একটি বাসা থেকে খাদেম হত্যার একমাত্র আসামি সাইফুলকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি টিম। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল স্বীকার করেছে যে, মসজিদে অন্যান্য কর্মচারি ও খাদেম উপস্থিতি থাকায় লাম গুম করতে সফল হয়নি। এরপর মসজিদের একটি কক্ষের বারান্দায় হানিফের বস্তাবন্দি লাশ রেখে পালিয়ে যায় সাইফুল। দাড়ি কামিয়ে ছদ্মবেশে চট্টগ্রামে এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছিল।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, নিহত মো. হানিফ শেখ ও সাইফুল ইসলাম দুজনই ওই মসজিদের খাদেম ছিলেন। তবে হানিফ শেখ কাজে ভালো হওয়ায় মসজিদ কমিটির পছন্দ ছিল হানিফকে। সাইফুল ফাঁকিবাজ হওয়ায় কমিটি তার পদাবনতি করে। এতে হানিফের সঙ্গে ক্ষিপ্ত সাইফুলের দ্ব›দ্ব শুরু হয়। মূলত এজন্যই হানিফকে খুন করার পরিকল্পনা করে সাইফুল।

তিনি আরো বলেন, গত ২ জুলাই বেলা দু’টার দিকে সাইফুল ও হানিফ শেখের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর সাইফুল বাইরে চলে যায়। বিকাল চারটার দিকে সাইফুল মসজিদের দোতলায় খাদেমদের কক্ষে যায়। সেখানে হানিফ শেখকে ঘুমাতে দেখে। এ অবস্থায় সাইফুল একটি চাকু দিয়ে হানিফ শেখকে প্রথমে বুকে ও পেটে দুটি আঘাত করে। এরপর হানিফ জেগে যায়।

সে অবস্থায় হানিফের মুখ চেপে ধরে একের পর এক আঘাত করতে থাকে সাইফুল। এক পর্যায়ে হানিফ যান। এসময় মসজিদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাহারউদ্দিন ও অন্য খাদেম ফরিদউদ্দিন কেউই কক্ষে ছিলেন না। হত্যার পর আজিমপুর কবরস্থানের একটি ভাঙা কবরে হানিফের লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেছিল সাইফুল।

তিনি বলেন, হানিফকে খুন করার পর তার মাথা ও পা একসঙ্গে মুড়িয়ে বেঁধে ফেলে সাইফুল। এরপর একটি পলিথিনে ঢুকিয়ে বারন্দায় একটি বাঁশের তৈরি ঝুড়িতে রেখে দেয়। তোষকের কভার ভিজিয়ে মেঝের রক্ত পরিষ্কার করে। হাত-মুখ ধুয়ে নিচতলায় আসরের নামাজ শেষ করে আবারও মসজিদের দোতলায় খাদেমদের কক্ষে গিয়ে নিজের জামা-কাপড় ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দেয়।
রাতে মসজিদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাহারউদ্দিন ও খাদেম ফরিদউদ্দিন আহমেদ কক্ষে এসে সাইফুলের কাছে হানিফ কোথায় জানতে চান। জানে না বলে রাত অনেক হলেও সাইফুল ঘুমাচ্ছিল না। এসময় খাদেম ফরিদউদ্দিনও জেগে ছিলেন। এ কারণে হানিফের লাশ সরাতে পারছিল না সাইফুল। রাত ১১টার দিকে বাহারউদ্দিন ও ফরিদউদ্দিনকে সে জানায় যে, তার বাবা মারা গেছেন। তাকে নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে। এই বলে সে বের হয়ে যায়।

এদিকে লাশ গুম করতে ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে সাইফুল নিজের চেহারা পাল্টাতে পাঞ্জাবি ছেড়ে টি-শার্ট পরা শুরু করে। দাড়ি কামাতে সেলুনে যায়। নরসুন্দর দাড়ি কামানোর কারণ জানতে চাইলে সাইফুল জানায়, তার স্কিনে সমস্যা, তাই সেভ করতে হবে। এই বলে ক্লিন সেভ করে চলে আসে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ২ জুলাই আজিমপুর গোরস্থান সংলগ্ন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের খাদেম মো. হানিফ শেখকে ওই মসজিদের দোতলায় তার নিজের কক্ষে হত্যা করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
MD Lavlu Hasan ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:২৩ এএম says : 0
সঠিকভাবে তদন্ত করা উচিত
Total Reply(0)
Shah Alam Bhuiyan ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:২৫ এএম says : 0
দু:খজনক ও তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত ।
Total Reply(0)
Sharmin Shila ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:২৭ এএম says : 0
প্রকাশ্যে ফাঁসি
Total Reply(0)
তানবীর ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:২৮ এএম says : 0
হাররে পদের লোভ !!!!!!!!!!!!!!!
Total Reply(0)
তফসির আলম ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৩৪ এএম says : 0
একটা মানুষ কিভাবে এতটা নিচে নামতে পারে যে পদের জন্য অপর মানুষকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
Total Reply(0)
ফারজানা ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
এসব ঘটনা শুন মনে হয় কিয়ামত খুব কাছে চলে এসেছে।
Total Reply(0)
নোমান ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন