শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ক্ষতির মুখে কওমি মাদরাসা

কোরবানির চামড়ার দর বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম


দেশের কওমি মাদরাসাগুলোয় সুবিধাবঞ্ছিত লাখ লাখ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করেন। এরা প্রায় সকলেই গরিব ঘরের সন্তান এবং অনেকেরই বাবা-মা নেই। এই অসহায় এতিদের কেউ অন্যের সহায়তায়, কেউ লিল্লাহ বোর্ডিং-এ থেকে লেখাপড়া করেন। বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষার্থীর লেখাপড়া থাকা-খাওয়া তথা ভরণপোষণের অর্থ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পেয়ে থাকেন অন্যের দান থেকে। বিশেষ করে ঈদুল ফিরতের সময় জাকাত এবং ঈদুল আজহার কোরবানির চামড়া মাদরাসায় দান করা টাকা থেকে বছরের অর্ধেক সময় এদের ভরণপোষণ হয়। কিন্তু এবার সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম বিপর্যয়ে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়লো কওমি মাদরাসাগুলো। কওমি মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্ররা বলছেন, কওমি মাদরাসার অধিকাংশ ছাত্র গরিব। মাদরাসায় লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের বিশাল ব্যয় রয়েছে। এই বোর্ডিংয়ের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায়, এতিম শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে খাবার পেয়ে থাকেন। বছরের ৩ থেকে ৪ মাসের ব্যয় অর্থ সাধারণত কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির খাত থেকে আসতো। কিন্তু এবার চামড়ার দাম বাজারে কৃত্রিম বিপর্যয় হওয়ায় সেটা সম্ভব হবে না।

ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটবে। তবে জামিয়া ইসলামিয়া শায়েখ জাকারিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল রব ইউসূফী মনে করেন মাদরাসা পড়–য়া এতিম-গরিব শিক্ষার্থীদের রিজিক আল্লাহর হাতে। তবে যারা সিন্ডিকেট করে চামড়া দর পতন ঘটিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটেছেন তাদের বিচার হওয়া উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরই ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন কওমি মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থীরা। এই চামড়া বিক্রির টাকা কওমি মাদরাসাগুলোর অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখে। এ টাকা গরিব ছাত্রদের পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার পেছনে খরচ করা হয়। ঢাকার লালবাগের একটি কওমি মাদরাসার এক শিক্ষক ইনকিলাবকে বলেন, কোরবানির চামড়া থেকে আসা টাকা দরিদ্র, অসহায়, এতিম শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া ও লেখাপড়ায় ব্যয় করা হতো। কিন্তু এবার সেটায় উপর তলার (ট্যানারি মালিক) চোখ পড়ায় সেটা হয়নি। আল্লাহ হয়তো চালিয়ে নেবেন তবে মাদরাসার এতিম শিশুদের কষ্ট হবে। রামপুরা জামিয়া কারিমিয়া আরাবিয়া মাদরাসার শিক্ষা সচিব মুফতি হেমায়েত বলেন, চামড়ার দাম কম হওয়ায় কওমি মাদরাসার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

ঢাকার একটি মাদরাসার শিক্ষক জানান, ২০১৮ সালে ঈদুল আজহায় তার মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ঘুরে ঘুরে প্রায় দেড় হাজার গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছিল। প্রত্যেকটি চামড়া ১ হাজার টাকা ধরে বিক্রি করা হয়। ৫ বছর আগে যদিও একটি চামড়া ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হতো। এবার (২০১৯) ঈদে এক হাজার ওপরে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু, চামড়া বিক্রির জন্য কোনও গ্রাহক না পেয়ে মাদরাসার খরচে গাড়ি ভাড়া করে একজন আড়তদারকে দেয়া হয়েছে। তারা এখনো কোনও দাম দেয়নি। পরে বাজার দর অনুযায়ী টাকা দেয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন মাত্র।

রামপুরা নতুনবাগ জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদরাসার মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান বলেন, চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের খরচের একটি অংশের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এটা হয়তো খুব বেশি বড় নয়। কিন্তু তারপরও চামড়া বিক্রির খাত থেকে এই টাকা আসতো। এবার সেটা হচ্ছে না। এবারের ঈদে আমাদের শিক্ষার্থীরা ৪শ’ গরু চামড়া সংগ্রহ করে। একজন পরিচিত ব্যক্তির কাছে তা ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি। অথচ গত বছর ঈদুল আজহায় ২৮০টি গরুর চামড়া তুলে প্রতিটি ৯শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এবার চামড়ার দাম নেই।

কওমি মাদরাসা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে মক্তব, ফোরকানিয়া ও কোরানিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাদরাসার সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩১টি। এই মাদরাসাগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। জাকাত, কোরবানির পশুর চামড়া ও চামড়া বিক্রির টাকা কওমি মাদরাসার আয়ের অন্যতম উৎস। শুধু এই ঈদুল আজহার সময়েই কোরবানির পশুর চামড়া থেকে কমপক্ষে চার মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা।
কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সরকার চামড়া মার্কেটটাকে কিছু লোকের হাতে তুলে দিয়েছে। সরকার কাঁচা চামড়া রফতানি করতে না দেয়ার ফলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রসেসিং এবং ট্যানারিতে পাঠানোটা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তখন মনোপলি এক কন্ট্রোল ট্যানারি মালিকদের হাতে চলে যায়। এ সুযোগটাই ট্যানারি মালিকরা নিয়ে সহজেই সিন্ডিকেট করে পানির দরে চামড়া কেনার সুযোগ নিচ্ছে। সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দিলে ট্যানারি মালিকরা প্রতিযোগিতায় আসতে বাধ্য হবে। তখন কাঁচা চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে।

রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার জামিয়া ইসলামিয়া শায়েখ জাকারিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল রব ইউসূফী বলেন, মহান আল্লাহ মানুষের রিজিক দাতা। তিনি অবশ্যই মাদরাসা পড়–য়া এতিম ছাত্রদের খাবারের যোগান দেবেন। কওমি মাদরাসাগুলো সুবিধাবঞ্ছিত গরিব এবং এতিম ছাত্রদের জ্ঞানের আলো দেন এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। যা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা কোরবানির চামড়া থেকে টাকা পেয়ে কিছু সুবিধা পেত। সেটা এবার চক্রান্ত করে অন্যেরা খেয়ে ফেলেছে। যারা সিন্ডিকেট করে পরিকল্পিতভাবে চামড়ার দামে বিপর্যয় ঘটিয়ে গরিব এতিমদের হক খেয়েছে তারা চরম অন্যায় করেছে। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া উচিত। এতিমদের হক খেয়ে কয়েকজন মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। সরকারের দায় রয়েছে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে আল্লাহ অবশ্যই কওমি মাদরাসায় পড়–য়া এতিম গরিব ছাত্রদের খাবার যোগান দেবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
palash ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৩:১৭ এএম says : 0
This is .......................ar development and gift ...................
Total Reply(0)
ফারুক হোসাইন ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৩৪ এএম says : 0
গরিব মিসকিন এর হক এর প্রতি তামাশা ছাড়া আর কিছুই না, এজন্য চামড়াজাত দ্রব্য বা চামড়াজাত শিল্পের সহিত যারাই জড়িত অবশ্যই অবশ্যই তাদেরকে কড়ায়-গন্ডায় এর হিসাব একদিন দিতে হবে। আর এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মুসলিমদের এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ হতে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি। সেইসাথে গরিবের হক প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
রেহাল ইসলাম ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৩৫ এএম says : 0
এই চামড়ার টাকা পায় বেশির ভাগ এতিমখানার বাচ্চারা বা গরীব মানুষেরা। সব জিনিসপত্র যখন উর্ধমুখী তখন চামড়ার দাম প্রতি বছর নিম্নমুখী করা হচছে কি এতিম বা গরিবকে ঠকানোর জন্য?
Total Reply(0)
BulBul ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৩৫ এএম says : 0
সারা বছর কিন্তু চামড়ার দাম এমন থাকে না। কুরবানীর চামড়ার দাম নির্ধারক সিন্ডিকেটের পেছনে গভীরভাবে ইসলাম বিরোধী কোনো চক্র সক্রিয় থাকতে পারে বলে আমার সন্দেহ
Total Reply(0)
Jahid Hasan ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৩৭ এএম says : 0
এদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো কুরবানীর চামড়া সরাসরি এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দান করে থাকে- যেখানে মূলত ইসলামী শিক্ষা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো সারা বছরের ব্যয়ের একটা বড় অংশ আসে এই চামড়া বিক্রির অর্থ থেকে। এ চামড়ার সঠিক দাম পাওয়া গেলে মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো আরো ভালভাবে চলতে পারতো এবং নিজেদের শিক্ষা ও পরিধি বিস্তার ঘটাতে পারতো। আমার মনে হয়, কুরবানীর চামড়ার দাম এভাবে ফেল দেয়ার পেছনে মাদ্রাসা তথা ইসলামী শিক্ষাকে দুর্বল রাখার একটি ষড়যন্ত্র গভীর থেকে কাজ করে।
Total Reply(0)
Parvej ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৩৭ এএম says : 0
যারা সিন্ডিকেট করে পরিকল্পিতভাবে চামড়ার দামে বিপর্যয় ঘটিয়ে গরিব এতিমদের হক খেয়েছে তারা চরম অন্যায় করেছে। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া উচিত।
Total Reply(0)
Md Anwar ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৪৭ এএম says : 0
যাদের কারনে গরীবের হক, মাদ্রাসার সারা বছরের খরচের যোগান নষ্ট করছে,আল্লাহ তাদের উচিৎ বিচার করুক,দুনিয়া, আখেরাতে
Total Reply(0)
Mohammad Ashraf Uddin ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৪৭ এএম says : 0
খুবই দুঃখজনক। চামড়া সিন্ডিকেটের উপর আল্লাহর লানত পড়ুক।
Total Reply(0)
Moin Ahmed Ripon ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৪৮ এএম says : 0
এটা যদি এতিমখানা, মাদ্রাসায় না যেয়ে অন্য যেকোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেত তবে হয়তো এমন করুন পরিস্থিতি হত না। ধিক্কার জানাই।
Total Reply(0)
Rokshana Jabbar ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৪৯ এএম says : 0
কোরবানী দেয়ার তৌফিক যখন আল্লাহ্ দিয়েছেন চামড়ার মূল্য অনুযায়ী অর্থ এতিমদের দেয়ার তৌফিক ও মহান আল্লাহ দিয়েছেন। আসুন একটি বার সকলে এতিমদের নগদ অর্থ সাহায্য করি
Total Reply(1)
Yourchoice51 ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ৯:০২ এএম says : 4
Very good suggestion.
Amir ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১০:০৬ এএম says : 0
যা করার এখনই করতে হবে,অর্থনীতির বিরুদ্ধে ভয়াবহ এই ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া যায় না!দ্রুত তদন্ত হতে হবে!
Total Reply(0)
হাঃ মাওঃ শামীম হাসান শিহাব ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১০:৩১ এএম says : 0
বাংলা দেশে কাওমী মাদরাসার সংখ্যার যে হিসাব দেওয়া হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি দয়া করে জাচাইয়ের মাধ্যমে সঠিক সংখ্যা নিরনয় করার জন্য অনূরোধ জানাই।
Total Reply(0)
محمد.ميزان الر حمن ১৫ জুন, ২০২০, ৭:৩৭ এএম says : 0
এ চামড়ার টাকার উচিলায় দিয়ে কত গরিব অসহায় ছাত্রদের খাবার জোটে।যারা চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে কওমি মাদ্রাসার গরিব শিক্ষার্থিদের এত বড় খতি করল।তাদের উপর আল্লাহ তাআলার লা,আনত।আল্লাহ তায়ালা যেন দুনিয়াতেই তাদেরকে ইসলাম নিয়ে ষড়যন্ত্র করার উচিৎ শাস্তি দিয়ে দেন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন