আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা অসংখ্য-অগণিত বাক্য প্রয়োগ করে থাকি। এরমধ্যে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার কারণে বা কোন কিছু না বুঝে আমরা কতিপয় কুফরি বাক্য প্রয়োগ করি। এসব বাক্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আমাদের জীবনে। আমাদের পূর্বসুরিদের কেউ কেউও এসব বাক্য প্রতিনিয়তই প্রয়োগ করতেন। আমরা যারা মুসলমান তাদের এসব কুফরি বাক্য পরিহার করা অতি আবশ্যক। না হলে পরকালে আমাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষমান।
এক. আমরা অনেক সময় কেউ আমাদের প্রশংসা করলে বা আমাদের নিকট ভবিষ্যত নিয়ে কোন কথা বললে বা কেউ যদি বলেন তোর/আপনার/তোমার ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জল তবে আমরা এক কথায় বলে থাকি ‘তোর/তোমার/আপনার মুখে ফুল চন্দন পড়–ক’। এ বাক্যটি কুফরি বাক্য। কারণ বিধর্মীরা তাদের পূজার্চনায় ফুল ও চন্দন ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ ফুল-চন্দন বিধর্মীদের পুজা করার সামগ্রী।
দুই. আমরা আমাদের উত্তরসূরিদের প্রায়ই বলে থাকি জীবনে কষ্ট করেই বড় হতে হয়। অনেক সময় এভাবে না বলে এক কথায় বলে ফেলি ‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’। এ বাক্যটি একটি কুফরি বাক্য। কারণ কেষ্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের এক দেবির নাম। তাকে পেতে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন কেন কষ্ট করবে? মুসলমান সম্প্রদায় কষ্ট করবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য; কেষ্ট নামের কোন দেবির সন্তুষ্টির জন্য নয়। তাই কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে না বলে বলা উচিত কষ্ট করলে তার ফল মহান আল্লাহ তা’য়ালা নিশ্চয়ই আমাদের দেবেন।
তিন. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সময় বলে থাকি এ কাজটি করলে বা এ কথা শুনলে কি ‘মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল?’ এ বাক্যটি একটি কুফরি বাক্য। মহাভারত হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সংবিধানের মতো হতে পারে! মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে এর কোন মূল্য নেই। মুসলমানদের জীবনাচারণ হতে হবে পবিত্র কোরআনের আলোকে। মুসলমানদের কাছে মহাভারত পবিত্র কোন গ্রন্থ নয়। এখানে শুদ্ধ বা অশুদ্ধের কোন কিছু নেই। তাই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল এ বাক্যটি পরিহার করা আবশ্যক।
চার. কেউ যদি কখনো আমাদের গন্তব্য জেনেও জিজ্ঞেস করেন কোথায় যাচ্ছ বা কোথায় যাবেন। তখন আমরা অবলিলায় বলে থাকি আর বইলেন না ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’। এ কথাটির দ্বারা ইসলামের নামে কট‚ক্তি করা হয়। যা একটি কুফরি বাক্য ও অত্যন্ত গুণাহর কাজ।
পাঁচ. আমাদের সন্তান যখন খুব ভালো কোন কাজ করে বা কোথায়ও নিজের প্রতিভার ঝলক দেখায় তবে আমরা বলে থাকি ‘লহ্মী ছেলে বা লহ্মী মেয়ে’ আমার এ কাজটি করে দেখিয়েছে। এ বাক্য প্রয়োগ করা কুফরি। কারণ হিন্দুদের এক দেবির নাম হলো লহ্মী। আমাদের মুসলমানদের সন্তান কেন লহ্মী হবে? পবিত্র ইসলাম ধর্মে কাউকে লহ্মী বলা সম্পূর্ণ হারাম।
ছয়. আমরা প্রায়ই বলে থাকি ‘সময়মতো ওই জীবন রক্ষাকারী ঔষধ সেবন না করলে আমার পিতা বা মাতা বা স্ত্রী বা সন্তান বা নিকটাত্মীয় মারা যেতো’। এ বাক্যটি কুফরি। কারণ কোন ঔষধ কখনোই জীবন রক্ষকারী হতে পারে না। জন্ম-মৃত্যু একমাত্র মহান আল্লাহর হাতে। আল্লাহ চাইলে যে কারো জীবন রক্ষা করতে পারেন। ঔষধ এক্ষেত্রে হতে পারে উচিলা মাত্র। ঔষধের জীবন রক্ষা করার কোন ক্ষমতা নেই।
সাত. অনেক সময় আমরা কাউকে বড় বুঝাতে বলে থাকি ‘আপনি/তুমি তো এ দুনিয়ার শাহেনশাহ’। শাহেনশাহ শব্দের অর্থ রাজাধিরাজ। অর্থাৎ রাজাদের রাজা। কোন মানুষ এ দুনিয়ায় রাজাধিরাজ বা রাজাদের রাজা হতে পারে না। এ দুনিয়ার রাজাদের রাজা একমাত্র মহান রাব্বুল আল-আমীন। এ বাক্যটিও তাই কুফরি।
আট. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে উন্নত ও সৎ চরিত্রবান মানুষদের দেখে বলি ‘তিনি তো ধোয়া তুলসী পাতা, তার চরিত্রে কোন কলঙ্ক নেই’। এ বাক্যটি একটি কুফরি বাক্য। হিন্দুদের পূজোতে তুলসী পাতা ব্যবহৃত হয়। তুলসী পাতা হিন্দুদের কাছে পবিত্র। আমরা কেন এ তুলসী পাতাকে পবিত্র মনে করবো?
নয়. আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন সমস্যায় পড়লে; কোন ধরণের বিপদের সম্মুখিন হলে আমাদের অনেকেই বলে থাকেন ‘ইয়া রাসূল, ইয়া আলী, ইয়া খাজাবাবা, ইয়া গাঊস-কুতুব-আউলিয়া এ বিপদ থেকে উদ্ধার কর’। এটি শিরিক। ইসলামে সবচেয়ে বড় পাপের কাজ এটি। মুসলমানরা বিপদে একমাত্র সাহায্য চাইবে মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন ছাড়া আর কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শিরিক।
দশ. আমাদের কোন কাজ শুরুতেই যদি ভেস্তে যায় বা কাজটির শুরুতেই যদি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় তবে আমরা বলে থাকি ‘বিসমিল্লায় গলদ’। এটি কুফরি। বিসমিল্লাহ বলে আমাদের সকল কাজ শুরু করা আবশ্যক। প্রকৃত মুসলমানরা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম না বলে কোন কাজে হাত দেন না। বিসমিল্লায় গলদ বলা পবিত্র ‘বিসমিল্লাহ’ শব্দটিকে কটাক্ষ করা।
এগারো. আমরা অনেক সময় বলে থাকি ‘লোকটি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে’। পত্র-পত্রিকায়ও এ বাক্যটি হরহামেশায়ই আমাদের চোখে পড়ে। মৃত্যু আমাদের অবধারিত। মৃত্যুর সময় যখন হবে তখন এক সেকেন্ডও কেউ বেঁচে থাকতে পারবে না। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার কোন সুযোগ কারো নেই। মৃত্যুর আগে মানুষের সরগাদ যখন শুরু হয় তখন মানুষ অনেক ক্ষেত্রে অতিব কষ্টে থাকেন। অথবা কেউ যখন দূর্ঘটনায় পতিত হন তখন মুমুর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকেন। তবে মৃত্যুর নির্ধারিত সময়ের এক সেকেন্ডও বেশি বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া বাক্যটি কুফরি।
বারো. যখন কোন মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটে তখন আমরা বলি ‘মধ্যযুগিয় বর্বরতা’। এটি বলা কুফরি। দুনিয়ার মধ্যযুগ ছিলো আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামের জন্য স্বর্ণযুগ। তাই কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগিয় বর্বরতা বলা মানে ইসলামের স্বর্ণযুগকে অস্বীকার করা। ফলে এটি কুফরি।
তের. অনেক সময় কারো প্রশংসা করতে গিয়ে আমরা বলে থাকি ‘নামাজ না পড়লে কি হবে, তার ঈমান ঠিক আছে’। এটি কুফরি। কারণ নামাজ বেহেস্তের চাবি। ইসলামের পাঁচটি মূলস্তম্ভ হলো-কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। যিনি নামাজ পড়েন না তিনি ইসলাম মানলেন কিভাবে? আর বেনামাজি লোকের ঈমান ঠিক থাকে কিভাবে?
চৌদ্দ. পবিত্র ইসলাম ধর্মে নারীর পর্দা করার হুকুম রয়েছে। পর্দা ছাড়া নারী বেহেস্তে যাবে না। কিন্তু অনেক সময় আমরা বলে থাকি ‘মন ঠিক থাকলে পর্দা লাগে না’। এটি কুফরি এবং ইসলাম ধংসকারী একটি মতবাদ।
এছাড়াও আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরো অনেক কুফরি বাক্য অজ্ঞতাবশত বা না জানার কারণে প্রয়োগ করে থাকি। যা আমাদের ধ্বংসের উপলক্ষ। আসুন আমার ওইসব কুফরি বাক্যগুলো পরিহার করি এবং মহান আল্লাহ’র বিধান সঠিকভাবে প্রতিপালন করি। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর বিধিবিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন সে প্রার্থনা করছি।
(সহযোগিতায় : সাজিয়া আক্তার)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন