শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মিয়ানমারের ফর্মূলায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে চায় সরকার ----মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, বাস ভূমি, সম্পদ ফিরিয়ে না দিয়ে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই সরকার তাদেরকে মিয়ানমারে পাঠাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মূল বিষয়গুলোকে সমাধান না করে সরকার ৩ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, তাদের নিরাপত্তা, বাস ভূমি ফিরে পাওয়া, তাদের সম্পদ ফিরে পাওয়ার বিষয়গুলো নিশ্চিত না করেই ফেরানোর কথা বলা হচ্ছে। এটি করা হচ্ছে সম্পূর্ণ মিয়ানমারের ইচ্ছে অনুযায়ি, তাদের দেয়া ফর্মূলাতে। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজী হয়নি। এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকভাবে, স্পষ্টভাবে, সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরার। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে সরকার সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের ফর্মুলার কাছে নতি শিকার করেছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা ও কিছু পত্রিকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে যে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে সেটার সাথে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে যে সমস্ত কথা বলা হয়েছে আমরা এগুলোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এধরণের মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই হামলা মামলার সাথে তারেক রহমানের কোন সম্পর্ক বা সংশ্লিষ্টতা নেই। এই ঘটনার সাথে তার কোন সংযোগ ছিল না।
বিএনপি সরকারের সময় হামলার বিচার শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই অন্যতম শীর্ষ নেতা বলেন, মুফতি হান্নানকে বিএনপি গ্রেফতার করেছিল। সেই হামলার ঘটনায় বিএনপি প্রথম বিচার শুরু করেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলটিকে ব্যবহার করেছে এবং তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল করা হয়েছে। চার্জশিটে প্রথম দুইবার তারেক রহমানের কোন নামই ছিল না। আওয়ামী লীগের সরকার গঠন করার পরই তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। একজন অবসরে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রধান যে আসামী মুফতি হান্নান তাকে দীর্ঘদিন ধরে কাস্টডিতে রেখে, নির্যাতন করে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। সেটা পরবর্তীতে তিনি আবার এফিডেফিট করে বলেছিলেন আগেরটি তার কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু এটি আদালত গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনা নিয়ে বিএনপি সব সময় নিন্দা জানিয়ে আসছে। আজকেও স্থায়ী কমিটির সভায় বলা হয়েছে ওই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নিকৃষ্টতম ঘটনা। কিন্তু এটা নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কোন ধরণের সত্য প্রমাণ ছাড়া রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ত করা সঠিক নয় এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কোন উন্নতি হয়নি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে। খুব বেশি উন্নতি হয়নি। চিকিৎসার পরে যে উন্নতি হওয়ার কথা সেটি হয়নি। এজন্য আমরা বার বার বলছি বেগম জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তার মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় সাজা হওয়ার পর জামিন আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক বিকেল ৫টার সময় শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভার শুরুতে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। তার মৃত্যুতে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হলো তা পূর্ণ হবার নয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুই দিনের কর্মসূচি: ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একই দিন বিকেল ৩টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণ্যাঢ্য র‌্যালি বের করবেন দলটির নেতাকর্মীরা।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন