আগামীকাল শুক্রবার (১৬ জুলাই) বাংলাদেশের ৫২টি প্রেক্ষাগৃহ দখল করতে যাচ্ছে ভারতের সিনেমা ‘বিবাহ অভিযান’। এটি ভারতের ইন হাউজ প্রযোজিত সিনেমা হলেও এতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া। ফারিয়ার বিপরীতে সিনেমাটিতে আছেন টালিগঞ্জের অঙ্কুশ হাজরা। সাফটা চুক্তির মাধ্যমে সিনেমাটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে এদেশে। তবে সেটা মানতে পারছেন না ঢালিউড চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই। পরিচালক সমিতি এবং শিল্পী সমিতির নেতারা মানতে না পারলেও প্রদর্শক সমিতি থেকে ভারতীয় এই সিমামাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। শুধু স্বাগতই নয়, ভারতীয় এই সিনেমার পক্ষে বাংলাদেশেরই কয়েকজন আলোচিত ব্যক্তি প্রকাশ করেছেন নিজের মতামত। এ নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যে পাল্টা পাল্টি অভিযোগ শুরু হয়েছে।
শিল্পী সতিমির বর্তমান সাধারন সম্পাদক জায়েদ খান ভারতীয় সিনেমা আমদানির বিরুদ্ধে হুশিয়া বাক্য উচ্চারণ করে ইনকিলাবকে বলেন, ‘নীতিমালার বাইরে গিয়ে একের পর এক ভারতীয় সিনেমা আমদানিতে মজেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। কথা ছিল মাঝে মধ্যে ভারতীয় সিনেমা অমদানি করা হবে। সে অনুসারেই নতুন করে সাফটা চুক্তির নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কে মানে কার নীতি! বাংলাদেশের মার্কেট দখলের জন্য একের পর এক ভারতীয় সিনেমা আমদানি করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে আবারও কঠোর আন্দোলনে নামা হবে। এই আন্দোলন আগের থেকেই ভয়াবহ রূপ নেবে। কারণ গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষের জন্যতো আর আমাদের দেশের পুরো ইন্ডাস্ট্রির বিপর্যায় মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এই কুচক্রের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত আছেন তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিছুই করবো আমরা।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে পরিচালক সমিতির সাধারন সম্পাদক বদিউল আলম খোকন বলেছেন, ‘যদি নিয়ম মেনে ভারতীয় সিনেমা আমদানি করা হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আর যদি তার ব্যত্তয় ঘটে তাহলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। শুধু আমদানিই নয়, নিয়মের বাইরে গিয়ে যদি কেউ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের বিন্দু মাত্র অপকৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করেন। ইনশাআল্লাহ তাদেরকেও শক্ত হাতে প্রতিহত করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
তবে ভারতীয় সিনেমা আমদানি প্রসঙ্গে জায়েদ এবং খোকনের সম্পূর্ণ বিপরীত এক বক্তব্য প্রদান করেছেন প্রদর্শক সমিতির নেতা ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। নওশাদ ইনকিলাবকে বলেন, ‘ওপারের সিনেমা আমদানিতে বাঁধা দিলে ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংশ হয়ে যাবে। আর সেই কাজটাই করতে চান এদেশের কয়েকজন নেতা। নেতামি টিকিয়ে রাখতে ইন্ডাস্ট্রিকে রসাতলে ফেলছেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ। এখন বাংলাদেশে কয়টি সিনেমা তৈরী হচ্ছে? বছরে শাকিবের চার পাঁচটি সিনেমা দিয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা কিভাবে বাঁচবেন? শাকিবের সিনেমার বাদে আর যে দু’একটা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে তাদের সিনেমা দর্শক কি ভাবে দেখেছেন? ওই সব সিনেমা থেকে প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা ব্যবসা করতে পারছেন? আর তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে এটা কোনো পার্ট টাইম বিষয় নয় যে, ইচ্ছা হলে খুললাম, আর ইচ্ছা না হলে বন্ধ রাখলাম।’
নওশাদ আরও বলেন, ‘একটি প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে। এই সব মানুষ এবং তাদের পরিবারের কথাতো একবার চিন্তা করা উচিত। মধুমিতা বা এই মানের যে প্রেক্ষাগৃহগুলো আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তারা কি করবে? মালিকের লাভের কথা বাদই দিলাম। দীর্ঘদিন ধরে প্রেক্ষাগৃহ গুলোতে যেসব স্টাফ কর্মরত আছে তাদেরকে কিভাবে বেতন দেবে? এখনকার অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহ মালিকরাই ওই সব কর্মীদের কথা চিন্তা করেই তাদের প্রেক্ষাগৃহগুলো এখনও স্বচল রেখেছেন। নইলে আরও আগেই সিনেমা নামের এই শিল্পীটি চিরতরে বিদায় হতো বাংলাদেশ থেকে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি শুধু ভারতীয় বাংলা সিনেমাই নয়, এই ইন্ডাস্ট্রি পুরো ওপেন করে দেওয়া উচিত। তাহলেই হয়তো সিনেমার সোনালী যুগ ফিরবে। বিনোদনের জন্য দর্শক আগের মতো প্রেক্ষাগৃহমুখিও হবেন। চলচ্চিত্র পরিচালক থেকে শুরু করে সবার মাঝেই একটি প্রতিযোগিতা শুরু হবে। মার্কেটে টিকে থাকতে কে কার চেয়ে ভালো সিনেমা বানাবেন সেটারও প্রতিযোগিতা হবে। আর এই প্রতিযোগিতার কারণেই দর্শক তাদের চাহিদা মতো সিনেমা দেখতে পারবেন। সেই সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষেরই জীবিকার নিশ্চিত হবে।’
‘বিবাহ অভিযান’ মুক্তি পাচ্ছে ৫৩ প্রেক্ষাগৃহে। টালিগঞ্জের প্রভাবশালী প্রযোজনা সংস্থা শ্রী ভেঙ্কাটেশ ফিল্মসের প্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন বিরসা দাসগুপ্ত। সিনেমাটি বাংলাদেশে আমদানি করেছে তিতাস কথাচিত্র। এবং পরিবেশনা করছে প্রাইম প্রোডাকশন। সিনেমাটিতে অঙ্কুশ হাজরা ও নুসরাত ফারিয়া ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা সরকার, রুদ্রনীল ঘোষ, অনির্বান ভট্রাচার্য, সোহিনী সরকার সহ অনেকে।
‘বিবাহ অভিযান’ আমদানি করা হয়েছে সাফটা চুক্তির আওতায়। এই সিনেমার বিপরীতে ভারতে পাঠানো হয়েছে অপূর্ব রানা পরিচালিত এবং পরীমনি অভিনীত ‘ইনোসেন্ট লাভ’। এই সিনেমা বাংলাদেশের দর্শক উপভোগ করেন ২০১৫ সালে।
উল্লেখ্য, গত ঈদের পরে বাংলাদেশের নির্মিত একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সাইফ চন্দনের পরিচালনায় ‘আব্বাস’ নামের ওই সিনেমাতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক নিবর। তার সঙ্গে ছিলেন সোহানা সাবা এবং সূচনা আজাদ। অন্যদিকে ঈদের পর সাফটা চুক্তি মাধ্যমে ভারতের দুইটি সিনেমা মুক্তি পেতে দেখা গেছে। একটি দেব ও রুক্সিনী অভিনীত ‘কিডন্যাপ’। অন্যটি জিত ও কয়েল মল্লিক অভিনীত ‘শেষ থেকে শুরু’। দুইটি সিনেমাই আমদানি করেছে শাপলা মিডিয়া। ‘কিডন্যাপ’-এর বিনিময়ে ভারতে পাঠানো হয়েছে শাপলা মিডিয়ারই ‘প্রেম চোর’ সিনেমাটি। অন্যদিকে ‘শেষ থেকে শুরু’র বিনিময়ে ওপারে পাঠানো হয়েছে ‘শাহেনশাহ’। এই সিনেমাটিও প্রযোজনা করেছেন শাপলা মিডিয়ার কর্নধার সেলিম খানই। শাকিব খান ও নুসরাত ফারিয়া অভিনীত এই সিনেমা এখনও মুক্তি পায়নি বাংলাদেশে। এর মধ্যেই সাফটা চুক্তির মাধ্যমে সিনেমাটি পাঠানো হয়েছে করকাতায়। এ নিয়ে সেলিম খান জানিয়েছেন, আগামী পূজায় দুদেশেই এক সঙ্গে মুক্তি দেওয়া হবে ‘শাহেনশাহ’। সেই চুক্তিতেই ভারতে পাঠানো হয়েছে সিনেমাটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন