শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

পোস্তার রাস্তায় পচা চামড়ার স্তূপ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৯, ৯:২৯ পিএম

দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়ত পুরান ঢাকার পোস্তার রাস্তায় রাস্তায় পড়ে আছে পচা চামড়া। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ব্যাপক দরপতন ও বৈরী আবহাওয়ায় পচে যাওয়া এ চামড়ার স্তূপ বুধবার বিকালে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ও ট্রাকে করে সরানো হয়।

দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বড় খাত চামড়াশিল্প। এ শিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামালের জোগান আসে কোরবানির ঈদে। এবার ঈদের পর চামড়ার ব্যাপক দরপতনে পাইকাররা চামড়া না কেনায় গত বছরের দ্বিগুণ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি ও কখনও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতে নগরবাসীর মনে শান্তি এলেও মাথায় হাত পড়েছে দেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের। ঈদের তৃতীয় দিন পোস্তায় তেমন কোনো কাঁচা চামড়া না আসায় ব্যস্ততা না থাকলেও হতাশা ছিল ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে।

বুধবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চামড়া আসেনি। ছিল না কাঁচা চামড়া বেচাকেনা, বিক্রেতা, আড়তদার ও কর্মচারীদের কর্মচাঞ্চল্য। কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে এলে শত চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারেননি। কোরবানির ঈদের পর অন্য বছর যে কর্মব্যস্ততা দেখা যায় এবছর সে রকম কোনো চিত্র দেখা যায়নি।

ঢাকার আশপাশ থেকে দু’একটি চামড়া এলেও তা দাম না থাকায় ফেলে চলে গেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দাম ও ক্রেতা না থাকায় রাস্তার পাশেই স্তূপ আকারে চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে গরু, ছাগলের চামড়া। পোস্তার রাস্তা, অলি-গলিতে পড়ে থাকা চামড়া পচে কটু গন্ধে দম নেওয়া দায়। তবে সকাল থেকেই সিটি কর্পোরেশনের সুইপাররা পচা চামড়া সরাতে ব্যস্ত ছিল।

সুইপার হরিস বর্মন বলেন, ছোটবেলা থেকেই এ কাজ করে আসছি। প্রতি বছরই আমরা ঈদের পর এখান থেকে বর্জ্য পরিষ্কার করি। কিন্তু এবছর বর্জ্যরে পাশাপাশি আস্ত পচা চামড়াও সরাতে হচ্ছে। যা কোনো দিন আমরা দেখিনি বা করিনি। আজ তো কম, গতকাল রাতে আরও অনেক সরানো হয়েছে।

পোস্তার ব্যবসায়ীরা জানান, এখনও কোনো কোনো আড়তে কাচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ দেওয়ার কাজ চলছে। আড়তে চামড়া লবণজাত অবস্থায় থাকবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এরপর এখান থেকে চামড়া নেবেন ট্যানারি মালিকরা। তবে দরপতনের এ পরিস্থিতির জন্য ট্যানারি ও আড়তদাররা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। একই সঙ্গে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনাসহ সিন্ডিকেটের অভিযোগ। এতে বিপাকে পড়ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেন, চামড়া দেশের সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। গুণগতমানের দিক থেকেও বাংলাদেশের গবাদি পশুর চামড়া উন্নতমানের। আর সে কারণে এক সময় বিদেশি বায়াররা এদেশ থেকে চামড়া কিনতো। অথচ এখন তারা বাংলাদেশবিমুখ। এর কারণ সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। চামড়াশিল্পকে টিকিয়ে রাখা শুধু নয় বিকশিত করতে হলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে পাটশিল্প যেমন ধ্বংস হয়ে গেছে, চামড়াশিল্পও ধ্বংস হয়ে যাবে।

হতাশাগ্রস্ত কণ্ঠে হাজি জয়নাল বলেন, এতোদিন ধরে ব্যবসার সঙ্গে আছি কিন্তু এত বাজে ব্যবসা আর কখনও দেখিনি। ঈদের পর যে পোস্তায় কাচা চামড়া কেনা-বেচা, প্রক্রিয়াজতকরণে শ্রমিকরা থাকতো ব্যস্ত, এবার তারা অতীতের দিনগুলোর মনে করে দিন কাটাতে হচ্ছে। শ্রমিক আনোয়ার বলেন, গত ১০ বছর ধরে এখানে কাজ করে। এবছরের মতো অবস্থা কোনোদিনও দেখিনি। আজ রাস্তায় যে চামড়া পড়ে থাকতে দেখছেন, দাম থাকলে রাস্তায় রাস্তায় থাকতো না। ছেঁড়া-ফাটা সবই তখন বিক্রি হয়ে যেত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন