নিজেদের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রাখার লক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভর্তি হয়েছিলাম চারবছর আগে। এক এক করে ৪টি বছর পার করে দিলাম এবং শেষ করে ফেললাম অনার্স লাইফ। এই চার বছরে ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত শত সুখ-দুঃখের স্মৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ শ্লোগানে র্যাগ ডে ২০১৬-এর আনন্দে মেতে উঠেছিল বন্ধন-১২ নামের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ৪৩তম ব্যাচটি। সাধারণত ¯œাতক পর্যায়ে ক্লাস শেষের দিনে হয়ে থাকে র্যাগ ডে। তবে তারা পরীক্ষা শেষ করে দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনের নাম দেন শিক্ষা সমাপনী উৎসব। র্যাগ নামক কথাটি সারা দেশে শিক্ষার্থীদের অত্যাচার-নিপীড়ন অর্থে ব্যবহৃত হয় বলে তারা উৎসবটির নামকরণ এমন করে। এই উৎসব পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য দেন না। তাই সবার চাঁদা দিয়েই পালন করা হয় এ মহা উৎসবের। এই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ওই সময়ের জন্য হলেও মাতিয়ে তোলে গোটা ক্যাম্পাসকে। অবশ্য উৎসবটি সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং সেই সাথে চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। নানা রঙের আল্পনায় সাজিয়ে তোলে অনুষদ ভবন, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সকল শিক্ষার্থীদের গায়ে থাকে অনুষ্ঠানের শ্লোগান সম্বলিত সাদা টি-শার্ট, প্রত্যেকটি র্টি-শার্টে ক্লাসের সকলের স্বাক্ষর করা থাকে। বের করা হয় বিশাল আয়োজনে ফ্লাস মুব। নাচ-গানের তালে তালে নেচে গেয়ে মুখরিত করে তুলে পুরো ক্যাম্পাসকে। শিক্ষার্থীরা সকাল বেলা কেক কাটার মাধ্যমে দিনব্যাপী র্যাগ ডে শুরু করে। দুই দিন কাটে আনন্দ, রং ছুঁড়া-ছুঁড়ি, বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচ-গান, আড্ডা, ট্রাকে চড়ে গোটা ক্যাম্পাসে আনন্দ র্যালী, দেশীয় ঐহিত্যবাহী খেলাধুলা, ব্রাহ্মপুত্র নদে নৌকা ভ্রমণ, সবাই একসাথে মিলে খাওয়া-দাওয়া করা-কী না করে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অনুষদে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে রাত ১২টার পর থেকে চলে সবার অনুভূতি ব্যক্ত করার মাধ্যমে বন্ধুদের প্রতি নিজেদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সারারাত সবার আবেগ-অনুভূতিতে নিজেদের খুনশুটির মাঝে খারাপ লাগাগুলো ঝেড়ে ফেলে হয় নতুন বন্ধনে নতুনভাবে পথ চলার দৃঢ় প্রত্যয়। আজিজ, হেমা, স্বর্ণা, তিশাদের মত অনেকে আবার নিজেদের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে গিয়ে আবার কাঁদলেনও অঝরে। জীবন, মেহেদী, শরিফ, আর্জু, হাসিব, নাসির, রুমি, নুসি, ইভা, ফেন্সি, সুমি, উর্মিদের আবেগের প্রকাশ পুরো রাতটা হয়ে উঠে যেন এক জীবন্ত স্বপ্নপুরী। সকাল ৮টায় অনুভূতি প্রকাশ শেষে যখন সবাই হলে যাচ্ছিল তখন এক নির্মল বাতাস কেন যেন ছাড়তে চাচ্ছিল না ওদের। সকাল বেলা ব্রাহ্মপুত্রের পাড়ে গিয়ে নদের পাড়ে ¯িœগ্ধ হাওয়ায় খেলা হলো ভেনেটি ব্যাগ দিয়ে বালিশ খেলা আর বৌ-ছি।
অনুভূতির ব্যক্ত করে পল্লবী, কাবেরী, ইউসুফ, সম্পা, সাদিয়া, নুসি, প্রজ্ঞা বলেন, ভীষণ আনন্দ লাগছে ঠিকই কিন্তু তার মাঝেও খানিকটা বেদনা লুকিয়ে আছে, আর সেটা হচ্ছে-ভালবাসার বাকৃবি ক্যাম্পাস এবং বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। তবে যাই হোক না কেন পুরো উৎসবে, মিটিং ট্রাজিডি, ফ্লাস মুব, রং ছোড়া, ট্রাকে চড়া, এক সাথে ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাতভর অনুভূতি প্রকাশ, বৌ-ছি খেলা, স্বর্ণার দৌড়, সম্পা-মুন্নির ড্রাইভ, আর একসাথে রেলপাড়ে চা খাওয়া..চির অমর হয়ে থাকবে স্মৃতির পাতায়।
মো. ইউসুফ আলী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন