স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশা, পরীক্ষায় অকৃতকায এবং কাঙ্খিত গ্রেড না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে। গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩ জন ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। অপ্রত্যাশিত ফলাফলের কারণে পিএসসি, জেএসসি থেকে শুরু করে এসএসসি, এইচএসসির শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এভাবে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায়, অনলাইন মিডিয়ায় আত্মহত্যার খবর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। পরীক্ষায় ফেল করে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়-বিভিন্ন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া বা আশানুরূপ ফল তথা এ প্লাস না পাওয়ার কারণে বছরে ১০ থেকে ১৫ জন শিশু আত্মহত্যা করে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পাশাপাশি কাঙ্খিত গ্রেড না পাওয়ার কারণে ফলাফল প্রকাশের আধা ঘণ্টা পর থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এবছরও অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ফেল করার অপমানে খারাপ পথ বেছে নিয়েছেন। কেউ গলায় ফাঁস নিয়ে, কেউ ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে, কেউ বিষ পান করে, কেউ বা ছুরি ব্যবহার করে, কেউ আবার ট্রেন কিংবা বাসের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এটা যে সঠিক কোনো পথ নয়, সেটা বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের। মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড ডালবার্গ বলেছেন-‘যখন কেউ উপলব্ধি করে যে, তার জীবনের কোনো মূল্য নেই, তখন সে আত্মহত্যা করে’।
আত্মহত্যা ঘৃণিত একটি অপরাধ এবং ইসলামের দৃষ্টিতে মহাপাপ। পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা আত্মহত্যাকে হারাম করেছেন এবং আত্মহত্যাকারীর ভয়াবহ পরিণামের কথা জানিয়েছেন। আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন-‘আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু’। (সুরা নিসা : ২৯)। ‘তারপরও যে সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ (আত্মহত্যা) করবে, তাকে খুব শিগগিরই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ সাধ্য’। (সূরা নিসা : ৩০)। আল্লাহপাক আরও এরশাদ করেন-‘তোমরা তোমাদের নিজের জীবনকে ধ্বংসের (আত্মহত্যা) সম্মুখীন করো না’। (সুরা বাকারা : ১৯৫)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সা.) বলেছেন-‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামেসে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আরসেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে’। (বুখারি : ২৪৩১)। হজরত জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন-‘একজন ব্যক্তি জখম হলে, সে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ বললেন আমার বান্দাহ আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম। (বুখারি : ১৮২৪)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন