দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীদের কমিটিতে মূল্যায়নের নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী ও আ্ওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার। নিজের নয় দলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ মতামত দলের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। সৃজনশীল, সৃষ্টিশীল নেতৃত্বের কদর যুবলীগে, এমন প্রতিশ্রুতিশীল, তেজদীপ্ত কথা ছিল সংগঠনের চেয়ারম্যান মোহাম্ম্দ ওমর ফারুকের। দলের শীর্ষ নেতাদের যথার্থ এ বক্তব্যে প্রেরণা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা খুঁজে অনুপ্রানীত হন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু গ্রহনযোগ্য ও সাংগঠনিক উচ্চ মানের এ বক্তব্যে চ্যালেঞ্জর মুখে পড়েছে হয়ে যাচ্ছে তৃণমুলে কমিটি গঠনের বাস্তবতায়। এতে করে হতাশা গ্রাস করছে ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মন মগজে। সিলেট মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি নেতাকর্মীরা। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে যুবলীগের তৎকালীন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয় ।
এর পর থেকেই নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলছিল। প্রায় এক দশক পর ২০১৪ সালের ৬ জুলাই যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ রাজধানীর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দপ্তরে গিয়ে সিলেট মহানগর যুবলীগের ৬১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির তালিকা জমা দেন। পরে সেখান ৯০ দিনের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের শর্তে কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। তবে ওই কমিটিতে যুবলীগের বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুদীপ দে সহ ‘ত্যাগী’ নেতা-কর্মীরা স্থান পাননি বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া দলের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের বদলে সুবিধাবাদীরা বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ অভিযোগে কমিটি প্রত্যাখ্যান করে নেতা-কর্মীরা ঝাড়ু মিছিল করে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ক্ষুব্ধ কর্মীরা এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিরুদ্ধে স্লোগান সহ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ আল কবিরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ওই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই ৫ বছর বছর পার করে দিয়েছে সংগঠনটি।
মহানগরজুড়ে একক আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে ওই আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করছে না; নেতাকর্মীদের এমন অভিযোগ থাকলেও যুবলীগ থেকে ‘বিতাড়িত হওয়ার ভয়ে’ এ নিয়ে কেউ মুখ খুলেনি। তবে কার্যত অচল হয়ে পড়ে সিলেট মহানগর যুবলীগ সাংগঠনিক বিস্তৃতি। সকল ওয়ার্ডের সম্মেলন করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা ছিল; কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর পরও সেই আহ্বায়ক কমিটিতেই মহানগর যুবলীগের পরিধি থাকে সীমাবদ্ধ । একদিকে সাংগঠনিক গতি মুখ থুবড়ে পড়ে, অপরদিকে নতুন নেতৃত্ব সংকটে পড়ে দলের নেতৃত্ব। এহেন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন যুবলীগের পুরোনো নেতাকর্মীরা। মহানগরীতে যুবলীগের অবস্থান ব্যক্তিকেন্দ্রীক-ফোরামে কোনো আলোচনা না করেই নামকাওয়াস্তে চলতো।
চলমান এমন পরিস্থিতি উত্তরণে এগিয়ে আসে কেন্দ্র। ফলশ্রুতিতে কাল শনিবার (২৭ জুলাই) প্রত্যাশিত সম্মেলন ও কাউন্সিল মহানগর যুবলীগের। সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল নেতৃত্বের কদরের প্রতিশ্রুতি হুমকিতে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের স্বার্থ কেন্দ্রিক কূটচালে। তারা কেন্দ্রের নির্দেশনাকে চাপিয়ে নিজস্ব লোককে পুনরায় যুবলীগের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে মরিয়া। ৯০ দিনের কমিটি গঠনের শত পূরনের ব্যর্থতায় তিরস্কারের পরিবর্তে একান্ত স্থানীয় নেতাদের স্বার্থ নির্ভর প্রেসক্রিপশনে যুবলীগ শাসনে ফিরছেন সেই তারাই ! এতে করে যুবলীগের নেতৃত্ব ও রাজনীতি নিয়ে আস্থা হারাচ্ছে তারুন্য নির্ভর নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা। যুবলীগের রাজনীতির স্বাভাবিক গতি প্রকৃতির উপর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের স্বার্থ কেন্দ্রিক হস্তক্ষেপে নিজেদের রাজনীতিক ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। নেতাদের কূটচালে জিম্মি হয়ে পড়েছেন প্রতিশ্রুতিশীলী অনেক সম্ভাবনাময়ী নেতৃত্ব। পদ প্রত্যাশার লড়াইয়ে কাউন্সিলে স্বাধীনভাবে অংশ গ্রহনের পূর্বেই ঝড়ে যেতে হচ্ছে অনেককে। তাদের পদ-পদবী নির্ভর হয়ে উঠেছে স্থানীয় নেতাদের মর্জির উপর। ড্রয়িং রূমের কূটচালে অসহায় হয়ে পড়েছে রাজপথের অগ্রিœ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতাকর্মীদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন