বিনোদন ডেস্ক : এ কে এম সামছুদ্দোহা একাধারে একজন আবৃত্তিশিল্পী, গণসঙ্গীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী। প্রচারবিমুখ এই শিল্পী অনেকটা নীরবেই তার শিল্প সাধনা করে চলেছেন। মাঝে মাঝে তার কর্ম দিয়ে বোদ্ধামহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। বহুমুখী প্রতিভাধর এই শিল্পীর একক আবৃত্তি সন্ধ্যা ‘মঙ্গলালোক’ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পীর সাথে তখন কথা হয়।
আবৃত্তির সাথে যুক্ত হলেন কেন?
দেশব্যাপী শুদ্ধ ভাষাকে ছড়িয়ে দিতেই মূলত আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। নিজে উপলব্ধি করেছি, আমাদের বাংলা ভাষা প্রতিনিয়ত বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন। বিষয়টি আমাকে পীড়িত করে। চিন্তা করলাম নিজ থেকে কিছু একটা করা দরকার। এ চিন্তা থেকেই ২০০৪ সালে ‘স্রোত আবৃত্তি সংসদে’র সঙ্গে যুক্ত হই। এখানে এক বছর একনিষ্ঠভাবে আবৃত্তি চর্চা করি। অতঃপর ২০০৫ সালে কয়েকজন তরুণ মিলে ‘সংবৃতা আবৃত্তিচর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করি। গত একযুগ ধরে এ সংগঠনের হয়েই পথ চলছি।
সংস্কৃতির সঙ্গে কিভাবে জড়ালেন?
আমার পরিবার কিছুটা রক্ষণশীল। তারপরও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় স্কুল জীবন থেকেই সংস্কৃতিচর্চা শুরু করি। ওই সময় কচিকাচার মেলা, স্কাউটিং প্রভৃতির মাধ্যমে সাংগঠনিক সংস্কৃতিচর্চার যাত্রা শুরু করি। ১৯৮৫ সালে ‘সময় নাট্যদলে’র সঙ্গে যুক্ত হই। এ নাট্যদলের হয়ে বেশ কিছু পথনাটকে অভিনয় করেছি। তাছাড়া আমি গণসঙ্গীতের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলাম। শ্রদ্ধাভাজন পিন্টু ভট্টাচার্য আমাকে গণসঙ্গীত শেখাতেন। সবমিলিয়ে বলতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে শিল্পসত্তাকে অন্তরে লালন করে চলছি। আজীবন এভাবে শিল্পাঙ্গনের সঙ্গে থাকতে চাই।
মাঝে মাঝে আপনাকে অভিনয় করতে দেখা যায়....
সময় সুযোগ পেলে মাঝে মধ্যে অভিনয় করি। তবে তা নিতান্তই শখের বশে। তবে অভিনয়ের চেয়ে নাটক নির্মাণ ও প্রযোজনা করতেই ভাল লাগে। আমি মনে করি, ভাল নাটক নির্মাণ করতে হলে পর্দার পেছনে থেকে তদারকি করা প্রয়োজন। এই বোধ থেকেই প্রযোজনার সাথে জড়িয়েছি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজি মোশন পিকচার্স’ ও ‘ঘাসফড়িং’-এর নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্বে রয়েছি। এখান থেকে আমরা চলচ্চিত্র ও নিয়মিত নাটক নির্মাণ করি।
সরকারি চাকরি করছেন, পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করছেন- এ দুইয়ের সমন্বয় করছেন কিভাবে?
আমি গৃহ সংস্থান অধিদপ্তরে (জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ) প্রশাসনিক কর্মকর্তার (এস্টেট) দায়িত্ব পালন করছি। চাকরির বাইরে যে সময়টুকু পাই, তা কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করি। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে, তাই চাকরির বাইরের সময়টুকু এ কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেই। আমি মূলত সময়কে কখনোই অবহেলা করি না। যেটুকু সময় পাই তাই কাজে লাগাতে চেষ্টা করি।
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
বর্তমানে আবৃত্তিচর্চা নিয়েই ব্যস্ত। ‘সংবৃতা আবৃত্তিচর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র’ সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবৃত্তির উপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আপনার একক আবৃত্তিসন্ধ্যা মঙ্গলালোক কেমন হলো?
খুব ভাল সাড়া পেয়েছি। আমাদের দেশে যে এখনও আবৃত্তি প্রেমী শ্রোতা রয়েছেন, তা বিপুল শ্রোতার উপস্থিতি দেখে বিস্মিত হয়েছি। মঙ্গলালোক আবৃত্তিপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। অনেকেই আমার আবৃত্তির প্রশংসা করেছেন। সবার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় এভাবে আমি আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন