বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

সত্যালোকের সন্ধানে ইসলামে আত্মিক ইবাদতের গুরুত্ব

প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্্শী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাধারণ মুসলমানদেরকে সকল প্রকার মুসিবত, বিরুদ্ধবাদীতা এবং বিপদের সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করার হেদায়েত বার বার করা হয়েছে। তাঁর পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদেরও এমতাবস্থায় এই ধরনের শিক্ষা প্রদান করা হয়েছিল। তাছাড়া বিশেষ মর্যাদাবান রাসূলদের জবান হতেও কার্যত : এই শিক্ষার ঘোষণাই জারি করা হয়েছে। হযরত নূহ (আ.) যখন নিজে নিজে বছরে পর বছর কাফেরদের আক্রমণের শিকার হতে থাকেন, তখন তিনি দৃঢ় চিত্ততার সাথে স্বীয় দুশমনদের সামনে এই ঘোষণা জারি করেন, যা আল-কোরআনে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে :
“তাদেরকে নূহের (আ.) অবস্থা বলে দাও, যখন সে স্বীয় কাওমকে লক্ষ্য করে বলেছিল, হে আমার কাওমের লোক সকল! যদি আমার অবস্থান, আল্লাহর নিদর্শনাবলীসহ আমার নসিহত প্রদান, তোমাদের কাছে বোকা মনে হয়, তাহলে জেনে রেখ, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি, সুতরাং তোমরা নিজেদের প্রচেষ্টাকে, নিজেদের সঙ্গী-সাথীদেরকে খুব মজবুত করে নাও, তারপরও যেন তোমাদের নিকট নিজেদের তদবির ও চেষ্টার কথা প্রচ্ছন্ন না থাকে; তারপর একে আমার ওপর পুরা কর এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না।” (সূরা ইউনুস : রুকু-৮) চিন্তা করুন, হযরত নূহ (আ.) দুশমনদের সকল প্রকার ধোকা, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধের মোকাবেলায় অত্যন্ত দৃঢ়তা, একনিষ্ঠতা ও নিঃশঙ্কচিত্তে আল্লাহর ওপর ভরসা ও বিশ্বাসের কথা পয়গাম্বর সুলভ সাহসিকতার সাথে ব্যক্ত করেছেন। অনুরূপভাবে হযরত হুদ (আ.)-কে যখন তাঁর বংশের লোকেরা নিজেদের দেবতাদের ভয় ও ভীতি প্রদর্শন করে, তখন তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, “আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাক যে, তোমরা যে সকল বস্তুকে আল্লাহর সাথে শরিক করছ, আমি সেগুলোর প্রতি, বীতশ্রদ্ধ ও বেজার, তারপর তোমরা সকলে মিলিতভাবে ষড়যন্ত্র পাকাতে থাক, তারপর আমাকে মোটেও অবকাশ দিয়ো না, আমি অবশ্যই আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি।” (সূরা হুদ : রুকু-৫)
হযরত শোয়াইব (আ.) স্বীয় কাওমকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, আমি তোমাদের বিরোধিতার ভয় করি না; সংস্কার ও হেদায়েতের যে কাজ আমাকে করতে হবে, আমি তা অবশ্যই করে যাব, আমার ভরসা কেবলমাত্র আল্লাহর ওপর। আল-কোরআনে তাই ঘোষণা করা হয়েছে, “আমি আমার সামর্থ্য অনুসারে সংস্কার ও হেদায়েতের কাজ করে যাব, আমার আশ্রয় স্থল একমাত্র আল্লাহ, আমি তাঁরই ওপর ভরসা করেছি এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। (সূরা হুদ : রুকু-৮)
এ সকল পয়গাম্বরদের দৃঢ়তা, ধৈর্য ও ভরসার ঘটনাবলী শোনানোর পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সান্ত¦না প্রদান করা হচ্ছে যে, তোমারও উচিত স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের সময় যাবতীয় সঙ্কটসমূহ পদদলিত করে চলা, কেবলমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে। তাই তো আল-কোরআনে ইরশাদ করা হচ্ছে, “যারা ঈমান আনে না, তাদেরকে বলে দাও, তোমরা নিজেদের স্থানে কাজ কর, আমিও কাজ করছি এবং তোমরা পরিণামের জন্য এন্তেজার কর, আমিও এন্তেজার করছি এবং আল্লাহরই নিকটে রয়েছে নভোম-ল ও ভূম-লের প্রচ্ছন্ন গোপন রহস্য এবং তাঁরই দিকে সকল কাজের ফায়সালা প্রত্যাবর্তিত হয়, সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদত কর এবং তাঁরই ওপর ভরসা কর।” (সূরা হুদ : রুকু-১০)
মুসলমানদের সামনে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার অনুসারীদের নমুনা পেশ করা হচ্ছে যে, তারা কেবলমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করেই প্রিয়-পরিজন সকলকে পরিত্যাগ করে পৃথক হয়ে গিয়েছিল এবং আল্লাহর রাস্তায় কাহারও বন্ধুত্ব ও মহব্বতের পরোয়া করেনি। আল-কোরআনে তাই ঘোষণা করা হয়েছে, “তোমাদের জন্য ইব্রাহীম (আ.) এবং তাঁর সাথীদের অনুকরণের মাঝে উত্তম আদর্শ নিহিত আছে; যখন তারা স্বীয় কাওমের লোকদের বললো, আমরা তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে পূজা করছ, তাদের থেকে বেজার ও বীতশ্রদ্ধ, আমরা তোমাদের অবিশ্বাসী মতবাদকে পরিত্যাগ করেছি এবং আমাদের ও তোমাদের মাঝে দুশমনী ও ঘৃণার ভাব সব সময়ের জন্য সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন না কর। কিন্তু ইব্রাহীম (আ.)-এর স্বীয় পিতার নিকট এই কথা বলা যে, আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব, তবে আল্লাহর কাজে আমার কোন হাত নেই। হে আমার প্রতিপালক! আমরা তোমারই ওপর ভরসা করছি এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি এবং তোমারই নিকট সর্বশেষ প্রত্যাবর্তন।” (সূরা মুমতাহিনা : রুকু-১) হযরত ইয়াকুব (আ.) নিজের প্রিয়তম ছেলেদেরকে মিসর প্রেরণ করছেন এবং মহব্বতের আধিক্য হেতু ভয় করছেন যে, ইউসুফের মত তাদের ওপরও কোন মুসিবত আপতিত না হয়, তাই ছেলেদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন, “তোমরা সবাই একটি প্রবেশ পথে গমন করো না, বরং বিভিন্ন দ্বার দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করবে।” এই স্বাভাবিক তদবির হতে এই ধারণা লাভ করা যায় যে, সকল কাজের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন আল্লাহ। এ সকল তদবির দ্বারা তাঁর হুকুম মোটেই টলতে পারে না। এ জন্য একান্তভাবে তদবিরের ওপর ভরসা করতে নেই; বরং আল্লাহর ইচ্ছার ওপরই সর্বাত্মক ভরসা করা দরকার। আল-কোরআনে ঘটনাটি এভাবে ব্যক্ত হয়েছে, ইয়াকুব বলেন, হে আমার সন্তানেরা “এক দ্বার দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং পৃথক পৃথক দ্বারপথে প্রবেশ করবে এবং আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হতে মোটেও বাঁচাতে পারব না, ফায়সালা একমাত্র তাঁরই, তাঁর ওপরই ভরসা করেছি এবং তাঁর ওপরই ভরসাকারীদের ভরসা করা উচিত।” (সূরা ইউসুফ : রুকু-৮)
হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর এই আমল হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, জাহেরি তদবির একান্ত তাওয়াক্কুলের খেলাফ নয়। হযরত শোয়াইব (আ.)-এর দাওয়াতের উত্তরে যখন তাঁর কাওমের লোকেরা তাঁকে জবরদস্তিমূলক মূর্তি পূজায় বাধ্য করতে প্রচেষ্টা চালায় এবং তাঁকে গৃহ হতে বের করে দিতে উদ্যত হয় তখন তিনি দৃঢ় চিত্ততার সাথে তাদের সামনে যে ঘোষণা দান করেন, আল-কোরআনে তা’ এভাবে ব্যক্ত হয়েছে, “যদি আমি পুনরায় তোমাদের ধর্ম মতে ফিরে আসি, যা থেকে আল্লাহপাক নাজাত দিয়েছেন, তাহলে আমি অবশ্যই আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে ফেলব; এ কাজ আমার দ্বারা মোটেই সম্ভব নয় যে, আমি পুনরায় ভ্রান্তমতে প্রত্যাবর্তন করি। কিন্তু সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় নির্বাহ হয়, কেননা আল্লাহপাক স্বীয় জ্ঞানবত্তা দ্বারা সব কিছু পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। আমি আল্লাহর ওপরই ভরসা করেছি; আমার প্রতিপালকই আমার মাঝে এবং আমার কাওমের মাঝে বিরোধের সত্য ফায়সালা করবেন এবং আল্লাহপাকই যথার্থ ফায়সালাকারী, কার্য নিয়ন্ত্রক।” (সূরা আরাফ : রুকু-১১)
হযরত মূসা (আ.) ফেরাউনের অগণিত রাজকীয় সেনাবাহিনী ও শক্তির সামনে বনী ইসরাঈলকে একান্তভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা করার তালীম দিয়ে ছিলেন। আল-কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, “হে আমার বংশের লোকেরা! যদি তোমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনে থাক, তাহলে একমাত্র তাঁরই ওপর ভরসা কর, যদি তোমরা অনুগত হয়ে থাক।” (সূরা ইউনুস : রুকু-৯) তবে তার কাওমের লোকেরা সর্বাত্মক ঈমানী সাহসিকতার সাথে উত্তর দিল, “আমরা কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করেছি; হে আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে জালিম কাওমের জন্য পরীক্ষার স্থল বানাবেন না।” (সূরা ইউনুস : রুকু-৯) তারপর আল্লাহপাক বনী ইসরাঈলের প্রতিটি তদবীরকে যেভাবে কামিয়াব করেছেন এবং যেভাবে তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ ও অনুকম্পার দ্বারা পুরষ্কৃত করেছেন এ সম্পর্কে সকলেই অবগত আছে। এসব কিছুই তাদের সেই তাওয়াক্কুলের দরুণই পরিসাধিত হয়েছিল। সুতরাং মহান আল্লাহপাক এভাবে স্বীয় বিধানকে কায়েম রেখেছেন, “যে আল্লাহর  উপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহপাকই যথেষ্ট।” (সূরা তালাক :  রুকু-১) এই আয়াতে পাক পারিবারিক ও সামাজিক মুশকিলাতের অবস্থার স্মরণিকা। যদি মিয়া-বিবির মাঝে কোনক্রমেই বনি-বনা না হয় এবং তাদের উভয়ের মাঝে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ (তালাক) ঘটে যায়, তাহলে বিবিকে এর জন্য ভয় করা উচিত নয়, যে, উপায়-উপকরণ কি হবে, সে কিভাবে জীবন ধারণ করবে? কেননা, “যারা ভরসাকারী তাদের যাবতীয় উপকরণ আল্লাহপাকই প্রস্তুত করে দেন।” (কানজুল উম্মাল : ২খ : ২৪ পৃ:)
তাওয়াক্কুল সংক্রান্ত যে সকল আয়াত-আল-কুরআনে রয়েছে, সেগুলোর সব কটিই আপনাদের সামনে আছে। এর প্রতিটি আয়াতের ওপর নজর করুন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, এর অর্থ মাত্র একটিই তাহলো বিপদের ঘনঘটা ও দুরবস্থার যে চিত্রই আমাদেরকে বিব্রত করুক না কেন, কোন অবস্থাতেই দৃঢ়চিত্ততা ও প্রবল ভরসার রজ্জুকে পরিহার করা সঙ্গত নয়। এমনকি একান্ত আত্মনির্ভরতার প্রাক্কালে আল্লাহপাকই সুষ্ঠু ও সকল পরিণামের ব্যবস্থা করবেন, এই বিশ্বাস অন্তরে অবশ্যই পয়দা হবে। তাওয়াক্কুল পূর্ণ এই বিশ্বাস আমাদের সকল বিপদ ও শঙ্কা অপসারণের উপায় হিসেবে প্রতিফলিত হবে।
হাদীস শরীফে আছে, একজন বেদুঈন উটের ওপর আরোহণ করে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি এই উইটি ছেড়ে দিয়ে অথবা বেঁধে রেখে আল্লাহর ওপর ভরসা করব? তিনি উত্তর করলেন, “আল্লাহর ওপর ভরসা কর।” (তিরমিজী, বায়হাকী : শোয়াবুল ঈমান) মাওলানা রুমী এ ঘটনাকে কাব্যে এভাবে ব্যক্ত করেছেন, “তাওয়াক্কুলের বদৌলতেই মানুষ ক্ষুরধারকে অপেক্ষা করে থাকে।” উপরের বর্ণনাটি সনদ সূত্রে যদিও শক্তিশালী নয়, তবুও হাকীকতের দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, এখানে কোরআনুল কারীমের নির্দেশই প্রতিফলিত হয়েছে। কোন কোন লোক অন্ধকার যুগের তাবীজ, তুমার, শরীয়ত গর্হিত ঝার-ফুঁক, টোটকা, মন্ত্র ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস রাখে এবং মনে করে যে, বস্তুনির্ভর কার্য কারণ ও প্রচেষ্টাকে পরিহার করে এই সকল বস্তুর দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করার নাম তাওয়াক্কুল। অন্ধকার যুগের কল্পনা পূজারি লোকেরাও এমনতর, বিশ্বাস পোষণ করত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের এই খেয়ালকে বাতিল বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, “আল্লাহপাক অঙ্গীকার করেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্য হতে সত্তর হাজার লোক হিসাব-কিতাব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরা হবে ওই শ্রেণী যারা অন্ধকার যুগের তাবীজ-তুমার ব্যবহার করে না এবং যারা বদফাল গ্রহণ করে না, যারা দাগ লাগায় না, বরং স্বীয় প্রতিপালকের ওপর ভরসা ও বিশ্বাস রাখে। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) অপর হাদীসে আছে, “যে ব্যক্তি শরীয়ত সমর্থিত নয় এমন তাবীজ-তুমার ব্যবহার করে, সে তাওয়াক্কুল হতে বঞ্চিত।” (তিরমিজী)।
এই হাদীসের দ্বারা একান্তই তদবীর গ্রহণকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। বরং জাহেলি যুগের ভ্রান্ত ধারণার মুলোৎপাটন করা হয়েছে। অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, “যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথার্থভাবে তাওয়াক্কুল কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে সেভাবেই রুজি দান করবেন, যেভাবে পক্ষীকুলকে রুজি দান করেন। সেগুলো অভুক্ত অবস্থায় সকালে বের হয় এবং সন্ধ্যায় পূর্ণ উদরে প্রত্যাবর্তন করে। (তিরমিজী) এই হাদীসের উদ্দেশ্য ও আমল এবং তদবীর পরিত্যাগ করা নয়। কেননা পক্ষীকুল বাসায় বসে বসে খাবার পায় না, এদেরও বিভিন্ন স্থানে গমন করা ও তালাশ করার প্রয়োজন পড়ে। মোটকথা, এ সমকল বর্ণনার মাকসুদ হচ্ছে এই যে, যারা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ও বিশ্বাস হতে বঞ্চিত তারা রুজির জন্য পেরেশান হাল ও অধৈর্য অন্তর বিশিষ্ট হয়। বরং তা হাসিল করার জন্য ভালো-মন্দ উভয়-বিধ অবস্থাই গ্রহণ করে। কিন্তু কেউ যদি এই নির্দেশের ওপর সার্বিকভাবে বিশ্বাস করে যে,“জমিনে বিচরণশীল প্রতিটি বস্তুর রিজিকই আল্লাহর কাছে গচ্ছিত আছে।” (সূরা হুদ : রুকু-১) তাহলে এর জন্য চুরি-ডাকাতি, হত্যা, বেঈমানী, খেয়ানত ইত্যাদি করার প্রয়োজন হয় না। এমনকি তাদের মনের সংকীর্ণতা ও নিরাশ হওয়ারও দরকার পড়ে না। বরং তারা যদি সঠিক পন্থায় চেষ্টা-তদবীর করত, তাহলে অবশ্যই রুজি লাভ করত। উপরোক্ত হাদীসের মর্ম ঠিক তাই। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, শরীয়ত সমর্থিত বাক্যাবলী, আয়াতে কারীমা ইত্যাদির দ্বারা তাবীজ-তুমার ব্যবহারের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা যায়। এতে কোনই দোষ নেই। মহান আল্লাহপাক আল-কুরআনে আরোও ঘোষণা করেছেন, “এবং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহপাক অবশ্যই তার জন্য রাস্তা খুলে দেন, এবং তাকে এমন স্থান হতে রিজিক দান করেন যা কল্পনারও অতীত, আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাহলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট; অবশ্যই আল্লাহপাক স্বীয় নির্দেশকে পৌঁছে দেন, এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুর জন্যই পরিমাণ নির্ধরণ করে রেখেছেন।” (সূরা তালাক : রুকু-১)
উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, তাওয়াক্কুল মূলত : আন্তরিক বিশ্বাসের নাম। এরই নিকটবর্তী ধারণা আজকাল প্রায়শঃ দেখা যায়। নৈতিকতার দিক হতে আত্মবিশ্বাস শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। বলা হয় যে, সফলকাম ব্যক্তি তিনিই হতে পারে, যার মাঝে এই গুণাবলী পাওয়া যায়। কিন্তু এই “আত্মবিশ্বাস” দ্বারা প্রলুদ্ধ ব্যক্তিরা অহমিকা, অহংকার, মানসিক প্রতারণার সীমাহীন অতল তলেও যে নিমজ্জিত তা বুঝতে পারে না। এ জন্য ইসলাম আমিত্বের আত্মবিশ্বাসের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের উপমা পেশ করেছে। যেখানে এ সকল নৈতিকতাবিরোধী উপাদানের সমারোহ নেই।
 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন